এইদিন ওয়েবডেস্ক,বেঙ্গালুরু,১৩ সেপ্টেম্বর : গণেশ মূর্তির বিসর্জনের শোভাযাত্রা চলাকালীন মুসলিমদের হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে মান্ডিয়া জেলার নাগামঙ্গলা শহরে টাউন হলের সামনে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করা প্রায় ৪০ জনকে আজ শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে । ব্যাঙ্গালোর মহানগর গণেশ উৎসব সমিতি শহরের পক্ষ থেকে, শহরের টাউন হলের কাছে একটি বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছিল, পুলিশ এই বিক্ষোভের অনুমতি প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং ডিসিপি শেখরের নেতৃত্বে সেই জায়গায় একটি ভারী পুলিশ উপস্থিতির ব্যবস্থা করা হয়েছিল ।কেউ কেউ গণেশ মূর্তি হাতে নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং যারা নাগামঙ্গলা শহরে দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে, যানবাহনে আগুন ধরিয়েছে এবং শোভাযাত্রায় পাথর ছুঁড়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়। এছাড়াও,নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও গ্রেপ্তার করা হিন্দুদের মুক্তির দাবি জানানো হয় । যদিও ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে । শেষ পর্যন্ত মোট ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ । এদিকে বিক্ষোভ প্রদর্শনে আসা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্য রত্নাকর ভাট পুলিশের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন,আমি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্য, আমি পেশায় একজন আইনজীবী। গেরুয়া উত্তরীয় পরার কারণে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । গেরুয়া উত্তরীয় পরা কি অন্যায়? তিনি বলেন, বেঙ্গালুরু গণেশ উৎসব সমিতির টাউন হলে বিক্ষোভ মিটিং ছিল, তাই আমি প্রতিবাদ করতে নয় মিটিং দেখতে এসেছি।
আসলে কর্ণাটকের মান্ডা জেলার নাগামঙ্গলা এলাকার বদরিকোপ্পালু গ্রামের যুবকরা গত ১১ সেপ্টেম্বর গণেশ মূর্তি বিসর্জনের শোভাযাত্রা করছিল। শোভাযাত্রা একটি মসজিদের কাছে রাস্তা পার হতে শুরু করার সাথে সাথেই মহীশূর রোডের মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের সাথে উত্তপ্ত তর্ক শুরু করে। তারই মাঝে দুর্বৃত্তরা শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন অস্ত্র দেখিয়ে ভীতি প্রদর্শনও করা হয় । এ হামলায় কয়েকজন পুলিশসহ অনেকে আহত হয়েছেন। দুর্বৃত্তরা কয়েকটি দোকান ভাংচুর ও মালপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ২৫টি দোকানে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ।
এদিকে ওই ঘটনায় কর্তব্যে গাফেলতির অভিযোগে একজন পুলিশ পরিদর্শককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।পুলিশ ইন্সপেক্টর অশোক কুমার গত বছর গণেশ চতুর্থীর সময় একই ধরনের দাঙ্গার ঘটনা সম্পর্কে তার ঊর্ধ্বতনদের জানাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এবারও অশোক কুমার পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। পুলিশ আজ শুক্রবার ১০ টি এফআইআর নথিভুক্ত করেছে৷ এখনও পর্যন্ত, ঘটনার সাথে জড়িত ৫৭ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এবং অন্য ৯০ জনকে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। একই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
মান্ডিয়ার এসপি মল্লিকার্জুন বালাদান্ডি জানিয়েছেন, মাণ্ডিয়ার বাদারিকোপ্পালু গ্রামের মসজিদের পাশের জায়গাটি একটি স্পর্শকাতর এলাকা। সেখানে আরও নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা যেত। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সহিংসতা ও দাঙ্গার অভিযোগে ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিএনএসএস-এর ১৬,১০৯,১১৫,১১৮,১২১,১৩২,১৮৯ এবং ১৯০ ধারার অধীনে এফ আই আর নথিভুক্ত করা হয়েছে৷ পুলিশ অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করছে এবং তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে। একইভাবে শুক্রবারও চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে গ্রেফতারকৃত ৫২ আসামিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আদালতে হাজির করা হয়। মান্ডিয়া জেলা আদালত তাদের ১৪ দিনের জন্য বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে।।