এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,২০ সেপ্টেম্বর : পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি দিঘীনালায় সেনাবাহিনী সামনেই চাকমা হিন্দু ও বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীদের নরসংহার চলছে বলে অভিযোগ উঠছে । খাগড়াছড়িতে চাকমা হিন্দু ও বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীদের উপর স্থানীয় বাঙালি মুসলিমদের হামলায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম । যদিও বাংলাদেশি ব্লগার আসাদ নূর হামলার ঘটনার বিবরণে জানিয়েছেন,’গতকাল একজন বাঙ্গালী বাইক চুরি করার সময় ধরা পড়ে পালিয়ে যাওয়া সময় খুঁটিতে ধাক্কা খেয়ে আহত হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঐ ব্যক্তিকে মৃত ঘোষনা করে। এমনকি ঐ ব্যক্তির নামে খাগড়াছড়ি থানায় ২/৩টি চুরির মামলা রয়েছে। কিন্তু সেটেলার বাঙ্গালীরা মনে করে যে আদিবাসীরা তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। তাই সেই সূত্রে আজকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় আদিবাসীদের বাড়ি, দোকান পুড়িয়ে দেওয়া সহ প্রায় ৮ জন আদিবাসীকে মেরে ফেলেছে।’ তার আরও অভিযোগ,’সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে এই পরিস্থিতি জানানো হলেও তারা ২/৩ ঘন্টা পরে ঘটনা স্থলে যায়। অথচ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর জন্য ৫/৬ মিনিটের বেশি লাগে না। এই হচ্ছে বাংলাদেশের অবস্থা। দেশটিতে কোন ভালো মানুষ নিরাপদে নেই।’ জানা গেছে,বাঙালি মুসলিমরা চাকমাদের কমপক্ষে ১০০ টি বাড়ি ও দোকানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে । বহু মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে । দিঘিনালা কলেজে আগুন ধরিয়ে পুডিয়ে দেয় মুসলিমরা । রাঙামাটিতে চাকমা সম্প্রদায়ের ১জন নিহত এবং অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মহম্মদ মামুন নামে একজন বাঙালি মুসলিম দুষ্কৃতী জনৈক চাকমা ব্যক্তির বাইক চুরি করে । এলাকার বাসিন্দাদের নজরে পড়লে তাকে ধরতে পিছু ধাওয়া করে । এরপর ওই দুষ্কৃতী পালানোর জন্য বেপরোয়া গতিতে বাইক চালাতে গিয়ে একটা বিদ্যুতের খুঁটিতে সজোরে ধাক্কা দেয় । কিন্তু তার মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে । স্থানীয় চাকমারাই তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায় । কিন্তু তার মৃত্যু হয় । এদিকে মুসলিম এলাকায় রটিয়ে দেওয়া হয় যে চাকমারা একজন মুসলিম যুবককে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে । এরপর মুসলিম জনতা চাকমাদের উপর হামলা চালিয়ে দেয় । মুসলিমরা লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ছাড়াও এলোপাথাড়ি গুলি চালায়।
গুলিতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ধন রঞ্জন চাকমা, জুরান চাকমা ও রুবেল ত্রিপুরার । খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের চিকিৎসক রিপল বাপ্পি চাকমা জানান, জুরান চাকমা নামে একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। অন্য দুইজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছেন। আহত হয় আরও অন্তত ২০ জন ।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান ও এসপি আরেফিন জুয়েল দীঘিনালার সংঘাতকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান বলেন, রাতে গোলাগুলি হয়েছে। এলাকায় একটি থমথমে পরিস্থিতি রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে খাগড়াছড়ির ঘটনার জেরে আর এক পার্বত্য শহর রাঙামাটিতেও সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে আজ শুক্রবার সকালে চাকমা সম্প্রদায়ের একজন নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাঙামাটি শহরের জিমনেসিয়াম চত্বরে বাঙালি মুসলমানরা হামলা চালালে বেশ কয়েকজন আহত হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন মারা গেছেন। হতাহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোশাররফ হোসেন জানান, সকাল থেকে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এই কারনে আজ দুপুরে রাঙামাটি পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।।