এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৫ আগস্ট : আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তরুনী চিকিৎসককে (তিলোত্তমা) নৃশংস বর্বরোচিত ধর্ষণ-খুনের পর থেকে ক্ষোভে ফুঁসছে সাধারণ মানুষ । এই নৃসংশতায় যাদের নাম নিয়ে সবচেয়ে আলোচনা হচ্ছে, তারা হল ধৃত সঞ্জয় রাই এবং আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ । কবে তিলোত্তমার সমস্ত অপরাধীরা ধরা পড়বে এবং কবে তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হবে,সেই দিনটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন দেশের প্রত্যেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ । বিষয়টি নিয়ে এইদিনের সঙ্গে কথা বলার সময় নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী সন্দীপ ঘোষকে ভয়ঙ্কর (ferocious) বলে অবিহিত করেছেন । তিনি এটাও প্রশ্ন তুলেছেন যে এতদিন ধরে জেরার পরেও কেন সন্দীপকে গ্রেফতার করছে না সিবিআই ? একই প্রশ্ন আজ রবিবার সিবিআইয়ের ৫ সদস্যের তদন্তকারী দল যখন বেলেঘাটায় সন্দীপ ঘোষের বাড়িতে যায় তখন স্থানীয় বাসিন্দারা তোলেন । প্রচুর মহিলা ও পুরুষ সেখানে জড়ো হয়ে সন্দীপকে গ্রেফতার না করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন । সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে সন্দীপ ঘোষকে অবিলম্বে ফাঁসিতে ঝোলানোর দাবি জানান তারা ।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ‘স্নেহধন্য’ আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের যেসমস্ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সামনে আসছে,তা যদি প্রমানিত হয় তাহলে যেকোনো কুখ্যাত দুষ্কৃতীকেও হার মানাবে ! আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে কাজ করা এক প্রাক্তন আপার ডিভিশন ক্লার্ক তারক চট্টোপাধ্যায় টিভি ৯ বাংলার কাছে দাবি করেছেন, আরজি করে বেওয়ারিশ লাশের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে রীতিমতো ব্যাবসা ফেঁদেছিল সন্দীপ ঘোষ ৷ ওই সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খুলে নিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হত বেসরকারি হাসপাতালে । অনান্য মৃতদেহগুলি বাড়িতে পরিবহন করে দেওয়ার কথা বলে মৃতের স্বজনদের কাছ থেকে ১০-১২ হাজার টাকা করে তোলা হত । মর্গ থেকে যে বিপুল টাকা তোলা হত তা যেত প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের কাছে । হাসপাতালের ৭-৮ জন ষণ্ডামার্কা চিকিৎসককে নিয়ে রীতিমতো বাউন্সার টিম খুলেছিল সন্দীপ । ওই চিকিৎসকদের পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে সন্দীপ তাদের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী হিসাবে নিজের সাথে সর্বদা রেখে দিত । কোনো মৃতের আত্মীয়রা টাকা দিতে রাজি না হলে তাদের মারধর পর্যন্ত করা হত বলে অভিযোগ । ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ইএনটি বিভাগের ওয়ার্কশপের জন্য কয়েকটি মৃতদেহ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন এইচওডি সেই দেহ দিতে রাজি হননি। আর এই অপরাধে সন্দীপের বাউন্সাররা তার উপর চড়াও হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধরের হুমকিও দিয়েছিল বলে তিনি জানান ।
টাকা নিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষায় পাশ পাশ করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল থেকে বেশ কিছুদিন ধরেই উঠছে । কিন্তু পড়াশোনা না করেই ব্যক্তিগত বাহিনীকে ডাক্তারি পরীক্ষা পাশ করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ এই প্রথম উঠল । তারকবাবু জানান,মর্গের কর্মী সন্তোষ মল্লিক ছিল সন্দীপ ঘোষের অন্যতম সাগরেদ । মর্গের মধ্যে মৃতের আত্মীয়তদের বিশ্রামস্থলকে মদ্যপানের আসর বানিয়ে ফেলা হয়েছিল । হাসপাতালের গেস্ট হাউসে বসত সন্দীপ ঘনিষ্ঠ চিকিৎসকদের মদের আসর । সন্তোষ সব মদ সরবরাহ করত । মদ খাইয়ে কিছু লোককে নিজের আয়ত্তে রেখেছিলেন সন্দীপ ঘোষ।
তিনি জানিয়েছেন,হাসপাতালে সরবরাহ করা সরকারি ইনজেকশনের সিরিঞ্জ থেকে ওষুধ রিসাইক্লিং করে বাজারে বিক্রি করা হত সন্দীপের ইন্ধনে৷ আর এই কাজ করত হাওড়ার সাঁকরাইলের হাঁটগাছায় বিপ্লব সিং এবং সুমন হাজরা নামে হাসপাতালের দুই ভেন্ডার । আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলিও মৃতদেহ নিয়ে ব্যবসা চালানোর অভিযোগ তুলেছিলেন সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে । সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ আরজি করের অ্যানাটমি বিভাগের চিকিৎসক কেষ্টপুর হানাপাড়ার বাসিন্য দেবাশিস সোমের বিরুদ্ধেও আখতার আলি অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন ।
আরজি করের হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের দুর্নীতির ফরেন্সিক প্রমান সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ লোপাটে পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করত দেবাশিস । যার চেয়ারম্যান সুদীপ্ত রায়। যিনি আবার আরজি কর মেডিকেল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান । এই দেবাশিস সোম আবার স্বাস্থ্য নিয়োগ বোর্ডে রয়েছেন। দেবাশিস সোম গত ৯ আগস্ট তিলোত্তমার ধর্ষণ-খুনের দিন সকাল থেকেই আরজি করে উপস্থিত ছিলেন । তিলোত্তমার ময়নাতদন্তের সময়েও দেবাশিস উপস্থিতি ছিল বলে জানা গেছে । সেদিন তাঁর সঙ্গে একাধিকবার সন্দীপ ঘোষের ফোনে কথা হয় । তাই তিলোত্তমার ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তার ভূমিকা কি ছিল তা খতিয়ে দেখতে চাইছেন তদন্তকারীরা। আরজি কর দুর্নীতি মামলার তদন্তের জন্য কলকাতা হাইকোর্টের কাছে ছাড়পত্র পাওয়ার পর আজ কেষ্টপুরের এজি ২৪৩ নম্বর এলাকায় দেবাশিসবাবুর বাড়িসহ আজ সন্দীপ ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তি ও কিছু সংস্থার অফিস মিলে মোট ১৫ জায়গায় হানা দিয়েছে সিবিআইয়ের একটা দল ।
এদিকে আজ আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়এ আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা অভিযোগ তুলেছেন,’আরজি করের কেউ নিরাপদ নন। দোষীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্বাস্থ্যভবনের মদতে দোষীকে আড়াল করার চেষ্টা চলছে ।’ রাজ্য স্বাস্থ্যভবনের বিরুদ্ধে চিকিৎসক খুনে অসংবেদনশীল আচরণ করার অভিযোগ তুলেছেন তারা । আজও সন্দীপ ঘোষের স্থায়ী সাসপেনশন এবং পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগ দাবি করেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা। পাশাপাশি তারা সাফ জানিয়ে দেন যে তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন না ।।