কেরালার ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রির অন্ধকার ইতিহাসের কাহিনীর জাল বহুদুর পর্যন্ত বিস্তৃত । যেটুকু সত্য সামনে এসেছে তা যেকোনো মানুষের মধ্যে শিহরণ জাগানোর জন্য যথেষ্ট । কিভাবে কেরালার ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রির এই কুকীর্তি প্রকাশ্যে এল তা জানুন….আসলে, ২০১৭ সালে মালায়ালাম অভিনেত্রী ভাবনাকে অপহরণ করা হয়েছিল। তাকে একটি গাড়িতে করে দুই ঘণ্টা কোচির রাস্তায় ঘোরাফেরা করা হয়। গাড়িতে তাকে সামুহিক যৌন নির্যাতন করা হয়। পরে অপহরণকারীরা ভাবনাকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায়। পুলিশ এফআইআর নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু করে । অপহরণকারীরা ধরা পড়ে এবং মালায়ালাম সুপারস্টার দিলীপের নাম প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে উঠে আসে। অভিনেত্রী কাব্য মাধবনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল দিলীপের। দিলিপের স্ত্রী ও বিখ্যাত অভিনেত্রী মঞ্জু ওয়ারিয়ারকে এই কথা জানান ভাবনা। এর প্রতিশোধ নিতে দিলীপ ভাবনাকে নিজে ও গুন্ডাদের দিয়ে যৌন শোষণ করে। দিলীপকে গ্রেফতার করে পুলিশ । এরপর দিলীপের সমর্থনে দাঁড়িয়ে যায় গোটা কেরালা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি । ভাবনাকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে ব্ল্যাক আউট করে দেওয়া হয় ।
কিন্তু ব্যাপারটা এখানেই থেমে থাকেনি। মালায়লাম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে মহিলাদের যৌন হেনস্থার বিষয়টি তদন্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে চাপ দেয় সামাজিক সংগঠনগুলি ৷ সরকার অবসরপ্রাপ্ত মহিলা বিচারপতিকে দিয়ে তদন্তের জন্য হেমা কমিশন গঠন করে। হেমা কমিশন ২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৮০ জন মহিলা অভিনেত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, গভীরভাবে অধ্যয়ন এবং তদন্ত করা হয়েছে। ২০১৯ সালে, কমিশন তার প্রতিবেদনটি সরকারের কাছে জমা দেয় এবং সরকার সম্পূর্ণভাবে প্রতিবেদনটি পড়ে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায় । সরকার ভয় পেয়ে যায় । মালয়ালম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সম্মান বাঁচাতে সরকার ওই রিপোর্টে সিলমোহর দেয়নি। প্রতিবেদনটি প্রকাশ্যে আনার জন্য ফের সামাজিক সংগঠনগুলি লড়াই চালিয়ে যায় । শেষ পর্যন্ত চলতি বছর সরকার চাপের মুখে এসে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
কিন্তু ৩১৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে মাত্র ২৬০ পৃষ্ঠা প্রকাশ্যে আনা হয়েছে এবং বাকি ৫৫ পৃষ্ঠা এখনও গোপন রাখা হয়েছে। সরকার বলছে, এই ৫৫ পৃষ্ঠা প্রকাশ করলে অনেকের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু মাত্র ২৬০ পৃষ্ঠাতেই কেরল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রতিবেদনের তথ্য মানবতাকে লজ্জায় ফেলেছে। হেমা কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, মালায়ালাম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের বিনিময়ে যৌনতার দাবি করা হয়। শুধুমাত্র অভিনেত্রীদের কাছ থেকে নয়, প্রতিটি স্তরের মহিলা অভিনেত্রীদের কাছ থেকে যৌন সুবিধা চাওয়া হয়। যৌন চাহিদা একটি সিস্টেমের মত পরিচালিত হয় কেরালায় । কোনো অভিনেত্রী কাজ চাইতে আসলে তাকে কাজের বিনিময়ে যৌন সুবিধা দিতে হত । অভিনেত্রী রাজি না হলে কোথাও কাজ পেতেন না। কিন্তু পরিচালক ও প্রযোজকরা জানতেন কী করে যে কে রাজি হয়েছে আর কে হয়নি ?
আসলে,যদি কোনও অভিনেত্রী রাজি হতেন তবে তাকে একটি গোপন কোড দেওয়া হত । কোনো নারী চলচ্চিত্রে কাজ করতে চাইলে গোপনীয় কোড বলে কাজ পেতেন এবং বিনিময়ে পরিচালক ও প্রযোজকের বিছানায় যেতে হত তাকে । অভিনেত্রী যদি এই গোপন কোডটি প্রতিটি প্রযোজককে বলতেন তাহলে তার কাজ পেতে কোনো অসুবিধা হত না । সিক্রেট কোড সিস্টেমের অধীনে, বড় ভূমিকার পাশাপাশি ছোট চরিত্রে অভিনয় করা সমস্ত অভিনেত্রীই যৌন শোষণের শিকার হন। সমগ্র কেরালা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সিক্রেট কোড সিস্টেম সম্পর্কে সচেতন ছিল। এটা ছোটখাটো অপরাধ নয়। এটি একটি জঘন্য অপরাধ, কেরালার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি মানবতাকে লজ্জায় ফেলেছে। কিন্তু এত বড় একটা খবরও নিউজ চ্যানেলগুলো থেকে হারিয়ে যাচ্ছে । এটাই দেশবাসীর দুর্ভাগ্য ।।