এইদিন ওয়েবডেস্ক,লখনউ,২১ সেপ্টেম্বর : পাকিস্তানে বসে লখনউ-এর এসজিপিজিআই হাসপাতালের এক মহিলা ডাক্তারকে ২ কোটি ৮১ লাখ টাকার জালিয়াতি করেছে একটি দুষ্কৃতী চক্র । এসজিপিজিআই হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ রুচিকা ট্যান্ডন নামে ওই চিকিৎসককে ইডির নাম করে ফোন করে সাত দিনের জন্য ‘ডিজিটালি গ্রেপ্তার’ করার ভয় দেখিয়ে অত বিপুল পরিমাণ টাকা প্রতারিত করে পাকিস্তানের সাইবার ঠগরা ৷ সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে ডাঃ রুচিকা ট্যান্ডন বলেছেন,’আমি একদিন সকালে একটি কল পাই, কলকারী নিজেকে TRAI (টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) থেকে পরিচয় দিয়ে আমাকে বলেছিল যে পুলিশের নির্দেশ অনুসারে আমার ফোন বন্ধ করা হবে, কারণ মুম্বাই সাইবার ক্রাইম সেলের কাছে আপনার নম্বরের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। আমার নম্বরের বিরুদ্ধে মানুষকে হয়রানিমূলক বার্তা পাঠানো হচ্ছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে । তারপর তারা আমাকে একজন তথাকথিত আইপিএস অফিসারের সাথে কথা বলে, যিনি আমাকে বলেছিলেন যে আমার একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট অবৈধ কার্যকলাপের সাথে যুক্ত ছিল, যেমন ৭ কোটি টাকার মানি লন্ডারিং। তিনি বলেছিলেন যে তিনি আমাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করার নির্দেশ পেয়েছেন এবং যদি আমি তাদের কাছে যেতে না পারি, তারা আমাকে ‘ডিজিটাল হেফাজতে’ নিয়ে যাবে, তারা আমাকে একজন সিবিআই অফিসারের সাথে কথা বলতে বলেছিল কারণ এটি একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।’
জানা গেছে,প্রায় এক মাস আগে, সিবিআই এবং ট্রাই অফিসার হওয়ার ভান করে ঠগরা রুচিকাকে ২.৮১ কোটি টাকা প্রতারণা করেছিল। একটি মিথ্যা মানি লন্ডারিং মামলা দায়েরর কথা বলে তাকে কয়েক ঘন্টা ধরে ডিজিটালভাবে গ্রেপ্তারে ভয় দেখিয়ে তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ নেওয়া হয়েছিল। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে রুচিকা ট্যান্ডন পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
এখন এসটিএফ পলাতক নৌবাহিনীর সৈনিক গোপাল কুমারকে রিমান্ডে নিয়ে সংখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানা গেছে। অভিযুক্ত গোপাল বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। তার কাছ থেকে ল্যাপটপ ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে টেলিগ্রাম গ্রুপে পাকিস্তান সম্পর্কিত নম্বর পাওয়া গেছে। সমস্ত ডিভাইস পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এসটিএফ এই চক্রের আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা গেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে তিন যুবকও রয়েছে যারা নিজেদের সিবিআই অফিসার বলে ফোন করেছিল । এ পর্যন্ত এ মামলায় জড়িত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসটিএফ এই প্রতারক গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত অন্য সদস্যদেরও খোঁজ করছে।
ডিজিটাল গ্রেফতারের নামে প্রতারণার ঘটনা এই প্রথম নয় । এর আগে ইতিমধ্যে লখনউ-এর এক অবসরপ্রাপ্ত এক অধ্যাপকের কাছ থেকে এভাবে লাখ লাখ টাকা প্রতারণা করেছে সাইবার অপরাধীরা। তিনিও এসজিপিজিআইয়ের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে প্রায় ৪৮ ঘন্টার ডিজিটাল গ্রেপ্তারে রাখার কথা বলে তার কাছ থেকে ৫৪ লাখ টাকারও বেশি প্রতারণা করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, ডিজিটাল গ্রেফতার হল সাইবার অপরাধের একটি নতুন পদ্ধতি ৷ যেখানে প্রতারকরা ভিডিও কলের মাধ্যমে টার্গেটকে হুমকি দেয় এবং তাকে ডিজিটাল গ্রেফতার করার কথা বলে । তাকে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব করে তারা একজন ব্যক্তিকে এতটাই হয়রানি করে যে তাকে টাকা দিতে বাধ্য করা হয় । একই ঘটনা ঘটেছে ডাঃ রুচিকা ট্যান্ডনের ক্ষেত্রেও ।।