এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৭ আগস্ট : আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসকের নৃশংস বর্বরোচিত ধর্ষণ বা গনধর্ষণ হত্যাকাণ্ডে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা প্রথম থেকেই ‘সন্দেহজনক’ বলে মনে করছেন অনেকে । সিবিআইয়ের তরফে আইনজীবী সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টে দাবি করেছিলেন যে আর জি কর হাসপাতালের অপরাধস্থলের চরিত্র বদলে দেওয়া হয়েছে। প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও তার দলবলের সাথে প্রমান লোপাটে পুলিশের প্রত্যক্ষ মদত ছিল বলে অভিযোগ এখনো উঠছে । এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, কলকাতা পুলিশ এবং মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকারের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন । এবারে এমন একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যাতে আরজি কর ধর্ষণ-হত্যাকান্ডের ‘তথ্য প্রমান লোপাট’-এর বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে । ভিডিওতে একটা হলঘরে বেশ কিছু লোকজনকে জটলা করতে দেখা গেছে । হাসপাতালের স্টাফ, পুলিশের পোশাকে কয়েকজনকে দেখা গেছে । আসলে ওই ভিডিওটি আরজি করের সেমিনার হলের, গত ৯ আগস্ট সকালের, যে ঘর থেকেই ‘তিলোত্তমা’র নগ্ন-ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়েছিল । যেখানে দেখা যাচ্ছে, তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর অন্তত ৩০ জন সেমিনার হলে ঢুকেছেন। সেখানে আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের আপ্ত সহায়ক থেকে তাঁর ঘনিষ্ঠ আইনজীবী ও পুলিশ আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন । সেমিনার হলের ওই জটলার মধ্যে বহিরাগতরাও রয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে । ৮ আগস্ট রাতে আর জি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয় । ৯ আগস্ট সকালে সেমিনার হলে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। আইন অনুযায়ী অকুস্থল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার কথা । অথচ এক্ষেত্রে রাজ্য পুলিশ কিভাবে সেই আইন বেমালুম ভুলে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ।
ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর কলকাতা পুলিশকে সাফাই দিতে সাংবাদিক সম্মেলন পর্যন্ত করতে হয়েছে । সোমবার বিকেলে কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখার্জি সাংবাদিকদের বলেছেন, আরজি কর হাসপাতালের চতুর্থ তলার সেমিনার হল, অর্থাৎ যেখানে ওই তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়, ওই সেমিনার হলটি আয়তনে ৫১ বাই ৩২ ফুট। দেহ ছিল ওই সেমিনার রুমের একদিকে। সেই কারণেই ৫১ বাই ৩২ ফুটের সেমিনার রুমের ৪০ ফুট পর্যন্ত কর্ডন করা হয়েছিল।যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, সেটি সেমিনার রুমের, কিন্তু ওই ৪০ ফুটের বাইরের বাকি ১১ ফুটের জায়গার। ওই ১১ ফুটের মধ্যে সেই সময় হাজির হয়েছিলেন পরিবারের সদস্য, অন্যান্য চিকিৎসকেরা এবং হাসপাতালের কর্মীবৃন্দ।ওখানে দাঁড়িয়েই চিকিৎসকেরা নিজেদের দাবি দাওয়া জানিয়েছিলেন বলে জানান ইন্দিরা মুখার্জি। পাশাপাশি তিনি জানান, কর্ডন করা জায়গায় কোনও বহিরাগত প্রবেশ সম্ভব নয়। ওই অংশে কেবলমাত্র তদন্তকারী আধিকারিক, ফরেন্সিক টিমের সদস্যরা, দেহ স্থানান্তকরনের কাজ করেছেন যাঁরা এবং ফটোগ্রাফি-ভিডিওগ্রাফির দায়িত্বে থাকা কর্মীরা।
কিন্তু সেমিনার হলের একটাই দরজা , আর সেই দরজা দিয়েই আসামিরা ঢুকেছিল, তাদের পায়ের ছাপ দেখে চিহ্নিত করা সহজ হত, কিন্তু এত লোকের যাতায়াতের ফলে সেই প্রমান কি নষ্ট হয়ে যায়নি ? এই প্রশ্ন এখন উঠছে । ভিডিওটি প্রকাশ্যে এনে বিজেপি নেতা অমিত মালব্যও একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন । তিনি লিখেছেন,’আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সেমিনার কক্ষ থেকে ধর্ষিত ও খুন হওয়া পিজিটি মহিলা ডাক্তারের প্রাণহীন দেহ পাওয়া যাওয়ার পরেই মর্মান্তিক ফুটেজ। অনেক ডাক্তার, পুলিশ, হাসপাতালের স্টাফ এবং ঘটনাস্থল (PO) বহিরাগতদের সাথে অপরাধের দৃশ্যটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। ভিডিওতে এই মানুষগুলোকে দেখা যাবে। আরও বেশ কিছু আছে:১) সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, ওসি, আরজি কর ফাঁড়ি, ২) একজন আইনজীবী শান্তনু দে (সবুজ হাফ শার্টে)। তিনি সেখানে কি করছিলেন? ৩) প্রসূন চট্টোপাধ্যায় (মেরুন শার্টে), অসম্মানিত প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের পিএ,৪) দেবাশিস সোম, ফরেনসিক ডেমোনস্ট্রেটর।’
তিনি বেশ কিছু প্রশ্নও তুলেছেন । অমিত মালব্য এরপর লিখেছেন, প্রশ্ন হল: ১)কলকাতা পুলিশ সেখানে উপস্থিত থাকার কারণে, কেন তারা অপরাধের দৃশ্যকে দূষিত করা থেকে বিশাল জনসমাগম বন্ধ করেনি, যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণগুলি ধ্বংস করা হয়েছিল? নাকি এটাই ছিল এজেন্ডা?
২)হাসপাতালের ভিতরে বহিরাগতদের কে ডেকেছিল?
৩)কলকাতা পুলিশ মৃতের বাবা-মাকে অপরাধের দৃশ্যে প্রবেশ করতে দেয়নি, তাহলে তারা বহিরাগতদের প্রবেশ করতে দিল কেন?
এটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের অভিপ্রায় এবং অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার গণনাকৃত প্রচেষ্টা নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উত্থাপন করে। কলকাতা পুলিশের কমিশনারের দেওয়া লাইন অফ লাইন বিবৃতি ভয়ঙ্কর অপরাধকে আরও বাড়িয়ে তোলে। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টে সিজেআই-এর বিশেষ বেঞ্চের সামনে জমা দেওয়ার সময় বলেছিলেন,’পিও পরিবর্তন করায় আমাদের তদন্ত নিজেই একটি চ্যালেঞ্জ!’ এখন আমরা বুঝতে পারছি যে তিনি কি বোঝাতে চেয়েছিলেন ।।