এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৭ সেপ্টেম্বর : সোমবার রাতে জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ মঙ্গলবার নতুন সিপির নাম জানানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন । এছাড়াও ডিসি নর্থ, স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকেও সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে । এদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি তুলেছেন, বিনীত গোয়েলকে শুধু অপসারণ করলেই হবে না, বরঞ্চ তাকে ‘তিলোত্তমা’র ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় প্রমান লোপাটের দায়ে জেলে ঢোকাতে হবে । পাশাপাশি এই নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভূমিকা খতিয়ে দেখারও দাবি জানান তিনি । শুভেন্দু আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘যখন সময় আসবে, মমতা ব্যানার্জি নিজেকে বাঁচানোর জন্য আপনাদেরকে বলির পাঁঠায় পরিণত করবে । তাই নিজের নিজের দায়িত্ব পালন করুন ।’
সোমবার সন্ধ্যায় কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা । এর আগে দু’বার বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বৈঠক করতে প্রথমে নবান্নে যান জুনিয়ার ডাক্তাররা। কিন্তু লাইভ স্ট্রিমিং করতে না দেওয়ায় সেই বৈঠক ভেস্তে যায়। এরপর মুখ্যমন্ত্রী নাটকীয়ভাবে নিজে চলে আসেন চিকিৎসকদের ধর্নামঞ্চে, সেখান থেকেও আলোচনার বার্তা দেন তিনি। পরে শনিবার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে আবার বৈঠকের জন্য সরকারের আমন্ত্রণ পেয়ে উপস্থিত হন চিকিৎসকরা। কিন্তু সেই বৈঠকও নানা কারণে ভেস্তে যায়। বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়া চিকিৎসকদের কার্যত ‘ঘাড় ধাক্কা’ দিয়ে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ । অবশেষে সোমবার সন্ধ্যে ৭ টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে জুনিয়ার চিকিৎসকদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক শুরু হয়। সূত্রের খবর, নিজেদের পাঁচ দফা দাবিতে অনড় থেকেই আলোচনা চালিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধিরা। এছাড়া বৈঠকে আরও অনেক বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়। নিজেদের দাবিদাওয়া সংক্রান্ত একটি স্মারকলিপিও তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দিয়েছেন। রাজ্য প্রশাসনের তরফে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি।
যে ৫ দফা দাবির ভিত্তিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা সেগুলি হল-১)আর জি কর মেডিকেলে চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করা এবং ঘটনার মোটিভ সামনে আনা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। ২)তথ্যপ্রমাণ লোপাটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের চিহ্নিত করে তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনা। ৩)কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের অপসারণ । ৪)মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল-সহ রাজ্যের সমস্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্বাস্থ্য কর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। ৫)সমস্ত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভয়ের রাজনীতি বন্ধ করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। এই দাবিগুলোর সঙ্গে পাশাপাশি স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার পদত্যাগের দাবিও পরে যুক্ত করা হয়। তবে এদিনের বৈঠকে জুনিয়ার ডাক্তারদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি মেনে নিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে জুনিয়র ডাক্তাররা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে শুধু ঘোষণা নয়,সিদ্ধান্ত কার্যকর না করা পর্যন্ত তাদের ন্যায়বিচারের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে ।
এদিকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী টুইট করেছেন,’বৈঠকের কার্যবিবরণী প্রস্তাব করে যে অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে। যাইহোক, ন্যায়বিচারের জন্য, শুধুমাত্র কয়েকজন কর্মকর্তার বদলি যথেষ্ট হবে না। সাক্ষ্য বিকৃতিতে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তাদের কারাগারে ঢোকানো হবে। নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য যা কিছু ঘটেছে, তা শুধু কিছু কর্মকর্তার হাত হতে পারে না। সকলেই জানেন যে পশ্চিমবঙ্গে, একটি পিন বা হাতি সরানোর জন্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদেশ/নির্দেশ এবং সম্মতি ছাড়া কিছু ঘটে না। তাই এই পুরো পরিস্থিতির জন্য স্বাস্থ্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত দায়ী। তার শুধু পদত্যাগই নয়, পুরো বিষয়টিতে তার ভূমিকার সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত।’
সেই সাথে তিনি জুনিয়র চিকিৎসকদের সতর্ক করে লিখেছেন,’আমি সকল সরকারি কর্মচারীদের এই পর্ব থেকে তাদের পাঠ শিখতে অনুরোধ করতে চাই। যখন সময় আসবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে বাঁচানোর জন্য আপনাকে বলির পাঁঠায় পরিণত করার আগে নড়বেন না। সুতরাং, আইনের বিধান এবং আমাদের সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত নির্দেশিকা অনুসারে যথাযথতা বজায় রাখুন এবং আপনার দায়িত্ব পালন করুন। অন্যথায়, পরের বার আপনি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন এবং সমস্ত দোষ আপনার কাঁধে চলে যাবে এবং পরিস্থিতিকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে বলির পাঁঠা বানানো হবে।’
শুভেন্দু আরও লিখেছেন,’যারা রাজ্য জুড়ে, দেশ জুড়ে এবং বিশ্বজুড়ে “উই ওয়ান্ট জাস্টিস” এবং “জাস্টিস ফর আরজি কর” স্লোগান তুলেছেন তারা মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবেন কারণ এটিই আশা এবং আমাদের প্রয়াত ডাক্তার বোনের ন্যায়বিচারের শেষ অবলম্বন। আমি সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই যে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে।’।