এইদিন ওয়েবডেস্ক,হুগলি,২১ সেপ্টেম্বর : আজ শনিবার হুগলি জেলার আরামবাগের পুরশুড়ায় বন্যায় দুর্গতদের ত্রাণ বিলি করতে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । বিরোধী দলনেতাকে কাছে পেয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দেন বন্যা কবলিত মহিলা ও পুরুষরা । তাদের অভিযোগ যে সরকারিভাবে কোন ত্রাণ বিলি তাদের করা হয়নি । এমনকি পানীয় জল পর্যন্ত দেওয়া হয়নি ।
শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘প্রতিবছর চিঁড়ে,গুড় আর পলিথিন বন্ধ করতে হলে এই মুখ্যমন্ত্রীকে তাড়াতে হবে ।’ পাশাপাশি তিনি আশ্বস্ত করেন যে পরের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় এলে ২০২৬ সাল থেকে বন্যা বন্ধ করব । তা না হলে দ্বিতীয়বার মুখ দেখাবো না।’ এদিন পুটশুড়াতে বিজেপির তরফ থেকে ত্রিপল, পানীয় জল ও খাদ্যসহ প্রচুর ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয় ।
সাম্প্রতিক সময়ে অতি বৃষ্টির কারনে ডিভিসি থেকে জল ছাড়া হয় । ফলে দামোদর তীরবর্তী গ্রামগুলি নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় । দিন দুয়েক আগে বন্যা কবলিত এলাকাগুলিতে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । আজ আরামবাগের পুরশুড়ার কংসাবতী নদীর জলে প্লাবিত হয়ে যাওয়া বানভাসি লোকের মাঝে যান বিরোধী দলনেতার শুভেন্দু অধিকারী । সাধারণ মানুষের মাঝে বসে তিনি তাদের অভাব অভিযোগের কথা শোনেন ।
শুভেন্দু অধিকারী তাদের প্রশ্ন করেন,’আপনাদের এলাকায় কোন বাঁধ সারাই করেছে ? নদী বাঁধে যে ঘোঘ টোগ হয়,বর্ষার সময় সেগুলো সারাই করেছে ?’ উপস্থিত মহিলা পুরুষরা সমস্বরে বলেন কোন কাজই হয়নি কেবল স্তা দিয়ে কোনরকমে আটকে দেওয়া হয়েছে। শুভেন্দু জিজ্ঞেস করেন,’আপনার এখনো পর্যন্ত কি কি সরকারি ত্রাণ পেয়েছেন? শুকনো খাবার দিয়েছে ? বেবি ফুড দিয়েছে ? গরু খাদ্য দিয়েছে? ব্লিচিং ফিনাইল দিয়েছে ? পানীয় জলের পাউচ দিয়েছে ?’ উপস্থিত মহিলা পুরুষরা সমস্বরে বলেন, ‘কিছুই দেয়নি । রান্না করা খাবার এনজিও থেকে দিয়েছিল একবার হরিহর পাড়ায় । পুলিশের পক্ষ থেকেও কিছু দেওয়া হয়নি । বিডিও অফিস থেকেও কিছু দেওয়া হয়নি ।’একথা শোনার পর শুভেন্দু বলেন,’তার মানে পশ্চিমবঙ্গের সরকার বলে কিছু নেই ।’ এরপর শুভেন্দু অধিকারী উঠে পড়েন এবং উপস্থিত বন্যা কবলিত মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,’আমি আজকে এলাম, এর আগেও দলীয়ভাবে আপনাদের সাহায্য করা হয়েছে, আমি আজ রাজনৈতিকভাবে আসিনি, প্রচুর ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে এসেছি । এরপরে আমি পূজার আগে আবার আসবো । আমি আগামী সপ্তাহে আবার খানাকুল পুড়শুড়াতে আসবো । আমি ছবি তোলার লোক নই । শুকনো জায়গা থেকে কিছুটা জলে নেমে ‘তু খিঁচ মেরি ফটো’…সে কারবার আমরা করি না ।’
তিনি বলেন,’আপনারা প্রার্থনা করুন যে প্রতিবছর চিঁড়ে,গুড় আর পলিথিন বন্ধ হোক । আর এটা করতে গেলে মুখ্যমন্ত্রীকে তাড়াতে হবে । আমরা রাজি আছেন ?’ সকলের সমসরে বলেন ‘হ্যাঁ’ । শুভেন্দু তাদের প্রতিশ্রুতি দেন,’বিজেপির সরকার আনুন… কথা দিচ্ছি ২০২৬ সাল থেকে বন্যা বন্ধ করব । তা না হলে দ্বিতীয়বার মুখ দেখাবো না।’
আগের দিন শুভেন্দু অধিকারীর কাছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ জানান বানভাসি মানুষরা । তাদের অভিযোগ যে এক ফোঁটা পানীয় জল পর্যন্ত দিচ্ছে না । উত্তরের শুভেন্দু বলেছিলেন,’জল কেন দেবে ছবি তুলতে এসেছিল তো । তো তোষামোদ আর ভাতা এর ওপরই চলছে এই সরকারটা ।’শুভেন্দু বলেন,’কংসাবতীতে নদীতে জল তো রাজ্য সরকার ছেড়েছে । ইছামতি এবং ম্যাসেঞ্জার বাঁধ থেকে জল তো রাজ্য সরকার ছেড়েছে ।’
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পানিহাটি পুরসভার বন্যা কবলিত একটা জায়গায় মোটরসাইকেলের চড়ে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলার সময় সাধারণ মানুষ অভিযোগ করেন,’শুধু ভাঁওতা ! মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কেবল নিরাপত্তাবাহিনীর এসেছিল, কোন ত্রাণ সামগ্রী ছিল না । সোদপুর, রবীন্দ্রনগর, পদ্মাবেড়িয়া এগুলো সব ভেসে গেছে। একটা নৌকা নেই, দাদা ।’ শুভেন্দু বলেন, আরে, সরকারই নেই । পরের সাংবাদিকরা মুখ্যমন্ত্রীর বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’উনি কি করে গেছেন সেটা আমি বলবো না বানভাসি মানুষরা বলবে ।’ তখন।একজন গ্রামবাসী বলেন,উনি এসেছেন ওনার ক্রেডিট নিতে…আর কিচ্ছু করেনি..কিছু দেয়নি। শুধু রাস্তা টাকে অবরুদ্ধ করে দিয়েছিল ।’।