প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০২ জুলাই : গাছ কাটার ‘প্রতিবাদ’ করায় দলেরই কর্মীদের হাতে নির্মম ভাবে প্রহৃত হলেন এক তৃণমূল কর্মী । আক্রান্তের নাম আব্দুল মতিন শেখ । তার বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার আবুজহাটি-২ পঞ্চায়েতের কাঁটাগোড়িয়া গ্রামে । মারধোরের ঘটনায় জড়িত গ্রামেরই শাসকদলের ৩ কর্মীর নামে জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রহৃত ওই তৃণমূল কর্মী।দায়ের হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে পুলিশ তদন্ত শুরু করেই ।এই ঘটনা তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দের প্রকাশ বলে জানিয়েছেন আবুজহাটীর বাসিন্দারা। আর তা মেনেও নিয়েছেন জামালপুরের তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীরই নেতারা ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে , কয়েকদিন আগে আবুজহাটির কাঁটাগোড়িয়া গ্রামের সেচখালের ধারে থাকা ২-৪ টি গাছ কাটা নিয়ে দু’গোষ্ঠীর বিবাদ বাঁধে । এক গোষ্ঠী আবুজহাটী ২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সমর পালের অনুগামী । অপর গোষ্ঠী ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খাঁনের অনুগামী । তারা সমরপালের অনুগামীদের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে গাছ কাটার অভিযোগ এনে সেচ দপ্তর সহ প্রশাসনে নানা মহলে অভিযোগ জানায়। তা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর বিরোধ আরও চরমে ওঠে ।মেহেমুদ খাঁনের অনুগামী আব্দুল মতিন শেখকে বুধবার বিকালে উপপ্রধান সমর পালের অনুমাগীরা ব্যাপক মারধোর করে বলে অভিযোগ । মারধোরে সংজ্ঞা হারিয়ে আব্দুল মতিন গ্রামের একটি জমির ধারে পড়েছিলেন। খবর পেয়ে মেহেমুদ খাঁনের অন্য অনুগামীরা তাঁকে উদ্ধার করে জামালপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করান ।
পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে আব্দুল মতিন জানিয়েছেন, উপপ্রধানের অনুগত রহিম মল্লিক ,নিসান চৌধুরী ও সেখ সাহাদত তাঁকে মারধোর করেছে ।আব্দুল মতিনের অভিযোগ , ওই তিনজনই গত বুধবার বিকালে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁকে লাঠি, রড দিয়ে মারধর করে। গাছ কেটে পাচারের ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন বলেই
তাঁকে মারধোর করা হয়েছে বলে আব্দুল মতিন এদিন দাবি করেন । গাছা কাটা নিয়ে আরও যারা প্রতিবাদ করেছেন তাঁদেরকেও মারধোর করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে আব্দুল মতিন পুলিশকে জানিয়েছেন ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে গাছ কাটা নিয়ে
সেচ দপ্তরও জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে । গোটা ঘটনা নিয়ে মেহেমুদ খাঁনের অনুগত ব্লক তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি ভূতনাথ মালিক বলেন “,যারা বেআইনি ভাবে গাছ কেটেছে ও গাছ কাটার ঘটনার প্রতিবাদ করা ব্যক্তিকে মারধোর করেছে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি তাঁরা পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারকদের কাছে জানিয়েছেন“। অন্যদিকে উপপ্রধান সমর পাল বলেন ,“পঞ্চায়েতের গাছ গ্রামের উন্নয়নের কাজে লাগানোর জন্যে কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে গাছ কাটতে বাধা সৃষ্টি করা হয় । গ্রামবাসীরা তার প্রতিবাদ করেছে। কেউ কাউকে মারধোর করেনি । সব সাজানো ঘটনা । এইসব মিথ্যা অভিযোগ এনে গ্রামের পরিবেশ উত্তপ্ত করা হচ্ছে ।’
পুলিশ জানিয়েছে, এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার ওই গ্রামে দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে । এখন গ্রামের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ।।