স্বাধীনতার মাত্র কয়েক দিন পরে, ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে, দিল্লিতে মুসলিম অফিসাররা একটি রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে উৎখাত করার পরিকল্পনা করেছিল । তখন দিল্লির অন্তর্বর্তী সরকার সীমান্তে এবং দেশের অন্যান্য অনেক অংশে ব্যাপক হিন্দু-বিরোধী দাঙ্গা মোকাবেলায় ব্যস্ত ছিল। এরই মাঝে দিল্লি ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশের ঊর্ধ্বতন মুসলিম অফিসাররা অন্তর্বর্তী সরকারের সিনিয়র নেতাদের হত্যা করে লাল কেল্লা দখলের পরিকল্পনা করে । পরিকল্পনা অনুযায়ী লাল কেল্লায় পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলনও অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) তথ্যদাতারা এই পরিকল্পনার কথা তাদের সিনিয়রদের জানিয়েছিলেন। আরএসএস-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তথ্য নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নেন, এবং খোসলা নামে একজন স্বয়ংসেবককে পরিকল্পনা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
খোসলা, অন্যান্য স্বয়ংসেবকদের সাথে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসারের বাংলো থেকে নথি চুরি করার পরিকল্পনা করেছিলেন। নথিগুলো যখন আরএসএস-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়, তখন তারা রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা দেখে হতবাক হয়ে যায়। তারা এটাও বুঝতে পেরেছিল যে আরএসএস এই ষড়যন্ত্র বানচাল করতে পারবে না। তাই, আরএসএস-এর সিনিয়র কর্মীরা ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর রাতে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের সাথে যোগাযোগ করেন। ১০ সেপ্টেম্বরের পরিকল্পিত অভ্যুত্থানের আগে একটি ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছিল। পাহাড়গঞ্জ মসজিদ, সবজি মান্ডি মসজিদ এবং মেহরাউলি মসজিদ থেকে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছিল।
তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি আচার্য কৃপলানি ঘটনাটি সম্পর্কে লিখেছিলেন,’মুসলিমরা অভ্যুত্থানের জন্য বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদের ব্যবস্থা করেছিল। এতে দিল্লির ঊর্ধ্বতন মুসলিম কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন। অভ্যুত্থান দমনের জন্য সরকারকে পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে বাহিনী ডাকতে হয়েছিল।’
অভ্যুত্থানের বিশদ বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে কৃষ্ণানন্দ সাগরের “বিভজনকালিন ভারত কে সাক্ষী” বইয়ে।
চার খণ্ডে প্রকাশিত বইটিতে দেশভাগের ইতিহাসের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। শ্রী সাগর, একজন প্রবীণ স্বয়ংসেবক,তিনি দলীয় মুখপত্রের কাছে বলেছিলেন, ‘যদি এই অভ্যুত্থান সফল হতো, তাহলে আজ দিল্লিতে পাকিস্তানের শাসন থাকত। কিন্তু স্বয়ংসেবক এবং সর্দার প্যাটেলের সময়মত হস্তক্ষেপ এই সঙ্কট এড়াল।’ চার খণ্ডের বইটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা এবং দুই দশকের কঠোর পরিশ্রমের ফল। দেশভাগের প্রত্যক্ষদর্শী ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ এর জন্য সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।
সাগর অর্গানাইজারকে বলেছিলেন,১৯৯৪ সালে ভারতীয় ইতিহাস সংকলন যোজনার সভাপতি, ঠাকুর রাম সিং জি আমাকে ফোন করেছিলেন এবং এই বইটিতে কাজ করতে বলেছিলেন। কিন্তু, আমার অন্যান্য ব্যস্ততার কারণে আমি বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করেছি। তিনি আমাকে ২০২০ সালে আবার ফোন করেছিলেন এবং আমি এইবার ‘না’ বলতে পারিনি । বৃহস্পতিবার ( ২৫ নভেম্বর ২০২১) সন্ধ্যায় নয়ডায় (উত্তরপ্রদেশ) বইটি চালু করেছিলেন সরসঙ্ঘচালক ডক্টর মোহন ভাগবত।’
বিভক্তির সূক্ষ্মভাবে বিস্তারিত মৌখিক ইতিহাস সমর্থনকারী প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত যা সাবধানে ইতিহাসের ডাস্টবিনে বরাদ্দ করা হয়েছিল। ফলাফল ছিল ভারত বিভাজন সম্পর্কে সীমিত তথ্য। বইটিতে বিস্তারিত বলা হয়েছে কিভাবে ব্রিটিশদের দ্বারা দেশভাগের পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের এতে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল।
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, যিনি আগে বলেছিলেন যে ভারত ভাগ হবে শুধুমাত্র তার মৃতদেহের উপর, যদিও সেই গান্ধী কয়েক সপ্তাহ পরে নিজের এই মন্তব্য থেকে সরে এসে বলেছিলেন যে মুসলমানদের আলাদা দেশ চাওয়ার অধিকার রয়েছে। কংগ্রেসের তোষামোদি নীতির ফল ছিল ভারতবর্ষের রক্তক্ষয়ী বিভাজন । আর এতে সমান দোষে দুষ্ট ভারতের অঘোষিত ‘জাতির জনক’ও ।।
★ অর্গানাইজারের ইংরাজি প্রতিবেদনের বঙ্গানুবাদ ।