এইদিন ওয়েবডেস্ক,সিমলা,০৮ সেপ্টেম্বর : হিমাচল প্রদেশের রাজধানী তথা হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি শান্ত পাহাড়ি শহর, সিমলার সরকারি জায়গায় নির্মিত একটা অবৈধ মসজিদের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে রাজ্যের শাসকদল কংগ্রেস এবং প্রধান বিরোধী দল বিজেপি । সিমলা জেলার সানজাউলি মহকুমার পাঁচ তলা বিশিষ্ট মসজিদটিকে কেন্দ্র করে ঝামেলায় কংগ্রেস-বিজেপির প্রতিপক্ষ এখন হিমাচল প্রদেশ ওয়াকফ বোর্ড । ওই কাঠামোটি স্থানীয় এবং রাজনৈতিক আলোচনায় স্থান করে নিয়েছে । গত মাসে এনিয়ে ঝামেলা শুরু হওয়ার পরে মসজিদটি বেআইনি বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। শনিবার, সিমলা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন কমিশনারের আদালত মসজিদটিকে একটি অবৈধ কাঠামো বলে অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করে এবং শুনানির পরবর্তী তারিখ ৫ অক্টোবর ধার্য করে।
নাগরিক সংস্থার পক্ষে উপস্থিত হয়ে রাহুল শর্মা শুনানির পরে মিডিয়াকে বলেছিলেন,’এটি বেআইনি নির্মাণের মামলা। ওয়াকফ বোর্ডকে এতে একটি পক্ষ করা হয়েছে তাই আমরা উত্তর চেয়েছিলাম। তারা তাদের উত্তর জমা দিয়েছে।’ জানা গেছে, ওয়াকফ বোর্ড একটি উত্তর দাখিল করে দাবি করেছে যে মসজিদটি যে জমিতে দাঁড়িয়েছে সেটি তার মালিকানাধীন এবং বর্ধিত নির্মাণ নিয়ম মেনেই করা হয়েছিল। কিন্তু ওয়াকফ বোর্ড তার দাবি প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
মসজিদটি ঘিরে সর্বশেষ উত্তেজনাটি হয় ৩০ আগস্ট। সিমলা নির্বাচনী এলাকা-সংলগ্ন কাসুম্পতি বিধানসভার মালয়ানার ৩৭ বছর বয়সী একজন পুরুষ এবং যশপাল সিং নামে এক ব্যক্তির একটা জায়গা নিয়ে বিবাদের সূচনা হয় । এরপরে গুলনাওয়াজ (৩২), সারিক (২০), সাইফ আলী (২৩), রোহিত (২৩), রিহান (১৭) এবং সামির (১৭) এবং রিহানের বিরুদ্ধে পুলিশ একটি মামলা দায়ের করে । রিহান দেরাদুনের এবং বাকিরা ইউপির মুজাফফরনগরের বাসিন্দা । আগে থেকেই মুজাফফরনগর থেকে মুসলিমদের এনে হিমালয় পাদদেশের ছোট্ট শহর সিমলায় জনবিন্যাস পরিবর্তন ঘটানোকে ঘিরে তোলপাড় চলছে । ফলে এখন মদজিদ বিবাদ নতুন মাত্রা যোগ করেছে ।
পয়লা সেপ্টেম্বর, যশপাল, কাসুম্পতি বিধানসভা বিভাগের ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলরদের সাথে, বিজেপি কর্মী এবং সানজাউলির বাসিন্দারা ‘অবৈধ’ কাঠামো এবং এর দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে মসজিদের বাইরে জড়ো হন। তারা প্রশাসনের কাছে অবৈধ মসজিদ ভেঙে ফেলা এবং মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। সিমলার জেলা প্রশাসক অনুপম কাশ্যপ তাদের পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন, যিনি কাঠামোর বৈধতা সম্পর্কে নাগরিক সংস্থার কাছে একটি প্রতিবেদনও চেয়েছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার আরেকটি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, যার পরে বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে দুই দিনের আল্টিমেটাম জারি করে।
একজন প্রতিবাদকারী রাজু ঠাকুর বলেছেন,’যদি একজন সাধারণ মানুষ একটি ছোট ‘ধাবা’ তৈরি করে, তবে পৌর কর্পোরেশন তা ভেঙে ফেলতে সময় নেয় না। এখানে একটি মহকুমার মাঝখানে একটা চার তলা মসজিদ গড়ে উঠেছে ।’
যদিও বিজেপি এবং কংগ্রেস বেআইনিভাবে মসজিদটি নির্মাণের অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে, নাগরিক সংস্থার সূত্রগুলি বলেছে যে বর্ধিত কাঠামোটি ধারাবাহিক সরকারের অধীনে গত দশকে এসেছিল।
