এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২২ সেপ্টেম্বর : আজ রবিবার কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত উত্তরণ ১৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের ‘বেঙ্গলি বাজার’-এর সামনে একটা সাইনবোর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । ওই সাইনবোর্ডের লেখা আছে ইংরাজি ও উর্দু ভাষায় । নামে ‘বেঙ্গলি বাজার’ হলেও সাইনবোর্ডে বাংলার ছিঁটেফোঁটাও নেই । এই দেখে শুভেন্দু অধিকারী মন্তব্য করেছেন,পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক বাংলার মানুষকে উর্দুভাষী বানানোর চেষ্টা করছেন পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম । শুভেন্দু লিখেছে,’কলকাতার মহানাগরিক জনাব ফিরহাদ হাকিম সাহেব কি নিজের পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক বাংলার অর্ধেক নাগরিকদের উর্দুভাষী বানানোর প্রচেষ্টা কলকাতা পুরসভার মাধ্যমেই শুরু করে দিলেন? নয়তো “বাঙালি বাজার” সাইন বোর্ডে বাংলা ভাষাই ব্রাত্য আর উর্দু জ্বলজ্বল করছে, এটা মনে হয় মেয়র সাহেবের নির্দেশ ছাড়া সম্ভব নয়। বলছি সাইন বোর্ড, ব্যানার, হোর্ডিং গুলোতে বাংলা কে প্রাধান্য দিন ফিরহাদ হাকিম সাহেব, পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী ৯০ শতাংশ মানুষ বাংলাতেই স্বচ্ছন্দবোধ করেন। আপনি বরং আপনার পছন্দের ধর্মীয় সভায়, যেখানে আপনি মানুষের জন্মগ্রহণের সূত্রে ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকেন, সেখানে উর্দু ভাষাকে বেশি প্রাধান্য দিন।’
প্রসঙ্গত,এর আগে গত জুলাই মাসে রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ‘দাওয়াত-এ ইসলাম’ মন্তব্য নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল রাজ্য জুড়ে । একটা ইসলামি সমাবেশে তিনি যোগ দিয়ে বলেছিলেন,’যারা দুর্ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে, যারা ইসলাম নিয়ে জন্মায়নি, তাদেরও দাওয়াত-এ ইসলাম, অর্থাৎ ইসলামের দাওয়াত দিয়ে তাদের মধ্যে ঈমান নিয়ে আসলে এটা আল্লাহতালাকে খুশি করা হবে। ইসলামকে তাদের মধ্যে ছড়াতে হবে । শক্তিশালী মনে হয়, যখন সবাই এখানে টুপি পরে বসে আছে, হাজার হাজার মানুষ বসে আছে, তখন মনে হয় ইসলামের ঐক্য একটা জায়গায় আছে । যেখানে আমাদের কেউ কোনদিন দাবাতে(দমাতে) পারবেনা ।’
সেই সময় “ইনশাল্লাহ” স্লোগান ওঠে ৷ ফিরহাদ হাকিম নিজেও ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান তোলেন । ফের তিনি বলতে শুরু করেন, ‘একজনকেও যদি আমরা ঈমানের দিকে নিয়ে আসতে পারি তাহলে সত্যিকারের ইসলাম ধর্মের বৃদ্ধি হবে এবং সেটা বিস্তারিত হবে । আমরা জন্মগতভাবে ইসলাম নিয়ে জন্মেছে । ইসলাম নিয়ে জন্মানোর মানে আমাদের রসূল আমাদের জান্নাতের পথ সুদৃঢ় করে দিয়েছে যদি বড় কোন অন্যায় না করি তাহলে ইসলাম নিয়ে জন্মানো মানে জান্নাতে পৌঁছে যাওয়া ।’
তিনি বলেছিলেন, আজকে এই একটা বিশাল সমাবেশ এখানে করেছে । সুদুর মালেশিয়া থেকে এখানে তেলাওয়াত করতে এসেছেন । অনেকে তেলাওয়াত করবেন । ভাই, এটা কোন উপকার নয় । তেলাওয়াত যত শুনবেন আত্মা তত শুদ্ধ হবে । তেলাওয়াত যেখানে হবে আল্লাহর রহমত সেখানে নেমে আসবে । অর্থাৎ এখানে তেলাওয়াত হওয়া মানে এর কাছাকাছি পুরো কলকাতাতে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে । আমাদের যদি সময় থাকতো তাহলে বসে আরও তেলাওয়াত শোনা হতো । একটা শিশু এত সুন্দর তেলাওয়াত করলেন আমি সত্যি সত্যি ধন্যবাদ এবং বিস্মিত হয়ে গেছি ।’
