এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৫ সেপ্টেম্বর : আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসক ‘তিলোত্তমা’কে ধর্ষণ বা গনধর্ষণের পর নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নাড়িয়ে দিয়েছে প্রতিটি সংবেদনশীল মানুষকে । চিকিৎসক, শিক্ষক- শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি স্তরের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ ‘তিলোত্তমা’র ন্যায়বিচারের দাবিতে গনতান্ত্রিকভাবে যে যার মত করে আওয়াজ তুলছেন । বলিউডের প্রখ্যাত গায়ক অরিজিৎ সিং একটি মর্মস্পর্শী গান গেয়ে সেই দাবিকে আরও জোরালো করেছেন । তিনি ‘তিলোত্তমা’কে ‘বিপ্লবী’ বলে অবিহিত করে আশা প্রকাশ করেন যে তার এই ‘বলিদান ব্যর্থ যাবে না’ ।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি গায়কের সেই আশা পূরণের সঙ্কেত দিচ্ছে না । কারন গত ৮-৯ আগস্ট আরজি করের সেমিনার হলে ‘তিলোত্তমা’র নগ্ন ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধারের পর একজন সিভিক ভলান্টিয়ার ছাড়া এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি । এদিকে মামলাটি কলকাতা হাইকোর্টে স্বাভাবিক ছন্দে এগিয়ে যাচ্ছিল । কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে আরজি কর ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডের মামলা নিজের হাতে তুলে নিয়ে ছন্দপতন ঘটিয়ে দিয়েছে । সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় চিকিৎসকদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, ‘আমাদের উপর ভরসা করতে পারেন । আপনারা কাজে ফিরে যান ।’ কিন্তু বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতার কথা ভেবে চিকিৎসকরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেননি । আর তাদের সেই আশঙ্কাই সত্যি হল ।
আজ বৃহস্পতিবার(৫ সেপ্টেম্বর) আরজি করের ধর্ষণ-হত্যাকান্ডের শুনানি ছিল প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে । সিবিআই-এর তদন্তের স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা । কিন্তু বুধবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে প্রধানমন্ত্রী বিচারপতি বৃহস্পতিবার আদালতে উপস্থিত থাকছেন না । তিনি নাকি অসুস্থ ! এই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ পর্যন্ত বলা হয়নি এখনো পর্যন্ত । সুপ্রিম কোর্টের এই বিজ্ঞপ্তির পর হতাশ হয়ে পড়েছেন ‘তিলোত্তমা’র ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় থাকা আন্দোলনকারীরা । প্রশ্ন উঠছে যে একজন সন্ত্রাসীকে বাঁচাতে যদি মধ্য রাতে সুপ্রিম কোর্ট খুলে সওয়াল জবাব হয় তাহলে আরজি করের ধর্ষণ খুনের মত ন্যাক্কারজনক ঘটনার শুনানিতে বিলম্ব কেন ?
আসলে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ভোর ৩ টের সময় সুপ্রিম কোর্ট খুলে একটা মামলার সওয়াল জবাব হয় । সেই মামলা ছিল সন্ত্রাসবাদী মুম্বাই বিস্ফোরণের মাস্টারমাইন্ড ইয়াকুব মেননকে নিয়ে । সুপ্রিম কোর্টের চার নম্বর এজলাসে সেই মামলার শুনানি করে তৎকালীন বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি পি সি পন্থ ও বিচারপতি অমিতাভ রায়ের বেঞ্চ । আগের দিন ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি স্থগিতের আর্জি খারিজ করে দিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতি । তাই ওই সন্ত্রাসীর ফাঁসি আটকাতে ভোর রাতে সওয়াল জবাব করে নজির গড়েছিল সুপ্রিম কোর্ট । অবশ্য শেষ পর্যন্ত ইয়াকুবের ফাঁসি আটকায়নি । ওইদিনই ভোর সাড়ে ৬টায় ফাঁসি হয় তার ৷ ইয়াকুব ছিল মুম্বই বিস্ফোরণের অন্যতম প্রধান ষড়যন্ত্রী । সঙ্গত কারনেই প্রশ্ন উঠছে,এমন এক সন্ত্রাসীকে বাঁচাতে যদি মধ্য রাতে আদালতে শুনানি হতে পারে তাহলে আরজি করের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় ক্ষেত্রে কেন ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে দেওয়া হল ? শেষ পর্যন্ত ‘ভ্রষ্ট সিস্টেমের’ চক্রে পড়ে ব্যর্থ যাবে না তো ‘বিপ্লবী তিলোত্তমার বলিদান ? এখন এই প্রশ্ন সকল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের মনে ।।