এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৪ আগস্ট : পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘কন্যাশ্রী’, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মত একাধিক প্রকল্প চালু করেছে । ওই সমস্ত প্রকল্পের আওতায় নির্দিষ্ট পরিমান সরকারি অনুদান দেওয়া হয় উপভোক্তাদের । রাজ্যের স্কুল একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির স্কুলপড়ুয়াদের ট্যাব দেওয়ার জন্য এমনই একটা প্রকল্প চালু করা হয়েছিল । নাম দেওয়া হয়েছিল ‘তরুণের স্বপ্ন‘ প্রকল্প । ২০২১ সাল থেকে চালু করা এই প্রকপ্লের আওতায় ফি-বছর পড়ুয়াদের এককালীন ১০ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদান দেওয়ার কথা । চলতি সপ্তাহেই টাকা দেওয়ার কথা ছিল রাজ্য সরকারের। কিন্তু মঙ্গলবার নবান্ন থেকে এই প্রকল্প স্থগিত করা দেওয়া হয়েছে । হঠাৎ কেন সরকার একটা চালু প্রকল্প স্থগিত করল তা নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠছে । প্রশ্ন উঠছে যে সরকারের ভাঁড়ারে টান নাকি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জের ?
রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি যে ভালো নয়, তা কয়েক বছর ধরেই দাবি করে আসছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি । তাই ভাঁড়ারে টান থাকাটা অস্বাভাবিক নয় । কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তার মস্তিষ্ক প্রসূত প্রকল্পগুলি এতদিন চালিয়ে আসছিলেন । এটাও শোনা যাচ্ছে যে ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে টাকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে রাজ্যের সব ট্রেজারিতে টাকা পাঠানোর কাজও সেরে ফেলে স্কুল শিক্ষা দফতর । আগামী ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই এই টাকা দেওয়া শুরু করার কথা ছিল । কিন্তু ‘প্রশাসনিক’ কারণ দেখিয়ে মঙ্গলবার আচমকা নবান্ন থেকে প্রকল্পটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে । যদিও প্রশাসনিক কারনটা কি তা এখনো স্পষ্ট নয় । তাহলে কি পড়ুয়াদের জন্য এই প্রকল্প স্থগিতের পিছনে কাজ করছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ?
আসলে আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসকের ধর্ষণ বা গনধর্ষণের পর নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষোভে ফুঁসছে রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা । ‘তিলোত্তমা’র ন্যায় বিচারের দাবিতে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও বিক্ষোভ মিছিল করছে পড়ুয়ারা । জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তর থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নিজের রাজ্যেই আরজি করের ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ড ইস্যুতে প্রবল চাপের মধ্যে আছেন । ফলশ্রুতিতে তার কোপ পড়ুয়াদের প্রকল্পের উপর নেমে এসেছে বলে মনে করছেন অনেকে । ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্প স্থগিতের পর ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর উপভোক্তারাও এখন আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন বলে খবর । আর তাদের আশঙ্কার কারন হল আরজি করের তরুনী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার ন্যায়বিচারের দাবিতে মহিলারাও ব্যাপক হারে পথে নামছেন ।
পড়ুয়াদের প্রকল্প স্থগিতের প্রতিক্রিয়ায় বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল বলেছেন, ‘একাদশ-দ্বাদশের পড়ুয়াদের ১০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে না, ট্যাব কিনতে অনুদানের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার নবান্নের!পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষার্থীদের ট্যাবলেট কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রত্যাহার করা আসলে সামাজিক উন্নয়নে মমতা ব্যানার্জির প্রকৃত প্রতিশ্রুতির অভাব প্রকাশ করে। প্রাথমিকভাবে, এই প্রকল্পটি ছাত্রদের উপকৃত করার লক্ষ্যে ছিল, কিন্তু হঠাৎ করে বাতিলের ফলে এটি প্রমাণ করে যে এটি ছাত্র- ছাত্রীদের উপকৃত করার চেয়ে রাজনৈতিক লাভের জন্য বেশি ছিল। জনসমর্থন ম্লান হওয়ার সাথে সাথে, মমতা ব্যানার্জী আপনি এই কৌশলগুলিকে নিচ্ছেন।এর থেকেই প্রমাণ হয় যে ছাত্র- ছাত্রীদের আপনি ভোট জেতার কাজে ব্যবহার করে রাজনৈতিক লাভ হিসাবে ফায়দা নিয়েছিলেন। সমগ্র বাংলার জনগণের কাছে এই স্বৈরাচারী তৃণমূল সরকারের মুখোশ খুলে যাচ্ছে।’।প্রকল্পের উদ্বোধনের পর ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তার ফেসবুক পেজে লিখেছিলেন, ‘বর্ষে-বর্ষে দলে-দলে আসে বিদ্যামঠতলে,চলে যায় তারা কলরবে/কৈশোরের কিশলয় পর্ণে পরিণত হয়/যৌবনের শ্যামল গৌরবে।’ ছাত্রছাত্রীরা আমাদের গর্ব, ভবিষ্যতের আলোকবর্তিকা। তাদের সাফল্য গৌরবান্বিত করে এই রাজ্য, দেশ তথা সমগ্র সমাজকে। তারাই এগিয়ে নিয়ে যায় যেকোনও জাতিকে। ছাত্রছাত্রীদের আকাশছোঁয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সর্বদা রয়েছে তাদের পাশে। ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে ‘স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ’, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’, ‘তরুণের স্বপ্ন’ ‘ঐক্যশ্রী’, ‘কন্যাশ্রী’ সহ আরও নানা প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এছাড়াও তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে সঠিক দিশা দেখাতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে চালু করা হবে ‘কেরিয়ার গাইডেন্স’ পোর্টাল। আজ নবান্ন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিভিন্ন বোর্ডের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির এই বছরের কৃতীদের সংবর্ধনা জানানো হল ও তাদের হাতে তুলে দেওয়া হল ল্যাপটপ, বই ও অন্যান্য সামগ্রী। সকল ছাত্রছাত্রীদের জানাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে সমস্ত শিক্ষকদের জানাই আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। আজকের অনুষ্ঠানের কয়েকটি মুহূর্ত।’।