ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যা মাত্র ৯৪ লাখ । চারপাশে ঘিরে রয়েছে আটটি ইসলামিক দেশ । তাদের সঙ্গে নিরন্তর যুদ্ধ করছে ইসরায়েল । পাশাপাশি বিশ্বের অধিকাংশ দেশই গাজার সমর্থক, কিন্তু আজও ফিলিস্তিন ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এবার বড় ধরনের হামলা চালিয়ে ইসরাইলকে চমকে দিয়েছে ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস । উলটে ইসরাইল এমন ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে যে গাজা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
ইরানসহ ৮টি দেশের সঙ্গে এক সাথে বছরের পর বছর ধরে লড়াই চালিয়ে যাওয়া মোটেই সহজ কথা নয় । কিন্তু ইসরায়েলের কট্টর দেশপ্রেমিক মানুষ যেভাবে দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, তা বিস্ময়কর। ইসরায়েলের পিঠে আমেরিকার মতো পরাশক্তির শক্ত হাত আছে ঠিকই, কিন্তু যুদ্ধ তো করতে হবে সেই ইসরাইলিদেরই । আপাতদৃষ্টিতে ইসলামী দেশগুলো একত্রে আক্রমণ করলে ইসরায়েলকে পরাজয় বরণ করা উচিত । কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ইসলামি দেশ ইসরায়েলের এক চুলও নড়াতে পারেনি,পরাজিত করা তো দূর অস্ত ।এখন প্রশ্ন যে ইসরায়েল কীভাবে একা অতগুলো ইসলামি রাষ্ট্রের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে ? কেন তার প্রতিটি পদক্ষেপ শত্রুকে ধ্বংস করে ? এর পিছনে মাত্র দুটি কারণ আছে। প্রথম কারণ চরম দেশপ্রেম এবং দ্বিতীয়টি চরম জাতীয়তাবাদ।
ইসরায়েলে সেখানে স্কুলের পাঠ্যক্রমে বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা দেওয়া হয় । শুধু অনুমান করুন,৯৪ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ৭০ লাখ সক্রিয় যুবক এবং সবাই প্রশিক্ষিত সৈনিক ? বাকি জনসংখ্যাও সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে । একটা বড় দেশে ১০-১৫ লাখের বেশি সেনা থাকে না। ছোট দেশ ইসরায়েলের ৭০ লাখ প্রশিক্ষিত সেনা আছে ! বাস্তবিক এটা বিস্ময়কর ঘটনা ।এমতাবস্থায় ৮টি দেশের সম্মিলিত শক্তি কীভাবে ইসরায়েলকে বিপাকে ফেলবে ?
ভারতে কেন অগ্নিবীর যোজনা আনা হয়েছিল জানেন? হ্যাঁ, অগ্নিবীরদেরকে প্রস্তুত করার একটা বড় পরিকল্পনা আছে। এটি ইসরায়েলের মতো একটি যুব বাহিনী তৈরি করার পরিকল্পনা । দেখুন, যখন দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠল, সারা বিশ্বে ঘুরে বেড়ানো ইসরায়েলি যুবকরা কীভাবে তাদের সফর বাতিল করে দেশে ফিরতে শুরু করল। সবার একটাই উদ্দেশ্য ছিল- দেশে ফিরে বন্দুক তুলে শত্রু হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেওয়া। এমন আবেগ তখনই জন্মাতে পারে যখন ছোটবেলা থেকেই দেশপ্রেমের পাঠ দেওয়া হয়। অগ্নিবীর যোজনার উদ্দেশ্য ছিল এমন সৈনিকদের প্রস্তুত করা যারা চার বছর পরে কোথাও কাজ করতে পারে, কিন্তু সময় এলে তাদের দেশপ্রেম তাদের দেশের জন্য নিবেদিত খুঁজে পাবে । এখন যারা দীর্ঘমেয়াদী উদ্দেশ্য বুঝতে পারেনি, তারা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য অগ্নিবীর প্রকল্পের বিরোধিতা শুরু করেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যখন তার স্বাধীনতার জন্য রাশিয়ার বিরোধিতা শুরু করেন, তখন তাকে কৌতুক অভিনেতা আখ্যা দিয়ে বিশ্বে উপহাস করা হয়। কিন্তু দুই বছর ধরে রাশিয়ার মতো পরাশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া ইউক্রেন দেখিয়ে দিয়েছে দেশপ্রেম কী । যখন প্রশ্নটি দেশে এসেছিল, তখন একজন ইউক্রেনীয় জেলেনস্কির বিরোধিতা করেননি। আজ যদি ইউক্রেন রাশিয়ায় প্রবেশ করে তবে তা জনগণের মধ্যে প্রবল জাতীয়তাবাদের ফল।
এখন কেউ ইসরায়েলের বিরোধিতা করবে নাকি ইউক্রেনকে অভিশাপ দেবে সেটা তার পছন্দ। তবে উভয় দেশের জনগণের দেশপ্রেম প্রশংসনীয়। এটা দুঃখজনক যে আমাদের দেশে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদকে উপহাস করা হয়। কিছু অজ্ঞ রাজনীতিবিদ জাতীয়তাবাদকে হিন্দুত্বের সাথে যুক্ত করে তাদের অজ্ঞতা দেখাতে শুরু করেছে। জাতীয়তাবাদ জাগ্রত করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা ইসরায়েলি এবং ইউক্রেনীয়দের কাছ থেকে শেখা উচিত। আমাদের দেশে ‘ভারতমাতা কি জয়’ বলা এবং ‘বন্দে মাতরম’ গাওয়ার বিরোধিতাকারী লোকের অভাব নেই । তাদের মদত জোগানো তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলেরও অভাব নেই । ভারতে প্রকৃত দেশপ্রেম সঞ্চার করতে তাদের মেকি ধর্মনিরপেক্ষতা আজ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে । ভারতে কংগ্রেসের মত মনিশঙ্করা আইয়ারের মত এমন নেতাও আছে যারা পাকিস্তানে গিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পাকিস্তানেরই সাহায্য চেয়ে বসে । জওহরলাল নেহরুর সময় ১৯৫৪ সালে ‘হিন্দি চিনি ভাই ভাই’ স্লোগান তুলেছিল ভারতের বামপন্থীরা । নেহেরু তাতে সমর্থনও করেছিল । কিন্তু তারপরে, একের পর এক ঘটনা যা চূড়ান্ত আঘাতের দিকে নিয়ে যায়,চীন ১৯৬২ সালের ২০ অক্টোবর,ভারত আক্রমণ করে । ইন্ডিয়া টুডে-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে,ভারতীয় নেতাদের চীনা প্রেমকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত হওয়ার আগেই হামলা চালায় চীন । প্রায় এক মাস ধরে যুদ্ধ চলে এবং ২১ নভেম্বর চীন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার পর শেষ হয়। কিন্তু দখল করে নেয় ২,১০০ মাইল-দীর্ঘ ভারতীয় ভুখন্ড । যা নিয়ে আজও চীনের সঙ্গে বিবাদ চলছে ৷ এছাড়া ভারতীয় ইতিহাসের পাতায় আজও মুঘল ও ব্রিটিশ হানাদারদের মহিমান্বিত করে আসা হচ্ছে,আড়ালে রেখে দেওয়া হয়েছে ভারতীয় বীর যোদ্ধাদের কাহিনী । তাই ইসরায়েলের মত জাতীয়তাবাদী মানসিকতা কিভাবে তৈরি হবে ভারতীয় শিশুদের মধ্যে ?