শ্যামসুন্দর ঘোষ,মেমারি(পূর্ব বর্ধমান),২০ আগস্ট : গত ৯ ই আগস্ট গভীর রাতে কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষানবিশ তরুণী চিকিৎসক ‘তিলত্তমা’কে ধর্ষণ বা গণধর্ষণের পর নৃশংস বর্বরোচিত ভাবে খুন করা হয় । এই ঘটনায় সঞ্জয় রায় নামে একজন সিভিক ভলেন্টিয়ারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে । কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী এই ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডে আরো অনেকে যুক্ত ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে । তিলোত্তমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই নৃশংস ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা বিশ্ব । সেই বিক্ষোভের মাঝেই গত ১৪ই আগস্ট পূর্ব বর্ধমান জেলার শক্তিগড়ে গলা কেটে খুন করা হয় এক আদিবাসী তরুণীকে । তরুণীর রক্তাক্ত নিথর দেহের পোশাক অসংলগ্ন থাকায় তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে সন্দেহ পরিবারের । যদিও আজ পর্যন্ত এই ঘটনায় খুনিকে গ্রেফতার করতে পারিনি শক্তিগড় থানার পুলিশ । এদিকে পরপর একই প্রকৃতির ঘটনা ঘটতে থাকায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠলো আদিবাসী সংগঠন ।
দুই ঘটনাতেই দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে ফাঁসির দাবিতে আজ মঙ্গলবার মেমারির দু’নম্বর ব্লকের সাতগেছিয়া বাসস্ট্যান্ডে চৌমাথায় সড়কপথ অবরোধ করে তুমুল বিক্ষোভ দেখালো ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহলের বেশ কিছু মহিলা ও পুরুষ সদস্যরা৷ প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে চলে এই অবরোধ । সংগঠনের পূর্ব বর্ধমান জেলা ও মেমারি দুই মুলক কমিটির দাবি ছিল, নারী সুরক্ষা এবং পূর্ব বর্ধমান জেলার শক্তিগড়ের প্রিয়াঙ্কা হাঁসদা ও আর জি করের চিকিৎসক তরুনীকে ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার । বিক্ষোভকারী মিতালী কিস্কু বলেন, ‘বলা হয় আমাদের দেশ স্বাধীন । কিন্তু আমরা, এরাজ্যের মা বোনেরা স্বাধীন নই ।’ তিনি বলেন, ‘প্রিয়াঙ্কা হাঁসদাও বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন নার্স ছিলেন । কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের মতোই তাকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে । আমরা চাই অবিলম্বে অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের পর ফাঁসিতে ঝোলানো হোক।’
প্রসঙ্গত,আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে স্বাধীনতা দিবসের মধ্যরাত যখন গোটা বাংলার রাস্তা মহিলারাদের দখলে সেই সময় পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় থানার নান্দুর গ্রামের ঝাপানতলা এলাকার বাসিন্দা ২২ বয়সী প্রিয়াঙ্কা হাঁসদা নামে ওই নার্সের বাড়ির পিছনে নির্জন জাগায় মেলে তার গালাকাটা রক্তাক্ত মৃতদেহ। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নার্সিং ট্রেনিং-এর পর ব্যাঙ্গালোরে একটি শপিং মলে কাজ করতে চলে যান প্রিয়াঙ্কা । বছর খানেক আগে তিনি শপিং মলে কাজে যোগ দেন। সেখান থেকে দুদিন আগে তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শৌচাগারে যাবার নাম করে তিনি ঘর থেকে বের হন। তারপর থেকে বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে যাবার পরেও প্রিয়াঙ্কা ঘরে ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন দুশ্চিন্তায় পড়েন। মেয়ের খোঁজে নামেন বাবা-মা। খোঁজ চালাতে চালানোর সময় বাড়ির পিছনে আনুমানিক ১০০ মিটারের মধ্যেই প্রিয়াঙ্কার গলা কাটা মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন পরিবারের লোকজন ।
ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহলের নেতা বিজয় চন্দ্র সোরেন, বিষান মান্ডিদের অভিযোগ,ঘটনার পর ৬ দিন কেটে গেলেও পুলিশ এখনো ঘাতক বা ঘাতকদেরকে গ্রেফতার করতে পারেনি ৷ আরজি করের ঘটনার মতই প্রিয়াঙ্কাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে । আমাদের দাবি ঘাতককে গ্রেফতার করে অবিলম্বে ফাঁসিতে ঝোলানো হোক ।’ আরজি কর হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসকের ধর্ষণ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রকৃত আসামিদের চিহ্নিত করে তাদেরও অবিলম্বে ফাঁসিতে ঝোলানোর দাবি জানিয়েছেন তারা । আজ আদিবাসী সংগঠনের জেরে মেমারি-মন্তেশ্বর এবং কালনা বর্ধমান রোড অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ।।