শ্যামসুন্দর ঘোষ,মেমারি(পূর্ব বর্ধমান),১৬ সেপ্টেম্বর : ফের চুরি হয়ে গেল পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি থানার মহিষডাঙ্গা গ্রামের শতাব্দী প্রাচীন মহিষাসুরমর্দ্দিনীর বিগ্রহ । আজ সোমবার পুরোহিত নিত্যসেবার পূজো করতে গিয়ে দেখেন মন্দিরের গেট ও দরজার সমস্ত তালা ভাঙা । মন্দিরের ভিতরে ঢুকলে তার নজরে পড়ে যে দুষ্কৃতীরা মন্দিরের কাঁসা পিতলের বাসনপত্রে হাত না দিলেও দেবীর ঐতিহ্যবাহী কষ্ঠিপাথরের মূর্তি নিয়ে চম্পট দিয়েছে ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে মেমারি থানার পুলিশ । এনিয়ে মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে । ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ । বিগত ১০ বছরের মধ্যে এনিয়ে ৫ বার চুরির ঘটনা ঘটল মহিষডাঙ্গা গ্রামের শতাব্দী প্রাচীন মহিষাসুর মর্দ্দিনীর মন্দিরে । যা নিয়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায় । পাশাপাশি শারদোৎসবের ঠিক মুখেই দেবী মূর্তি চুরি হয়ে যাওয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে গ্রামজুড়ে ।
মেমারি-২ ব্লকের মহিষডাঙ্গা গ্রামের মাঠের ধারে বাঁকা নদীর পাশে রয়েছে গ্রামের কুলদেবী মহিষাসুরমর্দ্দিনীর মন্দির । প্রায় ৬০০ বছর আগের দেবীর পূজোর প্রচলন করেন গ্রামের জনৈক এক ব্রাহ্মন পরিবার । দেবীর নামে নামকরণ করা হয় গ্রামের । কালক্রমে সার্বজনীন রূপ নেয় এই পূজো । কিন্তু বছর দশেক আগে থেকে কষ্ঠিপাথরের প্রাচীন দশভূজা দেবীমূর্তিটি দুষ্কৃতীদের নজরে পড়ে যায় । মন্দিরের এক সেবাইত দেবাশীষ যশ জানান,বছর দশেক আগে একই কায়দায় মন্দিরের তালা ভেঙে প্রাচীন দেবীমূর্তিটি চুরি করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা । আজও সেই মূর্তি উদ্ধার হয়নি । এরপর গ্রামবাসীদের চাঁদার টাকায় নবদ্বীপ থেকে নতুন একটি কষ্টিপাথরের দেবী মূর্তি তৈরি করিয়ে আনা হয় ৷ পাশাপাশি পুলিশ এবং গ্রামবাসীদের আর্থিক সাহায্যে মন্দির সংলগ্ন এলাকায় চারটি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল৷ কিন্তু দুষ্কৃতীরা সিসিটিভি ক্যামেরার তার ছিড়ে দিয়ে পরপর তিনবার মূর্তি চুরি করে নিয়ে পালায় । যদিও পরে মূর্তিটি উদ্ধার হয় । কিন্তু আজ ফের দেবী মূর্তিটি চুরি হয়ে গেছে । এ নিয়ে তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, মেমারি থানার মহিষডাঙ্গা গ্রামের শতাব্দী প্রাচীন মহিষাসুরমর্দ্দিনীর মূল পূজা হয় জ্যৈষ্ঠ মাসে । প্রচুর ধুমধাম হয় । এর আগে গত জৈষ্ঠ মাসের চার তারিখে পুজোর ঠিক আগের দিন দেবী মূর্তিটির চুরি করে নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা । গ্রামবাসীরা মিলে আশপাশের সমস্ত পুকুর ও মাঠে খোঁজাখুঁজি করেও দেবী মূর্তির কোন সন্ধান পায়নি ৷ ফলে ছবিতে পূজো করতে বাধ্য হয় গ্রামবাসী । এরপর পুজোর পরের দিন ফাঁকা মাঠে চুরি করে নিয়ে যাওয়া দেবী মূর্তিটি ফেলে রেখে পালায় দুষ্কৃতীরা ।
জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো আজ সকালেও দেবীর নিত্যসেবার সেবার পুজো করতে গিয়েছিলেন মন্দিরের পুরোহিত আশীষ চক্রবর্তী । কিন্তু তিনি দেখেন যে মন্দিরের একাধিক গেটের তালা ভাঙ্গা । মূল মন্দিরের দরজার তালা ভেঙেছে দুষ্কৃতীরা । মন্দিরের ভিতরে রাখা দেবীর নিত্যসেবার জন্য ব্যবহৃত কাঁসা পিতলের বাসনপত্র ঠিকঠাক থাকলেও সিংহাসনে রাখা দেবী মূর্তিটি উধাও হয়ে গেছে । এরপর তিনি মন্দিরের সেবাইতদের ঘটনার কথাটি জানান । পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে তদন্তে আসে মেমারি থানার পুলিশ ।
তবে শুধু জৈষ্ঠ মাসেই নয়, শারদোৎসবের চারদিন ধরে মহিষাসুরমর্দ্দিনীর পুজো ঘিরে মেতে ওঠে গোটা গ্রাম । মূল মন্দিরের পাশে কয়েক বছর আগে এটি আটচালা নির্মাণ করা হয় । শারদোৎসবের সময় ওই আট চালাতে দেবী মূর্তি কে এনে পুজো করা হয় । এবারেও শারদোৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছিল গ্রামবাসীরা । কিন্তু আজ সকালে দেবী মূর্তি চুরি হয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা গ্রামে । গ্রামবাসীরা বুঝতে পারছেন না যে কেন তাদের গুরু দেবীকে বারবার নিশানা করছে দুষ্কৃতীরা । বিষয়টি নিয়ে গ্রামের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে । অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন গ্রামের মানুষ । পাশাপাশি পুজোর আগে মূর্তিটি উদ্ধার করে দেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তারা ।।