পরাগজ্যোতি ঘোষ,১৬ সেপ্টেম্বর : গল্পের ছলে ভক্তদের চৈতন্য বিকাশে পারদর্শী ছিলেন পরমহংস শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব । একবার ভক্ত পরিবেষ্টিত হয়ে রামকৃষ্ণদেব অসাধারণ একটি ধর্মোপদেশ দিয়েছিলেন । কথামৃত গ্রন্থে বর্ণিত শ্রী রামকৃষ্ণদেবের সেই গল্পে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তির হঠাৎ রাত্রি দুটোর সময় তামাক খাওয়ার ইচ্ছে হয়। কিন্তু আগুনের অভাব অনুভূত হওয়ায় হারিকেন হাতে দুই কিলোমিটার হেঁটে বন্ধুর বাড়ি গিয়ে তাকে জাগান। এত রাত্রে বন্ধুর আগমনের কারণ জানতে চাওয়ায় ব্যক্তিটি তার চাহিদার কথা বলেন । শুনে বন্ধু হেসে বলেন হাতে হারিকেন রয়েছে সে কিনা তামাক খাওয়ার জন্য দুই কিলোমিটার হেঁটে এসেছে আগুন খুঁজতে ।মানব সমাজের মানুষগুলোরও সেই একই অবস্থা ।সবার ভিতর ধর্মের মূল উপাদান বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও ধর্ম কি সেটা বুঝতে পারছেন না।
শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন ‘যে বাক্য, যে কর্ম বাঁচাবাড়ার উৎস হয় /তাকেই জানিস ধর্ম বলে নইলে ধর্ম কিছুই নয় ।’ বাঁচানো ও বাড়ানো একমাত্র কাজ। পুরুষোত্তম শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র এই বাঁচাবাড়ার তুক শেখার জন্য পঞ্চবিধানের প্রবর্তন করেন । যজন-যাজন-ইষ্টভৃতি-স্বস্তায়িনী ও সদাচার এই পঞ্চনীতি পালনে একজন সাধারণ মানুষ থেকে দেবত্বে উত্তীর্ণ হয় । ঈশ্বরকে নিবেদন করে দিন শুরু করে তার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে নাম ধ্যান প্রার্থনা করা । নিজে যা অনুভব করেছি উপলব্ধি করেছি তা অপরকে বলা, নিজের শরীরটাকে শ্রীবিগ্রহের রূপ জ্ঞান করে সহজ পাক নিরামিষ আহার গ্রহণ করে ইস্টকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে অবিচল থাকা । সদাচার হল শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য এবং পরিবেশকে ঠিক রাখার জন্য কতগুলি বিশেষ বিধি আচরণ করা। যেমন একপাত্রে না খাওয়া, প্রস্রাব করে হাতে জল নেওয়া ,পরের গামছা পোশাক না ব্যবহার করা ইত্যাদি। এক কথায় শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের প্রবর্তিত ধর্মমত সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বলেন “মানুষ আপন টাকা পর /যত পারিস মানুষ ধর”। মানুষের সেবা করলে অর্থ সহজেই নিজের কাছে এসে যায় ।তিনি বলেন “মাতৃভক্তি অটুট যত /সেই ছেলে হয় কৃতি তত” ,” পিতাই শ্রদ্ধা মায়ে টান /সেই ছেলে হয় সাম্য প্রাণ। “
এরকম হাজার হাজার বাণী দিয়ে এবং সেগুলি নিজের জীবনে বংশ-পরম্পরায় আচরণ করে তিনি দেখিয়ে গেছেন ধর্ম কাকে বলে । তিনি বলেন “যে খুঁরে আমি দাড়ি কামাইনি সেই খুরে রে আমি কাউকে দাড়ি কাটতে বলিনি ।”বাস্তবিক মাতা মন মোহিনী ও পিতা শিব চন্দ্রের ছাওয়াল শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কেবল অবতার নন, তিনি অবতারী ।তিনি পূর্ববর্তী অবতার গনকে প্রেরণ করেছেন এই মর্তভূমিতে । কলির শেষে আবির্ভূত হয়েছেন বাংলাদেশের হিমায়াতপুরে। ঠাকুর প্রবর্তিত পথে চলতে চলতে মানুষের ভিতরে এক স্বর্গীয় শক্তির আবির্ভাব ঘটে ।এই শক্তিকে সুরসিক গাছির মত খেজুর গাছের উপর উঠে চোলন চোলন করতে হয়। তা না হলে গোড়া পচে অকালে মরন হতে পারে। মনে রাখতে হবে খেজুর রস দিয়ে যেমন সুস্বাদু নবাত হয় তেমনই তাড়িও(নেশার তরল) হয় ।তাই নবাত করতে হলে জীবনের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে।।