এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৯ আগস্ট : আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসককে ধর্ষণ বা গনধর্ষণের পর নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগের আঙুল উঠছে কলকাতা পুলিশের দিকে । তারপর গত ২৭ আগস্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগের দাবিতে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের ডাকে ‘নবান্ন অভিযান’-এ পুলিশের ব্যাপক লাঠিচার্জ, যথেচ্ছ জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের ব্যবহারের কারনে মানুষ চরম ক্ষুব্ধ । তারই প্রতিবাদে বুধবার বিজেপির ডাকে বাংলা বনধে পুলিশের ব্যাপক গ্রেফতারির ঘটনায় গেরুয়া শিবিরের বিষ নজরে পড়েছে রাজ্য পুলিশ।
এমনিতেই রাজ্য পুলিশকে “চটি চাটা” বিদ্রুপ শুনতে হয়,তার মাঝে এই সমস্ত ঘটনাক্রমে রাজ্য পুলিশের ভাবমূর্তি একেবারে তলানিতে । তাই নিজেদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে হাতিয়ার করেছে কলকাতা পুলিশ৷
সেই লক্ষ্যে পথকুকুর শাবককে এক মহিলা সহকর্মীর খাবার খাওয়ানোর ছবি আজ কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয় । সহকর্মীর পরিচয় করিয়ে দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘সাব-ইনস্পেকটর মনীষা হাজরা, ২৭ অগাস্ট, ২০২৪ ডিউটি সেরে ফেরার পথে মহাত্মা গান্ধী রোডে ক্ষুধার্ত সহনাগরিকের সঙ্গে নিজের টিফিন ভাগ করে নেন। ছবিটি সাংবাদিক অর্ণব চক্রবর্তীর তোলা।’ কিন্তু বহু মানুষ কলকাতা পুলিশের এই পোস্টকে নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন । তাদের মধ্যে কয়েকজনের প্রতিক্রিয়া দেওয়া হল :
আশিষ রায় লিখেছেন,’এখন এটাই কাজ কলকাতা পুলিশের।’ বনানী কর্মকার লিখেছেন,’এভাবে মানুষের ভরসা ভালোবাসা আর সম্মান পাওয়ার চেষ্টা চলছে, ভালোই বুদ্ধি৷’ বি এস ঘোষের প্রতিক্রিয়া,’আমাদের বাড়ির পাশে একজন আছে যে রোজ পায়রাকে খাবার দেয় আর দেওয়ার কিছুক্ষন পর বাজার গিয়ে দোকান খুলে ছাগল কাটে আবার মুরগি কাটে। মাফ করবেন ছবিটা খুব সুন্দর।’
সৌভিক মাহাতর প্রতিক্রিয়া, ‘আমাদের বাড়ির পাশে একজন আছে যে রোজ পায়রাকে খাবার দেয় আর দেওয়ার কিছুক্ষন পর বাজার গিয়ে দোকান খুলে ছাগল কাটে আবার মুরগি কাটে। মাফ করবেন ছবিটা খুব সুন্দর।’ মুন্না আজিজ লিখেছেন,’খুব ভালো কাজ করছেন কিন্তু আমার সহকর্মীর বিচার এর বেলায় আপনাদের যা ভূমিকা সেটা কোনো দিন ভোলার মত নয়।’
সোমা এস ভট্টাচার্য,’আহা,কি ভালো। এই সহমর্মিতা টুকু যদি মরা মেয়েটির মা বাবার প্রতি থাকতো ।’
মিঃ পারফেক্ট,’প্যান্টে হেগে ফেলার পর যতই ঢাকার চেষ্টা করেন গন্ধ ঢাকা থাকবে না! অন্যায়কে পক্ষে দাঁড়িয়ে দোষীর সুকতলা লেহিনকারী পুলিশের ভাল সাজার চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হোক!’
দেবাশিষ ঘোষ লিখেছেন,’খুব সুন্দর মন ভালো করা ছবি। এই সময় পত্রিকার অর্ণব চক্রবর্তী’র তোলা ছবি ।’ সাগরিকা ভট্টাচার্যর প্রতিক্রিয়া, ‘খুব ভালো কথা! বিচার কবে পাবো? অভয়ার অপরাধীরা কোথায়? ন্যায় ব্যবস্থার এরম বেহাল অবস্থা আর কতদিন? জবাব দিন।’
সঞ্জীব রায় কলকাতা পুলিশ দ্বারা এক বৃদ্ধকে লাঠিপেটা করার ছবি পোস্ট করে লিখেছেন,’এই গুলো একটু শেয়ার করুন।’ অনির্বান চ্যাটার্জি, ‘আমি তো প্রতিদিন খাবার পর ওদের খাবার দি, আমি আজ পর্যন্ত একদিনও সেটা পোস্ট করিনাই, থালে এবার খাবার দিয়ে আপনাদের ছবি তুলে আপনাদের দেবো সেটা শেয়ার করবেন।’
স্বর্ণালি শিল,’আমিও আমার মেয়ের সঙ্গে রাস্তায় বেরিয়ে কুকুর দেখলে অনেক সময়ই বিস্কুট খাওয়াই। আপনাদের ফটোগ্রাফারকে পাঠাবেন প্লিজ।’
রিক্তা দত্ত,’অনেক ধন্যবাদ, সেইদিন এরা আহত হতে পারতো।’ সর্বজিত পাল,’নিঃসন্দেহে ভালো কাজ। তবে পথের ক্ষুধার্ত সারমেয় কে যেমন সহনাগরিকের ভাবেন তেমনই যদি আমাদের ও একটু সহনাগরিক ভাবতেন সমাজটাই বদলে যেতো।’
প্রসঙ্গত,আরজি কর কান্ড নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্টে পর্যন্ত জোর ধাক্কা খেয়েছে কলকাতা পুলিশ৷ কলকাতা হাইকোর্টও তো পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে । সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহল থেকে উঠছে কলকাতা পুলিশ কমশনার বিনীত গোয়েলের অপসারণের দাবি । এমনকি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় দাবি তুলেছিলেন বিনীত গোয়েলকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করুক সিবিআই । যদিও পরে দলের চাপে নিজের অবস্থান বদল করেন সুখেন্দুশেখরবাবু ।।