এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১০ সেপ্টেম্বর : ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার প্রতি কি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলছেন ? আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসক ‘তিলোত্তমা’ বা ‘অভয়া’কে ধর্ষণ বা গনধর্ষণের পর নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড মামলায় এই প্রশ্ন ফের একবার উঠে এসেছে । গত ৯ আগস্ট হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে ‘তিলোত্তমা’ বা ‘অভয়া’র নগ্ন ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধারের পর থেকে ন্যায় বিচারের দাবিতে ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা । কিন্তু এখনো ন্যায় বিচার অধরা । এদিকে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানিতে আন্দোলনকারী চিকিৎসকের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় । সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫ টা । কিন্তু ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন(আই এম এ) এর পশ্চিমবঙ্গ শাখা সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া ও সর্বোচ্চ আদালতের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে আন্দোলন যেমন চলছে তেমনই চলবে । ‘অভয়া’র ন্যায় বিচার না হওয়া পর্যন্ত সংগঠন ভবিষ্যতের সমস্ত আন্দোলনে জুনিয়র ডাক্তারদের নিঃশর্তভাবে পাশে দাঁড়াবে । শুধু তাইই নয়,আএমএ বলেছে,’আদালত এবং সিবিআই-এর কার্যক্রমে আমরা সম্পূর্ণভাবে হতাশ। আমাদের সহকর্মীকে ন্যায়বিচার দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্রুত বিচারের জন্য কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি ।’ এটা সম্পূর্ণ ভারতীয় বিচার ব্যবস্থা ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলের উপর অনাস্থা । যা এক কথায় নজিরবিহীন
এদিকে সংগঠনকে পাশে পেয়ে কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ রাষ্ট্র পরিচালিত মেডিকেল কলেজগুলিতে কর্মরত চিকিৎসকরাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তারা তাদের কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন । শুধু তাইই নয়,আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিবাদী ডাক্তাররা বলেছেন যে হাসপাতাল প্রাঙ্গনে CRPF কর্মীদের উপস্থিতি সত্ত্বেও তারা নিরাপদ বোধ করছেন না ।
দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে জানা গেছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডাক্তার বলেছেন যে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পর একটা ভয় আমাদের তাড়িত করে বেড়াচ্ছে । যেহেতু অনেক অপরাধী এখনও মুক্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমরা আশঙ্কা করছি যে তারা যে কোনও সময় আমাদের আক্রমণ করতে পারে । আর এক চিকিৎসক বলেছেন,আমরা নিরাপদ নই। আমাদের নিরাপত্তা না পেলে আমরা কাজে যোগ দিতে পারব না। আরজি করে নির্যাতিতার ন্যায়বিচারের জন্য আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে একটি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে জুনিয়র ডাক্তারদের তাদের দায়িত্বে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান । সুপ্রিম কোর্টের চিকিৎসকদের কর্মবিরতি শেষ করে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশের পর মুখ্যমন্ত্রীকে খুশি দেখায় । কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনের অব্যবহিত পরেই ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন(আই এম এ) এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রেস রিলিজ সামনে আসে ।
সুপ্রিম কোর্টে, রাজ্য সরকারের আইনজীবী একটি রিপোর্ট দিয়েছেন যে জুনিয়র ডাক্তাররা বিক্ষোভ শুরু করার পরে গত এক মাসে রাষ্ট্র পরিচালিত হাসপাতালে ২৩ জন মারা গেছে। যদিও আইএমএ বলেছে, ‘হাসপাতালগুলিতে অল্প কিছু মৃত্যুর জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের যেভাবে দায়ী হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছিল তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের কারণে কোনও হাসপাতালে পরিষেবা যে সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে তা খুব মর্মান্তিক ।’জুনিয়র চিকিৎকরাও দাবি করেছেন যে রাজ্য সরকার তাদের বিক্ষোভকে যেকোনো উপায়ে ভেঙে দিতে চায়, তাই তারা তাদের দায়িত্বে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী । তবে তারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে চিকিৎসকরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে অনড় । এই ধর্ষণ খুন মামলায় কোন বড় পরিবর্তন না দেখা পর্যন্ত তারা প্রতিবাদ চালিয়ে যাবেন ।।