সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠছে । আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসক ‘তিলোত্তমা’র নৃশংস বর্বরোচিত ধর্ষণ হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশকে অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে । এছাড়া ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে শাসকদল ! মনিপুরেও দীর্ঘ দিন ধরে জাতিদাঙ্গা চলছে । যেকারণে বিভিন্ন মহল থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও মনিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন লাগু করার জোরদার দাবিও তোলা হচ্ছে । এই বিষয়ে অনেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ পর্যন্ত করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । কিন্তু আসলে সংবিধানের ৩৫২ (জরুরী) বা ৩৫৬ ধারা (রাজ্য সরকার বরখাস্ত) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত-পা বেঁধে দিয়েছে ।
অতীতের ঘটনার দিকে নজর দিলে দেখা যাবে যে ২০০৪ সালের জুন মাসে গুজরাটের আহমেদাবাদের সাবসিডিয়ারি ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (SIB) এর সদস্যরা ইশরাত জাহানসহ চারজনকে গুলি করে হত্যা করে । পরে আহমেদাবাদ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রায় দেন যে এটা ‘ভুয়া এনকাউন্টার’ মামলা । তিস্তা সেটালভাদের মত কিছু কংগ্রেস সমর্থক বামপন্থী বিচারধারার মানুষ তখন গুজরাটে রাষ্ট্রপতি শাসনের জোরদার দাবি তোলে । কারণ সোনিয়া ও তার সমর্থকরা বিশ্বাস করতেন ইশরাত ও সোহরাবুদ্দিন নির্দোষ ছিলেন । কিন্তু তারপরেও সোনিয়া গান্ধীর ইশারায় চলা তৎকালীন কংগ্রেস সরকার গুজরাটের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে বরখাস্ত করতে সক্ষম হয়নি । কারন সংবিধানের ৩৫২ বা ৩৫৬ ধারা ।
কার্যত ১৯৯৪ সালের পর কোনো প্রদেশেই এই ধারা লাগু করা হয়নি । কারণ হল যে সুপ্রিম কোর্ট ১৯৯৪ সালের বোমাই রায়ের মাধ্যমে একটি রাজ্যে ৩৫৬ ধারা কার্যকর করার জন্য একটি খুব উচ্চ বাধা নির্ধারণ করেছে। রায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে আইন -শৃঙ্খলার সমস্যা সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার সমতুল্য নয় । দাঙ্গা, বিক্ষোভ বা অপরাধমূলক কার্যকলাপ বা অন্যান্য বিশৃঙ্খলা রাজ্যের সাংবিধানিক কাঠামোর সম্পূর্ণ ভাঙ্গন বোঝায় না। ৩৫৭ অনুচ্ছেদ কার্যকর করার জন্য, রাজ্যের সাংবিধানিক যন্ত্রপাতি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে। সাংবিধানিক যন্ত্রের ভাঙ্গনের মধ্যে রয়েছে এমন পরিস্থিতি যেখানে রাষ্ট্র পরিচালনা পঙ্গু হয়ে গেছে এবং সরকার একটি অসাংবিধানিক পদ্ধতিতে কাজ করছে বা সংবিধানের মৌলিক নীতিগুলি বজায় রাখতে ব্যর্থতা, যেমন একটি সমাবেশ আহ্বান করতে ব্যর্থ হওয়া বা বিচারিক সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে অস্বীকার করা বা দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে এমন রাজ্য সরকারের কোনো কাজ (অর্থাৎ পৃথক জাতি ঘোষণা)।
আদালত বলেছিল যে আইনশৃঙ্খলা সমস্যাগুলি পরিচালনা করা সাধারণত রাজ্য সরকারের ক্ষমতার মধ্যে থাকে। রাজ্য সরকার যদি অন্যথায় সাংবিধানিকভাবে কাজ করে এবং শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে তবে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার কোন যুক্তি নেই। আইনশৃঙ্খলার সমস্যাগুলি, এমনকি গুরুতর হলেও,৩৫৬ ধারার অধীনে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করাকে সমর্থন করে না।
তাই প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় আর ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করা যাবে না। আদালত কয়েক ঘন্টার মধ্যে এটি বাতিল করবে। আগেও এমন ঘটনা শোনা গেছে। রাজীব এবং ইন্দিরা ৩৫৬ ধারাটি বহুবার আহ্বান করেছিলেন কারণ তখন কোনও বোমাই রায় ছিল না। তার ৩৫৬ অনুচ্ছেদের অপব্যবহার ছিল একটি প্রধান কারণ যার কারণে সুপ্রিম কোর্টকে ৩৫৬ ধারার বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিতে হয়েছিল। ৩৫২ ধারা (জরুরী অবস্থা) আরোপ করার ক্ষেত্রে, ইন্দিরার জরুরী অবস্থার পরে, মোরারজি সরকার “অভ্যন্তরীণ গোলযোগ” শব্দবন্ধটি সরিয়ে দিয়ে “সশস্ত্র বিদ্রোহ” বাক্যাংশটি সন্নিবেশ করে সংবিধান সংশোধন করে। অর্থাৎ এখন ভারতে বা যেকোনো রাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করা যেতে পারে তখনই যখন বাইরের আক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র বিদ্রোহ হয়। অধিকন্তু, রাজ্য সরকার অনুরোধ না করলে কেন্দ্র কোনও রাজ্যে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী পাঠাতে পারে না ।।