এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,২১ সেপ্টেম্বর : বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি দিঘীনালায় চাকমা সম্প্রদায়ের জনৈক এক ব্যক্তির মোটরসাইকেল চুরি করে পালানোর সময় রাস্তার খুঁটিতে ধাক্কা দিয়ে মৃত্যু হয়েছিল দাগি দুষ্কৃতী মহম্মদ মামুন নামে একজন বাঙালি মুসলিম যুবকের । কিন্তু মুসলিম এলাকায় রটিয়ে দেওয়া হয় যে চাকমারা একজন মুসলিম যুবককে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে । ওই দাগি দুষ্কৃতীর মৃত্যুর পর মুসলিম জনতা চাকমাদের উপর হামলা চালিয়ে দেয় । লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ছাড়াও এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। আর সব কিছু ঘটে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতেই ! হামলায় এযাবৎ ৪০ জন হিন্দু-বৌদ্ধ চাকমা উপজাতীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে । ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে ভস্মীভূত করে দেওয়া হয়েছে চাকমাদের অসংখ্য ঘরবাড়ি, যানবাহন ও হিন্দু-বৌদ্ধ মন্দির । অথচ একতরফাভাবে মার খেলেও আক্রান্ত উপজাতী চাকমারা বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর নজরে ‘সন্ত্রাসী’ এবং সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানো মুসলিমরা নাকি ‘বিক্ষুব্ধ জনতা’ । শুক্রবার(২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪) এমনই একতরফা প্রেস রিলিজ জারি করে সংখ্যালঘুদের জীবন আরও সঙ্কটের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন বাংলাদেশের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলম খান ।
ওই পক্ষপাতদুষ্ট ও একতরফা প্রেস রিলিজে বলা হয়েছে,গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল জনগণের গণপিটুনিতে মোহম্মদ মামুন (৩০), পিতা মৃত নুর নবী নামক একজন যুবক নিহত হয়। পরবর্তীতে সদর থানা পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধারপূর্বক ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন (১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪) বিকেলে দীঘিনালা কলেজ হতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় ইউপিডিএফ (মূল) এর কতিপয় সন্ত্রাসী মিছিলের উপর হামলা করে ও ২০-৩০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এর প্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ জনতা বোয়ালখালী বাজারের কয়েকটি দোকানে অগ্নি সংযোগ করে।
উল্লেখ্য, সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের ৬ জন আহত হলে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ফায়ার ব্রিগেড ও স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় আগুন নেভায়। উপরোক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি ও আশেপাশের এলাকা সমূহে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সাথে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ক্রমেই পরিস্থিতিকে আরো উত্তেজনাকর করে তুলে। দ্রুততার সাথে খাগড়াছড়ি জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জরুরী ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ রাত ২২০০ ঘটিকা হতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, দীঘিনালা ও পানছড়িসহ সকল উপজেলায় যৌথভাবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে টহল দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন কমিউনিটি লিডারদের সাথে আলাপ আলোচনা করে সকল পক্ষকে সহিংস কার্যকলাপ হতে বিরত থাকার পরামর্শ প্রদান করতে বলা হয়।
একই রাতে (১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪) খাগড়াছড়ি জোনের একটি টহল দল ২২৩০ ঘটিকায় একজন মুমূর্ষ রোগীকে স্থানান্তরের সময় খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় পৌঁছালে অবস্থানরত উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফ (মূল) এর নেতৃত্বে বাধা সৃষ্টি করে। এক সময় ইউপিডিএফ (মূল) এর সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর টহল দলের সদস্যদের উপর গুলি করে এবং আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনী পাল্টা গুলি চালায়। উক্ত গোলাগুলির ঘটনায় ০৩ জন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয় বলে জানা যায়।
একই ঘটনার ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে স্থানীয় উচ্ছ্ববল জনসাধারণ কয়েকজন যুবকের মোটরসাইকেল থামিয়ে তাদের উপর হামলা ও লাঠিপেটা করে। সেই সাথে উত্তেজিত জনসাধারণ ইউপিডিএফ (মূল) এর নেতৃত্বে ফায়ার ব্রিগেড এর অফিসে ভাঙচুর করে।
আজ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ (শুক্রবার) সকালে পিসিজেএসএস সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলা সদরে ” সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন” এর ব্যানারে স্থানীয় জনসাধারণ রাঙ্গামাটি জিমনেশিয়াম এলাকায় সমবেত হয়। এ সময় ৮০০-১০০০ জন উত্তেজিত জনসাধারণ একটি মিছিল বের করে বনরুপা এলাকার দিকে অগ্রসর হয় এবং বনরুপা বাজার মসজিদ, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সিএনজি অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল এবং বেশকিছু দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করে। এতে করে উভয় পক্ষের বেশকিছু লোকজন আহত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রাঙামাটি জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত ঘটনাসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে চলমান উত্তেজনা তিন পার্বত্য জেলায় ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে। অনতিবিলম্বে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে চলমান উত্তেজনা প্রশমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। যথাযথ তদন্ত কার্যক্রম সম্পাদনের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের সনাক্তপূর্বক প্রযোজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বসাধারণকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।’
এদিকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর এই প্রকার পক্ষপাতদুষ্ট ও একতরফা বিবৃতির পর চট্টগ্রামের চাকমা উপজাতীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে । তাদের আশঙ্কা যে স্থানীয় মৌলবাদী মুসলিমদের সাথে এবারে বাংলাদেশের সেনাও সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চালিয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য করতে পারে । এই আশঙ্কা থেকে বাংলাদেশ হিন্দু জেনোসাইড এক্স-এ লিখেছে,’বাঙালি মুসলমান বসতি স্থাপনকারীরা লুটপাট ও ধ্বংস করছে উপজাতীয় পাহাড়ি দোকান! এর মধ্যে কিছু দোকান ছিল হিন্দুদের! এ পর্যন্ত ৪০ জন আদিবাসী নিহত!
হিন্দুদের মতো উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বিলুপ্ত হতে চলেছে!’ ভয়েস অফ বাংলাদেশি হিন্দাসের প্রতিক্রিয়া, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আদিবাসীদের বাড়িঘর, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং অফিসে হামলা চালাতে বসতি স্থাপনকারী সন্ত্রাসী ক্যাডারদের সরাসরি মদদ দিচ্ছে। বাংলাদেশের আর্মির সামনে বাড়ি, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জ্বলছে। তাদের জন্য লজ্জা।’।