এইদিন ওয়েবডেস্ক,শিলচার(আসাম),২৮ আগস্ট : আসামে বসেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ভারত বিরোধী’ পোস্ট করায় এক বাংলাদেশি ছাত্রীকে নিজের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে শিলচারে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (NIT)। ওই ছাত্রীর নাম মাইশা মাহজাবিন(বাবন) । গত সোমবার (২৬ আগস্ট) সকালে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক সীমান্ত বর্ডার করিমগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বেলা ১১টার দিকে তাকে কড়া নিরাপত্তায় বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। তাকে সীমান্তের অন্য প্রান্তে স্থানান্তর করায় আসাম পুলিশ এবং বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) সহায়তা করেছিল। মাইশা মাহজাবিন ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্রী ছিলেন।
এদিকে এই ঘটনার পর বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা নীতিতে বদল আনার জন্য ভারত সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশেরই একটি হিন্দু সংগঠন । এই বিষয়ে ‘বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ’ নামে ওই সংগঠনটি তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেজে লিখেছে,’বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের ভিসা নীতিতে বদল আনা উচিত। ভারতের অযৌক্তিক সমালোচনাকারী, ভারতবিদ্বেষী, দ্বিজাতিতত্ত্বের সমর্থক, ভারতীয় ঐতিহ্য বিরোধী ইসলামিস্টদের চিহ্নিত করে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা প্রয়োজন। দরকার হলে ফেসবুক থেকে ইউটিউব, টুইটার সবখানের তথ্য খোঁজা উচিত৷ এখনই ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সতর্ক না হলে ইসলামিস্টদের দৌরাত্ম্যে তাদের আক্রান্ত হতে হবে। ভারত, বাংলাদেশে হিন্দুসহ আদিবাসী, নাস্তিক থেকে অন্য সংখ্যালঘু সবার স্বার্থ রক্ষায় ধর্মীয় ও জাতিগত বিদ্বেষ এবং ইসলামিজম ও শরিয়াহ সমর্থনে জঙ্গি মনোভাব পোষণকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া উচিত। তাদের ভারতে প্রবেশ বন্ধ করা প্রয়োজন, ভারতে শিক্ষা, চিকিৎসা, বাণিজ্য থেকে তাদের বিতাড়িত করা প্রয়োজন এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা দরকার। সেই সঙ্গে যারা এগুলোর নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় আছে তাদের বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন জরুরি।’
এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০২১ সালে শিলচরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভর্তি হয়েছিল মাইশা মাহজাবিন(বাবন) নামে ওই বাংলাদেশি তরুনী । সম্প্রতি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ভারত বিরোধী পোস্ট’ এবং এই সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের পোস্টে লাইক দেওয়ার কারণে ব্যাপক বিরোধিতা করেন অনান্য পড়ুয়ারা । এনিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হতেই ওই বাংলাদেশিকে তার নিজের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে ইনস্টিটিউটটি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয় শিলচরের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা । সে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভারত বিদ্বেষী বিভিন্ন মন্তব্যের স্ক্রিনশর্টও শেয়ার করেছিল । এই ঘটনায় ওই ছাত্রীকে সোমবার সকালে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক সীমান্ত বর্ডার করিমগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বেলা ১১টার দিকে তাকে কড়া নিরাপত্তায় বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয় ।
ওই শিক্ষার্থী দেশের ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন এবং রোববার সে ছুটিও নিয়েছিল বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি শিলচরের কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, আসামের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে বাংলাদেশের প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিভাগে অধ্যায়ন করছেন। এখন সমস্ত বাংলাদেশিদের তাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠানোর দাবি উঠছে ।
পুলিশ স্পষ্ট করেছে যে মাইশা মাহজাবিনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কারণ তার ভারতবিরোধী ঘৃণা সমর্থন করা হয়নি। তার বিতর্কিত সোশ্যাল মিডিয়া কার্যকলাপের জন্য জনসাধারণের স্ক্যানারে আসার পরে তিনি ‘দীর্ঘ ছুটি’র জন্য আবেদন করেছিলেন । অন্যদিকে সাদাত হোসেন আলফি নামে আর একজন বাংলাদেশী নাগরিক এবং NIT শিলচরের প্রাক্তন ছাত্র (২০৩০-২৪) প্রাথমিকভাবে ‘মেমস বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি পেজ প্রকাশিত ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলেন।পোস্টটিতে লেখা ছিল, ‘লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার’ এবং এর সাথে বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের একটি ছবি ছিল।
দেয়ালে লেখা পড়ুন, ‘কুকুর এবং ভারতীয়দের অনুমতি নেই’। অপরিবর্তিতদের জন্য, উক্তিটি ঔপনিবেশিক আমলের, যখন ব্রিটিশরা ভারতীয়দেরকে পশু হিসাবে অমানবিক করত, ‘মানুষ’ বলার অযোগ্য । ভারতের একটি প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও, সাদাত হোসেন আলফি ভারতীয়দের লক্ষ্য করে বর্ণবাদী বাক্যাংশকে সমর্থন করতে দ্বিধা করেননি। মাইশা মাহজাবিন এমনকি হৃদয় ইমোজি দিয়ে তার পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। এরপরই তার ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। মাইশার বিপরীতে, সাদাত তখন বাংলাদেশে বসবাস করছিলেন এবং জনগণের ক্ষোভ থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। যাইহোক, পুলিশের পক্ষে বিষয়টি বিবেচনা করা যথেষ্ট ছিল। রবিবার (২৫ শে আগস্ট), পুলিশ টুইট করেছে, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তিকর পোস্টের প্রচারের প্রতিক্রিয়ায়, একটি বিস্তৃত তদন্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন এবং কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপচারিতা রয়েছে। তদন্তে জানা গেছে যে আপত্তিকর পোস্টটি এক এক্স ছাত্র দ্বারা করা হয়েছিল। NIT শিলচরের প্রাক্তন ছাত্র সাদাত হোসেন আলফি বর্তমানে বাংলাদেশে বসবাস করছেন। প্রতিষ্ঠানটি সক্রিয়ভাবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি মোকাবেলা করছে, যখন আমরা তীক্ষ্ণ নজরদারি রাখছি এবং শান্তি ও প্রশান্তি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছি ।’
এরই মধ্যে, ভারতীয় নেটিজেনরা সাদাত হোসেন আলফির একাডেমিক ডিগ্রি স্থগিত করার এবং মাইশা মাহজাবিনকে বাংলাদেশ থেকে ফিরতে না দেওয়ার দাবি করছেন। এই বিতর্কের মধ্যে আলফি তার ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুকে সাফাই দিয়েছে,ভারতীয় মানুষের প্রতি আমার কোনো ঘৃণা নেই, কিন্তু আমার আইডি হ্যাক করা হয়েছে; আগের পোস্টটি আমার দ্বারা করা হয়নি। এর জন্য দুঃখিত।’ যাইহোক, প্রতিষ্ঠানটি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছে, যখন পুলিশ বিভাগ শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সজাগ রয়েছে।।