প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৬ জুলাই : রাজ্যপালের সংশাপত্র দেখিয়ে চাকরি দেওয়ার নামে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বেকার ছেলে মেয়েদের সঙ্গে চলছিল কোটি কোটি টাকার প্রতারণা । প্রতারিত এক যুবকের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করলো ওই প্রতারণা চক্রের ৮ সদস্যকে । শুরু হয়েছে প্রতারণা চক্রের মূল পাণ্ডার দেবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের খোঁজ ।তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে এই প্রতারণা চক্রের জাল বহুদূর বিস্তৃত রয়েছে যার সঙ্গে যোগসাজোস রয়েছে রাজনীতিকদেরও ।
পুলিশ জানিয়েছে , ধৃতদের নাম মিহির কুমার দাস,আলি হোসেন,হাসিবুল রহমান ,আবুল বাসদ,রিয়াজুল ইসলাম,ইব্রাহিম শেখ,শ্যামসুল আলম ও মলয় কর্মকার । এই ধৃতদের মধ্যে প্রথম ছয় জন মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দা । বাকিদের মধ্যে শ্যামসুল বীরভূম জেলার নলহাটি থানার গোপালচক ও মলয় কর্মকার হুগলীর সিঙ্গুর থানার জগতনগর এলাকার বাসিন্দা । পুলিশের দাবি ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৭টি মোবাইল ফোন,৩ টি পেনড্রাইভ,৭টি স্ট্যাম্প , অশোকস্তম্ভ দেওয়া বেশ কিছু নথিপত্র ও ফর্ম,কয়েকটি রেজিস্টার খাতা ,১লক্ষ ১০ হাজার ৫০০ টাকা, সংবাদপত্রে দেওয়া বিজ্ঞাপনের কপি এবং একটি দামি চারচাকা গাড়ি । এ ছাড়াও উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের কাছে পাঠানো চিঠি, পথ-সুরক্ষা নিয়ে রাজ্যপালের শংসাপত্রও উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। সেগুলি পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে ।
প্রতারণার একাধিক ধাারায় মামলা রুজু করে পুলিশ মঙ্গলবার ৮ ধৃতকে পেশ করে বর্ধমান আদালতে। প্রতারণা চক্রে জড়িত বাকি পাণ্ডাদের হদিশ পেতে ও তদন্তের প্রয়োজনে তদন্তকারী অফিসার ধৃতদের মধ্যে মিহির দাস ,আবুল বাসার ও মলয় কর্মকারকে ৭ দিন নিজেদের হেপাজতে নিতে চেয়ে এদিন আদালতে আবেদন জানান । সিজেএম ৩ ধৃতের ৫ দিনের পুলিশি হেপাজত ও বাকিদের জেল হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন প্রতারিত চাকরি প্রার্থীরা ।
‘পথ সুরক্ষা’র’ প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রায় তিন হাজার বেকার যুবক -যুবতীয় কাছে একটি সংস্থার নাম করে প্রাতারকরা কয়েক কোটি টাকা তুলেছে বলে অভিযোগ।মঙ্গলবার জেলার মেমারির পালসিটের একটি ধাবাতে প্রশিক্ষণ নেওয়া কর্মপ্রার্থীদের ‘শপথ পত্রে’ সই করাতে আসে প্রতারক দলটি ।মেমারির কানাইডাঙা নিবাসী সেখ মইনুল হাসান নামে এক প্রতারিত যুবক প্রতারকদের বিষয়ে ওইদিনই মেমারি
থানায় অভিযোগ জানান । এরপরেই মেমারি থানায় ওসি দেবাশিষ নাগের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী রাতে ওই ধাবায় হানা দিয়ে ৮ প্রতারককে গ্রেপ্তার করে । পুলিশের দাবি, ’শপথ পত্রে’ সই করানোর নামে ’৩ হাজার’ টাকা করে বেকারদের কাছ থেকে তোলা হচ্ছে ,এমন অভিযোগ পেয়েই পুলিশ ধাবায় হানা দিয়ে চক্রটিকে ধরে । মেমারি থানার পুলিশ জানিয়েছে ,পালশিটের ওই ধাবায় হাজির হয়েছিলেন ৩৩ জন কর্মপ্রার্থী। তাঁরা মূলত পূর্ব বর্ধমান ,পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, হুগলি জেলার বাসিন্দা ।তাঁদের মধ্যে মেমারির কানাইডাঙার মইনুল হাসান সহ ২০ জন পুলিশকে প্রতারণার কথা জানান । মইনুল হাসানের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মামলা রুজু করেছে।
যুবক মইনুল হাসান পুলিশকে অভিযোগে জানিয়েছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে শক্তিগড়ের সামন্তী গ্রাম নিবাসী ধনঞ্জয় মাঝির মাধ্যমে তাঁর মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের মিহির কুমার দাসের পরিচয় হয়। ওই ব্যক্তির সঙ্গেই তারকেশ্বরের মহেশপুরের বিনয় কুমার মালিকের কাছে গিয়ে তিনি কেন্দ্র সরকারের চাকরির আশায় ৫৫ হাজার টাকা দেন। তাঁদের গ্রামের শেখ গোলাম মহম্মদ ছাড়াও আরও কোন কোন কর্মপ্রার্থী কত টাকা চাকরির জন্য দিয়েছে তাও তিনি পুলিশকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। ওই যুবক জানিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে এই ‘চক্র’টি চলছে।দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে-সহ রাজ্যের অন্য লেনে পথ নিরাপত্তার কাজে তাঁদের নিয়োগ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল । কেন্দ্র সরকারের তরফে এই চাকরি দেওয়া হবে বলে জানিয়ে কর্মপ্রার্থীদের কাছে আবেদন নেওয়া হয়। তারপর ৬০ হাজার থেকে ‘সাড়ে চারলক্ষ’ টাকা ধাপে ধাপে কর্মপ্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় । এরপর কলকাতার কসবার কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁদের শারীরীক পরীক্ষা করানো হয়। তাঁদের বারাসাতে তিনদিনের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। যদিও ধৃতরা দাবি করেছে,চাকরি দেওয়ার নাম করে নয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার নামে ২৫ হাজার টাকা করে তাঁরা নিয়েছেন ।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহ রায় জানিয়েছেন, ‘ধৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, তাঁদের হেড অফিস কলকাতার নিমতা থানার বিরাটিতে। জনৈক দেবকুমার চট্টোপাধ্যায় হচ্ছেন ওই সংস্থার প্রধান। ধৃতদের হেপাজতে নিয়ে প্রতারণার সবিস্তার খতিয়ে দেখা হচ্ছে । গোটা চক্রটিকে ধরার চেষ্টা চলছে ।’।