এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,০৬ সেপ্টেম্বর : ধর্ম নিন্দার মিথ্যা অভিযোগে খুলনায় থানার ভিতরেই উৎসব মণ্ডল নামে একজন হিন্দু কিশোরকে নৃশংস বর্বরোচিত ভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জামাত-ই- ইসলামির সন্ত্রাসীরা । আর ওই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সামনেই । খুনের পর ওই হতভাগ্য হিন্দু কিশোরের রক্তমাখা পোশাক নিয়ে উল্লাসও করে সন্ত্রাসীরা । তাদের মধ্যে আসানুল হক উসামা (Ahsanul Haque Usama) নামে এক সন্ত্রাসবাদী উৎসব মণ্ডলের রক্তমাখা প্যান্টের ছবি গর্বভরে ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছে,’হালাল ব্লাড অফ সাতিম(shatim) ইন খুলনা । আমি গর্বিত বোধ করছি, আলহামদুলিল্লাহ ।’
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ভিসেগ্রাড ২৪ (visegrad 24) জামাতের ওই সন্ত্রাসবাদীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল ও পোস্টের স্ক্রীন শর্ট শেয়ার করে লিখেছে, ‘১৭ বছর বয়সী হিন্দু বালক উৎসব মন্ডলকে আজ বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের দ্বারা পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে যদিও সুরক্ষার জন্য তাকে একটি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ নীচে লিঞ্চিংয়ের অন্যতম সংগঠকের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ছবি দেওয়া হল৷ তরুণ ইসলামপন্থী তালেবানদের অনুসরণ করে গর্বিত । তিনি দাবি করেন যে ভুক্তভোগী নবী মোহাম্মদকে অপমান করেছে। বাংলাদেশ অন্ধকার পথে যাচ্ছে ।’
প্রসঙ্গত,বাংলাদেশের খুলনার উৎসব মণ্ডল নামে ওই কিশোরের বিরুদ্ধে ধর্ম নিন্দার অভিযোগ তোলা হয় । বুধবার রাত পৌনে ৮টার দিকে কিছু শিক্ষার্থী তাকে খুলনার সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় ডেপুটি পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে নিয়ে যায় । জানাজানি হলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জামাত-ই-ইসলামির শত শত সন্ত্রাসী ওই কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে ।
হিন্দু কিশোরকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য তারা পুলিশকে হুমকি দেখায় । খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে । কিন্তু সন্ত্রাসবাদীরা শান্ত হয়নি। রাত পৌনে ১২টার দিকে তারা ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ে ঢুকে উৎসবকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে । খুলনার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) তাজুল ইসলাম জানান, আটক উৎসব মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা এবং তাকে আদালতের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের আশ্বাস দিয়েছিল । কিন্তু বিক্ষুব্ধ লোকজন উৎসবকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশি লেখিকা টুইট করেছেন, ‘গতরাতে খুলনায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সামনে হিন্দু ছাত্র উৎসব মন্ডলকে হত্যা করেছে বাংলাদেশের জেনারেল জিহাদিরা। উত্সব মন্ডল ফেসবুকে মুহাম্মদের সমালোচনা করেছিলেন, তাই পাগল ইসলামিক সন্ত্রাসীরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। উৎসবকে বাঁচাতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী কিছুই করেনি ।’
আসলে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল হিন্দু ধর্মের অবমাননা করাকে কেন্দ্র করে । তার প্রতিবাদ করে ইসলামের নবীকে নিয়ে মন্তব্য করে উৎসব মণ্ডল । ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া গেছে মারুফা রহমান নামে এক বাংলাদেশি ফেসবুক ব্যবহারকারীর পেজে । তিনি লিখেছিলেন, ‘কোনোভাবে একটা দাঙ্গা সৃষ্টির কতরকম পায়তারা হতে পারে। এক সপ্তাহ আগে থেকে ‘তাহমিদ আল মোহতাদ্য’ নামের এক মাদ্রাসা ছাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে কটুক্তি ও ব্যঙ্গ করতে থাকে, উৎসব মন্ডল নামের ছেলেটিকে। উৎসব ২০২৪ এর মাধ্যমিক পরীক্ষা উত্তীর্ণ খুলনা জিলা স্কুলের ছাত্র। তাহমিদ, গোমুত্র – গোবর, পুজা ইত্যাদি প্রসঙ্গ তুলে অরুচীকর ভাষায়…. উত্যক্ত করতে থাকে উৎসবকে। উৎসবও যুক্তিবিদ্যার ভাষায় প্রতিমন্তব্য করতে থাকে। তারপর, তাহমিদ তার নিজের লেখা সনাতন ধর্মকে বিদ্রূপ করা বাক্যগুলো মুছে দেয়। শুধুমাত্র: উৎসবের লেখা বাক্যগুলো মাদ্রাসায় প্রচার করতে থাকে। সর্বশেষ যে বাক্যটির অজুহাতে হত্যাকারীরা বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে যায় সে বাক্যটি লেখা প্রোফাইল ও মন্তব্য উৎসবের নিজের লেখা কিনা সন্দেহ আছে। সন্ধ্যার পর বাবা-মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া বাচ্চাটার, দু’চোখে আঙুল ঢুকিয়ে মাদ্রাসা ছাত্ররা রক্তাক্ত করে। ‘তাহমিদ আল মোহতাদা কে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরী।জামাত -শিবির উৎসব’ ছেলেটার আয়ুর দায়িত্ব নিয়েছে। আওয়ামী-ছাত্রলীগ ‘বিশ্বজিৎ এর দায়িত্ব নিয়েছিলো। আপনারা কোন দল’ আর কার কার আয়ু ফুরোনোর কর্তব্য পালনে আগ্রহী। হাত তোলেন ।’।