এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,০৮ সেপ্টেম্বর : একদিকে ভারত সরকার দেশে অবৈধভাবে বসতি স্থাপনকারী ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী মুসলমানকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে প্রতিমাসে দুই শতাধিক রোহিঙ্গাকে ভারতে নিয়ে আসা হচ্ছে। এরপর এই রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভুয়া পরিচয় দিয়ে দেশের ১৪টি রাজ্যে বসতি স্থাপন করা হচ্ছে- আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মেঘালয়, জম্মু ও কাশ্মীর, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, গুজরাট এবং কেরালা। এ সব কাজ করছে একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্র।
সম্প্রতি এই মানব পাচারকারী চক্রের মূল হোতা জলিল মিয়াকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ । জিজ্ঞাসাবাদে সে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। এনআইএ জলিলকে তার দলের অন্য সন্দেহভাজনদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ।
জলিল মিয়া ত্রিপুরার বাসিন্দা। এনআইএ তার বিরুদ্ধে ১ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। জলিল মিয়া গ্যাং লিডার জীবন রুদ্র পাল ওরফে সুমনের অংশীদার, যাকে আগে এনআইএ গ্রেপ্তার করেছিল। জলিল মিয়ার সহযোগী জজ মিয়া ও শান্ত এখনো পলাতক। এনআইএ তাদের সন্ধানে তল্লাশি চালাচ্ছে । এরা সবাই ত্রিপুরা থেকে মানব পাচারকারী চক্র পরিচালনা করত। জলিল এর আগে গত বছরের ৮ নভেম্বর এনআইএ তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করেছিল । কিন্তু সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এর পরে এনআইএ তার গ্যাংয়ের ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করে। তদন্তে জানা গেছে যে বাংলাদেশে উপস্থিত এই চক্রের সদস্যরা ভারতে বসতি স্থাপন করতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গা মুসলমানদের সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকিয়ে দেওয়া এবং তাদের ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরি করে দেওয়ার জন্য ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা (১৪ থেকে ২৮ লাখ বাংলাদেশী টাকা) প্যাকেজ চালু করেছিল ।
এভাবে ওই আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্র প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ জন রোহিঙ্গাকে ভূগর্ভস্থ টানেল দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করাতো বলে জেরায় জানতে পেরেছে তদন্তকারীরা ৷ এ জন্য বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী আসাম, মিজোরাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্যে ভূগর্ভস্থ টানেল তৈরি করা হয়েছে। অনুপ্রবেশের মাধ্যমে ভারতে আসার পর অনুপ্রবেশকারীদের চেহারা পাল্টে ফেলতো,যাতে কেউ তাদের সন্দেহ করতে না পারে। এরপর কিছু দিন অজ্ঞাত স্থানে রাখা হত তাদের । এ সময় অনুপ্রবেশকারীদের ছবি তোলা হয় এবং জাল কাগজপত্র তৈরি করে তাদের দেওয়া হয়।
এনআই সূত্রে জানা গেছে, মানব পাচারকারী চক্রের তদন্তকালে তদন্তকারী সংস্থাগুলিও একটি চমকপ্রদ তথ্য আবিষ্কার করেছে। ভারতে অনুপ্রবেশের আগে বা পরে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের ভারতীয় উচ্চারণে হিন্দি, অসমীয়া ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হত । যাতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীরা ভারতে পৌঁছালে তাদের উচ্চারণ দ্বারা চিহ্নিত করা না যায়। তদুপরি, অনুপ্রবেশকারীর শেখা ভাষা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হত তাদের ভারতের কোন রাজ্যে তাকে অবৈধভাবে পুনর্বাসিত করা যেতে পারে । এভাবে ভারতের জনবিন্যাসের পরিবর্তন ঘটাতে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছিল ওই আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রটি ।।