ফিরহাদ হাকিম বলেন,’আমরা বিশ্বাস শুধু সেই আল্লাহতালার উপরে এবং সেই আল্লাহতালা তার রহমত দিয়ে আমাদের ইহকাল পরকাল তার রহমত বর্ষিত করুক । এই দোয়া আমি করি । আর একটা জিনিস এই ফাউন্ডেশনের কাছে আমার চাওয়ার আছে । সেটা হচ্ছে, এইরকমই একটা অনুষ্ঠান করে আমরা, বিশেষ করে ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষরা যদি তেলাওয়াতের সাথে সাথে যারা ইসলাম ধর্মাবলম্বী নয় তাদের মধ্যে ছড়াতে হবে । কারণ আমাদের নিজেদের আল্লাহতালার রহমত আমাদের আছে । আমরা জন্মগতভাবে ইসলাম নিয়ে জন্মেছি এবং ইসলাম নিয়ে জন্মানোর মানে আমাদের রসূল আমাদের জান্নাতের পথ সুদৃঢ় করে দিয়েছে । যদি বড় কোন অন্যায় না করি কাল ইসলাম নিয়ে জন্মানো মানে জান্নাতে পৌঁছে যাওয়া । কিন্তু যাদের আল্লাহ সেই রহমত দেননি তাহলে যদি তেলাওয়াত এবং কোরান শরীফের মানে বুঝতে পারেন এবং যদি একজনকেও আমরা ঈমান দিতে পারি তাহলে আমাদের জান্নাতের পথ একেবারে সুরক্ষিত হবে । আমরা নিজেরা মুসলিম,মুসলিম ঘরে জন্মেছি, মুসলমান ঘরে বড় হয়েছি, আমাদের নামাজ আদব কায়দা বেশিরভাগ মানুষেরই জানা । কিন্তু যারা দুর্ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে, যারা ইসলাম নিয়ে জন্মায়নি, তাদেরও দাওয়াতে ইসলাম । অর্থাৎ ইসলামের দাওয়াত দিয়ে তাদের মধ্যে ঈমান নিয়ে আসলে এটা আল্লাহতালাকে খুশি করা হবে ।’
তিনি বলেন,’আমাদের রসুল পাক কত মানুষকে ঈমান দিয়েছেন । আমাদের বড় বড় অলি কত মানুষকেই ঈমান দিয়েছেন । আমাদের ব্যবহার, আমাদের জীবনযাপন, আমাদের কোরান শরীফের মানের মধ্যে দিয়ে রাখা এবং এবং তার মানেটাকে চারিদিক দিয়ে ছড়িয়ে দিলে যদি একজনকেও আমরা ঈমানের দিকে নিয়ে আসতে পারি তাহলে সত্যিকারের ইসলাম ধর্মের বুদ্ধি হবে এবং বিস্তারিত হবে । আমাদের সবাইকে আজকের দিনে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই ।’
সব শেষে তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে কোরানের আলো ফাউন্ডেশনকে যে এরকম একটা তেলাওয়াতের কম্পিটিশন এববগ এরকম একটা তেলাওয়াতের ব্যবস্থা করে দিয়েছে যার জন্য আপনারা সবাই একসঙ্গে এখানে সমবেত হয়েছেন । কত ভালো লাগে, কত নিজেদের শক্তিশালী মনে হয়, সবাই এখানে টুপি পড়ে বসে আছে,হাজার হাজার মানুষ বসে আছে, তখন মনে হয় ইসলামের ঐক্য একটা জায়গায় আছে । এখানে আমাদের কেউ কোনদিন দাপাতে পারবেনা ।’ আসলে কলকাতার ধন ধান্য অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘সর্বভারতীয় কোরান প্রতিযোগিতার‘ সময় ওই সমস্ত মন্তব্য করেছিলেন ফিরহাদ হাকিম । এসএস টিভি পাবলিক’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে তার বক্তব্যের ভিডিও সম্প্রচারিত হয় । তার এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানায় বিজেপি । বিধানসভার সামনে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির বিধায়করা হাতে সংবিধানের একটা করে কপি নিয়ে তুমুল বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন । ‘ফিরহাদ হাকিম মুর্দাবাদ‘, ‘হিন্দু বিরোধী সরকার আর নেই দরকার‘,’মমতা ব্যানার্জির জিহাদি সরকার আর নেই দরকার‘, ‘হিন্দু বিরোধী ফিরহাদ হাকিম মুর্দাবাদ‘,’হিন্দু তুমি এক হও‘ প্রভৃতি শ্লোগান ওঠে । পাশাপাশি শুভেন্দু সহ বিজেপি বিধায়কদের জামায় লেখা ছিল, ‘গর্ব করে বল আমি হিন্দু‘ স্লোগান ।।