এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,২৬ আগস্ট : কৃষকদের বিক্ষোভ নিয়ে লোকসভা সাংসদ তথা অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউতের দেওয়া বক্তব্য থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে বিজেপি । দল কঙ্গনা রানাউতকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো বক্তব্য না দিতে। হিমাচল প্রদেশের মান্ডির সাংসদ রানাউত তার এক্স হ্যান্ডেলে সোমবার বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে যা হয়েছে তার এখানে ঘটতে বেশি সময় লাগতো না… আমাদের শীর্ষ নেতৃত্ব যদি এত শক্তিশালী না হতেন। কৃষকদের আন্দোলনের সময় সেখানে লাশ ঝুলছিল, সেখানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছিল। আর যখন কৃষকদের কল্যাণ বিল প্রত্যাহার করা হয়েছিল গোটা দেশ চমকে গিয়েছিল । এই বিল প্রত্যাহার করা হবে তা তারা কল্পনাও করেনি । তা পরেও কিন্তু সেই কৃষকরা এখনো বসে আছে ।’ কঙ্গনা এটিকে একটি “ষড়যন্ত্র” বলে অভিহিত করে বলেছেন যে এটি একটি দীর্ঘ পরিকল্পনা ছিল, যেমন বাংলাদেশে ঘটেছে। তিনি দাবি করেন, এখানে চীন, আমেরিকাসহ বিদেশি শক্তি কাজ করছে।
এদিকে কঙ্গনার এই বক্তব্য নিয়ে বিজেপিকে নিশানা করেছে বিরোধী দলগুলি । বিজেপির কয়েকজন নেতাও এই বক্তব্যে আপত্তি জানিয়েছিলেন । ঘরে বাইরে সমালোচনার পরে, এখন বিজেপি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছে যে কৃষকদের আন্দোলন নিয়ে কঙ্গনা রানাউতের বক্তব্যে দল মতামত নয়। বিজেপি কঙ্গনা রানাউতের বক্তব্যের সাথে মতানৈক্য প্রকাশ করেছে। দলের পক্ষ থেকে, কঙ্গনা রানাউতকে পার্টির নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলার অনুমতি বা অনুমোদন দেওয়া হয়নি। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও লেখা হয়েছে যে কঙ্গনা রানাউতকে ভবিষ্যতে এমন কোনও বিবৃতি না দেওয়ার জন্য বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। দলটি বিবৃতিতে লিখেছে,ভারতীয় জনতা পার্টি ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস এবং সবকা প্রয়াস’ এবং সামাজিক সম্প্রীতির নীতি অনুসরণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ।
কঙ্গনা রানাউতের এই বক্তব্য নিয়ে কংগ্রেস নেতা সুপ্রিয়া শ্রীনেট একটি ভিডিওর মাধ্যমে বলেছেন যে বিজেপিকে কঙ্গনার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হবে, সরকার চুপ থাকতে পারে না। বিজেপি সম্পূর্ণ নীরব। বিজেপি এবং সরকারকে তাদেরও একই মতামত আছে কিনা তা স্পষ্ট করতে হবে। আপনিও কি মনে করেন যে এই দেশের কৃষকরা খুনি এবং ধর্ষক ? হয় অস্বীকার করুন বা এটি আপনার সরকারী অবস্থান হিসাবে বিবেচিত হবে । তাই কঙ্গনা রানাউতের কান ধরে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
পাঞ্জাব কংগ্রেস নেতা রাজ কুমার ভার্কা কঙ্গনার বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের (এনএসএ) অধীনে ব্যবস্থা নেওয়া এবং এফআইআর নিবন্ধনের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি বিজেপি নেতা হরজিৎ সিং গ্রেওয়ালও বলেছেন, কঙ্গনার এই ধরনের বক্তব্য দেওয়া উচিত হয়নি । কঙ্গনার বক্তব্যকে ব্যক্তিগত বলে বর্ণনা করে তিনি বলেন, বিজেপি কৃষক বান্ধব।
যদিও কৃষকদের আন্দোলন নিয়ে কঙ্গনার এমন বক্তব্য এই প্রথম নয় । এর আগেও এ ধরনের বক্তব্যের কারণে বিতর্কে পড়েছিলেন তিনি। এর আগে ২০২১ সালে কৃষকদের আন্দোলনের সময়, কঙ্গনা বলেছিলেন যে আন্দোলনের সাথে জড়িত মহিলারা ‘প্রতি দিন ১০০ টাকা’ নিয়ে ধর্নায় বসতে আসে। এটা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছিল। চলতি বছরের জুন মাসে চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে সিআইএসএফের এক মহিলা কনস্টেবল কঙ্গনা রানাউতকে চড় মেরেছিলেন। মহিলা কনস্টেবল অভিযোগ করেছেন যে কঙ্গনার এই বক্তব্যে তিনি আহত হয়েছেন, কারণ তার মাও কৃষক আন্দোলনের অংশ ছিলেন। তবে দলের এই মতামতের পর কঙ্গনার কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ।।