প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৮ সেপ্টেম্বর : দোর গোড়ায় শারদোৎসব। তার আগে ডিভিসির ছাড়া জলে কার্যত বানভাসী পূর্ব বর্ধমান জেলা।কোন কোন জায়গায় দামোদর উপচে জল পৌছে গিয়েছে গৃহস্থের বাড়ির একেবারে দুয়ারে। আবার কোন কোন জায়গায় দামোদর উপচে পড়া জলে থই থই গ্রামের পর গ্রাম। এ নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্পষ্ট দাবি, গোটাটাই ’ম্যান মেইড বন্যা’। তবে বন্যা যে কারনেই হোক না কেন ,হুগলীর আরামবাগের পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান জেলায় জামালপুর ও রায়না ২ ব্লকের কয়েকটি অঞ্চল সহ গুসকারর বাসিন্দাদের এখন চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে।প্রশাসনের কথায় ঘর বাড়ি ছেড়ে কেউ বাঁধে আবার কেউ পাকা রাস্তায় ঠাঁই নিয়েছেন।তবে মাথার উপর আচ্ছাদন দেওয়ার মত ত্রিপল ও খাবারদাবার যথা সময়ে না মেলায় বানভাসিদের মধ্যে অনেকে ক্ষোভ উগরে দেন। বন্যায় সার্বিক ক্ষয় ক্ষতি খতিয়ে দেখতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস বৃহস্পতিবার জামালপুরে আসছেন। তা নিয়ে এখন তটস্থ প্রশাসনের কর্তারা
ডিভিসির ছাড়া জলে সবথেকে বেশী বানভাসি হয়েছে আরামবাগের গোঘাট ও খানাকুল প্রভৃতি এলাকা।ততটা না হলেও দামোদর ও মুণ্ডেশ্বরীর সংযোগস্থলে থাকা পূর্ব বর্ধমানের জালালপুর ব্লকের জ্যোৎশ্রীরাম অঞ্চলের অমরপুর ,শিয়ালী, কোরা ও উজিরপুর এলাকার বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার নিয়েছে । এইসব এলাকার বাসিন্দারের যথেষ্টই ভোগান্তিতে ফেলেছে ।এই সব এলাকার কমবেশী পঞ্চাশটি পরিবার জলবন্দি হয়ে রয়েছে।দামোদর ছাপিয়ে জলে পৌছে গিয়েছে শিয়ালী গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । গোটা বিদ্যালয় চত্ত্বর এখন হাঁটু সমান জলে ভাসছে । অনেক গৃহস্থের বাড়ির চৌকাঠ ছাপিয়ে জল ঘরের ভিতরে পর্যন্ত প্রবেশ করেছে । ধান সহ সবজি চাষের জমিও জলে ডুবেছে ।
প্রশাসনের কথা মেনে শিয়ালী , কোরা ও উজিরপুর এলাকার অনেকেই মঙ্গলবার বিকাল থেকেই স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেন ।অনেকে আবার উঁচু রাস্তায় উঠে এসে সেখানেই ঠাঁই নেন। ঘর বাড়ি ছেড়ে আসতে না চাওয়া অনেকে আবার প্লাবন পরিস্থিতির মধ্যেও নিজের নিজের বাড়িতেই রয়ে থাকেন। ত্রিপল ও খাবারদাবার না মেলার অভিযোগ এনে দুর্ভোগে পড়া এইসব এলাকার অনেক মহিলা ক্ষোভ উগরে দেন ।
যদিও জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ভূতনাথ মালিক বলেন, ত্রাণ ও ত্রিপল না মেলার অভিযোগ সত্য নয় ।শিয়ালি ,কোরা, পাইকপাড়া ,উজিরপুর প্রভৃতি এলাকা জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। তাই অনেকটা ঘুরপথে ত্রাণ ও ত্রিপল নিয়ে পৌছাতে একটু দেরি হয়েছে। ভূতনাথ বাবু দাবি করেন ,ব্লকের বিডিও পার্থসারথী দে সহ ব্লক প্রশাসনে অনেক কর্তা এবং পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা মিলে বানাভাসি এলাকার মানুষজনের কাছে পৌছে শুকনো খাবার ,ত্রিপল বহু বাসিন্দাকে পৌছে দিয়েছেন। এছাড়ায় জামালপুরের সোনারগড়িয়া,বনবিবিতলা স্কুলে আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দাদের এবং শাহহুশেনপুরের অস্থায়ী ফ্লাড সেন্টানে আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দাদের খাবার , পানিয় জলসব পৌছে দেওয়া হয়েছে।