বিগত ১৪ বছরে, যেহেতু মসজিদটি অবৈধ বলে অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল, তাই কাঠামোতে চারটি নতুন ফ্লোর যুক্ত করা হয়েছিল, সূত্র জানায়, বিষয়টি পৌর কর্পোরেশন ৪৪ বার শুনানি করেছে কোনো ফলাফল ছাড়াই।
প্রশ্নে থাকা মসজিদের মৌলবী শাহজাদ ইমাম দাবি করেছেন যে কাঠামোটি ১৯৪৭ সালের এবং ২০০৭ সালের পরে বর্ধিত নির্মাণ করা হয়েছিল।
হিমাচল প্রদেশ ওয়াকফ বোর্ডের রাজ্য আধিকারিক কুতুবুদ্দিন আহমেদ যোগ করেছেন,’কিছু বহিরাগত এই বিল্ডিংটি দখল করেছিল, কিছু মেঝে তুলেছিল। এখন আমরা মসজিদ খালি করেছি এবং পৌর কর্পোরেশন আদালতে মামলা লড়ছি।’
চপালের বিজেপি বিধায়ক বলবীর ভার্মা ৪ সেপ্টেম্বর বিধানসভায় বিষয়টি উত্থাপন করার পরে বিষয়টি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেয়।সেই আলোচনায় অংশ নিয়ে কাসুম্পতির কংগ্রেস বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অনিরুধ সিং বলেছিলেন যে রাজ্য সরকারের মালিকানাধীন জমিতে মসজিদটি বেআইনিভাবে নির্মিত হয়েছিল। তারা যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই কাঠামো নির্মাণ শুরু করেছে। প্রথমে এক তলা তৈরি করা হয়, তারপর বাকি তলা তৈরি করা হয় । যারা মসজিদ তৈরি করেছেন এবং সেখানে বসবাস চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভ্যাস আছে।’ তিনি বলেছিলেন,মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন আদালতে অননুমোদিত নির্মাণের মামলা চলমান রয়েছে এবং এই সময়ের মধ্যে চারটি অতিরিক্ত ফ্লোর নির্মান হয়েছে। এই পুরো বিষয়টির তদন্ত হওয়া উচিত ।
মন্ত্রী মসজিদে বসবাসকারীদের যাচাই-বাছাই করারও আহ্বান জানান। তিনি অভিযোগ করেছেন যে ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ অনুপ্রবেশের কারণে সিমলার কিছু অংশে উত্তেজনা রয়েছে, যাদের তিনি রোহিঙ্গা হতে পারে বলে সন্দেহ করেছেন। তিনি বলেন, রাজ্যে এসব কি হচ্ছে? যাচাই-বাছাই ছাড়াই নতুন লোক আসছে। বাংলাদেশের জামাত-ই-ইসলামির লোকজন আসছে। তারা কি রোহিঙ্গা? আমি বাংলাদেশ থেকে আসা দু-একজনকে চিনি ।
কংগ্রেস মন্ত্রীর বিবৃতিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে, AIMIM সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়াইসিএক্স-এ লিখেছেন, হিমাচলের ‘মোহাব্বত কি দুকান’-এ কেবল ঘৃণা আছে! এই ভিডিওতে হিমাচলের মন্ত্রী বিজেপির ভাষায় কথা বলছেন।’ নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বিক্রমাদিত্য সিং এআইএমআইএম প্রধানকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং বিষয়টিকে রাজনৈতিক না করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ঘটনায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।বিক্রমাদিত্য বলেছেন, এটি শহর পরিকল্পনা আইন লঙ্ঘনের একটি মামলা এবং এটিকে একটি রাজনৈতিক এবং সাম্প্রদায়িক রঙ দেওয়া একটি অপরাধমূলক কাজ ।
জানা গেছে,বিগত ১৪ বছরে,সরকারি জায়গায় নির্মিত মসজিদটি অবৈধ বলে অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল, তারপরেও কাঠামোতে চারটি নতুন ফ্লোর যুক্ত করা হয়েছিল । বিষয়টি পৌর কর্পোরেশন ৪৪ বার শুনানি করেছে । কিন্তু কোনো ফলাফল সামনে আসেনি। প্রশ্নে থাকা মসজিদের মৌলবী শাহজাদ ইমাম দাবি করেছেন যে কাঠামোটি ১৯৪৭ সালের এবং ২০০৭ সালের পরে বর্ধিত নির্মাণ করা হয়েছিল। এদিকে শনিবার মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন থেকে কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশ না থাকায়, স্থানীয় গোষ্ঠীগুলি আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ফের সানজাউলিতে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ।।