ভুতনাথববু এও জানাজ জ্যৌৎদক্ষিণ সহ কয়েকটি এলাকা মিলিয়ে প্রায় ১০ টির মত কাচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত খবর মিলেছে। দামোদরে জল বাড়ার সাথে সাথে জামালপুরের দোবাঁদি এলাকার দামোদরের বাঁধের নিচের দিকে ধস নামার মত অবস্থা তৈরি হয় । সেচ দফতর দ্রত ব্যবস্থা নিয়ে বালির বস্তা ফেলে ওই ধস কবলিত এলাকা মেরামত করে । তার কারণে বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে যান ওই এলাকার বাসিন্দারা । অমরপুর , শিয়ালী ও কোরা এলাকার মত না হলেও জামালপুরের বেরুগ্রাম আঞ্চল এবং জামালপুর ১ পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রাম জলপ্লাবিত হয়েছে ।ডিভিসির ছাড়া জলে এমধ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ফলে ধান ও সবজি চাষে জামালপুরের অনেক চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে ভূতনাথ মালিক জানিয়েছেধ ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে , বন্যা পরিস্তিতি তৈরি হয়েছে রায়না ২ ব্লকের বড়বৈনান গ্রাম সহ গোতান অঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম । এছাড়াও আউশগ্রামের গুসকরা শহরও প্রাবিত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। পশাপাশি জানানো হয়েছে,বন্য পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে নবান্নের নির্দেশে , জেলা প্রশাসনের তরফে খোলা হয়েছে ২৪ ঘন্টার কন্ট্রোল রুম।মঙ্গলবার রাতে জামালপুরে দামোদরে আটকে পড়া তিনজনকে সিভিল ডিফেন্স টিম উদ্ধার করেছে। বহু মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ২১ টি শিবির করে মোট ৩৪৫৮ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে“।চাষের ক্ষয় ক্ষতির হিসেব নিকেশ
কষা এখনও চালিয়ে যাচ্ছে কৃষি দপ্তর ।
সেচ দপ্তরের জামালপুরে আধিকারিক নীলাদ্রি দে জানিয়েছেন, মঙ্গলবারর দামোদরে জল বাড়ার সাথে সাথে কোথাও দামোদরে কিনারা আবার কোথায় দামোদরের বাঁধের ক্ষতি হওয়ার খবর আসতে শুরু করে। তার পর থেকেই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে শুরু হয়ে যায় ওইসব ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় ভাঙন রেখার কাজ । জামালপুরের সাজেমলতলা,দোবাঁদি হরগোবিন্দপুর, কাঠুরিয়াপাড়া,গ্রামকালনা ,জ্যোৎকুবির ও জ্যোৎচাঁদ সেই কাজ দু’দিন ধরে চলেছে। বুধবার রাতেও কাজ অব্যাহত রাখতে হয়েছে এলাকাবাসীর নিপাপত্তার স্বার্থে।
সেচ দপ্তরের জামালপুরে আধিকারিক নীলাদ্রি দে জানিয়েছেন, মঙ্গলবারর দামোদরে জল বাড়ার সাথে সাথে কোথাও দামোদরে কিনারা আবার কোথায় দামোদরের বাঁধের ক্ষতি হওয়ার খবর আসতে শুরু করে। তার পর থেকেই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে শুরু হয়ে যায় ওইসব ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় ভাঙন রেখার কাজ । জামালপুরের সাজেমলতলা, দোবাঁদি, হরগোবিন্দপুর, কাঠুরিয়াপাড়া,গ্রামকালনা, জ্যোৎকুবির ও জ্যোৎচাঁদ সেই কাজ দু’দিন ধরে চলেছে। বুধবার রাতেও কাজ অব্যাহত রাখতে হয়েছে এলাকাবাসীর নিপাপত্তার স্বার্থে।।