এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,২০ আগস্ট : কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ বছর বয়সী এক নারী শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় বড় সিদ্ধান্ত নিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালত ঘোষণা করেছে যে দেশ ব্যাপী ডাক্তারদের সুরক্ষার জন্য একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করতে যাচ্ছে। আদালতের তত্ত্বাবধানে এই টাস্কফোর্স গঠন করা হবে এবং চিকিৎসকদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সিজেআই ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ এই মামলার শুনানি করেন।
এসসি বিষয়টি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে গ্রহণ করেছে। আজ শুনানির সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সিজেআই । তিনি বলেন, নিহতের লাশ দেখানো হয়েছে। আমরা সর্বত্র দেখেছি যে নির্যাতিতার পরিচয় দেখানো হয়েছে, যখন এটি করা উচিত ছিল না, । আদালত প্রশ্ন করেন, অধ্যক্ষ প্রথমে হত্যাকে আত্মহত্যা বলেছেন কেন?অধ্যক্ষ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন কিনা তা জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত বলেন, আমরা চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আদালত জানতে চাইলেন কীভাবে নির্যাতিতার পরিচয় জানা গেল। ৭ হাজার মানুষ হাসপাতালে প্রবেশ করলে সেখানে পুলিশ কী করছিল? খুব মারাত্মক ঘটনা ঘটেছে। আমরা সিবিআইয়ের কাছে স্ট্যাটাস রিপোর্ট চাই। আমরা একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করতে যাচ্ছি। আদালতের তত্ত্বাবধানে একটি পরীক্ষা বাহিনী গঠন করা হবে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে তদন্তকারী সংস্থাকে এ তথ্য জানাতে হবে। এখনো পর্যন্ত কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তদন্ত কতদূর গেছে জানতে চেয়েছে আদালত । পাশাপাশি চিকিৎসকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানিয়েছে আদালত।
সিজেআই বলেছেন যে আমরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়েছি কারণ ধর্ষণ-খুন ছাড়াও এটি সারা দেশে ডাক্তারদের নিরাপত্তার বিষয় । আমরা নিরাপত্তার কথা শুনব। আমরা চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন, বিশেষ করে নারী চিকিৎসক ও তরুণ চিকিৎসকদের। সিজেআই বলেছেন যে আমরা নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ নিয়ে চিন্তিত। ময়নাতদন্তের পর ভিকটিম ও তার লাশের ছবি দেখানো বিরক্তিকর। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিকটিমের ছবি এবং নাম প্রচার করায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সর্বত্র নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ করা হয়। যখন এমনটা হওয়া উচিত হয়নি। সিজেআই পশ্চিমবঙ্গকে জিজ্ঞাসা করলেন, অধ্যক্ষ কেন হত্যাকে আত্মহত্যা বলেছেন? ভিকটিমের বাবা-মাকে দেরি করে কেন তথ্য দেওয়া হয়েছিল? তাদের প্রথমে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। অধ্যক্ষ কি করছিলেন? এফআইআর দায়েরে দেরি কেন? এটা খুবই গুরুতর বিষয় ।
সিজেআই বলেন, পুলিশ কেন অপরাধ স্থল রক্ষা করেনি? কেন হাজার হাজার মানুষকে ঢুকতে দেওয়া হল? অধ্যক্ষকে কেন অন্য কলেজে বদলি করা হলো? সিজেআই বলেছেন যে সিবিআইকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে এই মামলায় স্ট্যাটাস রিপোর্ট দাখিল করতে হবে। বর্তমানে তদন্ত সংবেদনশীল পর্যায়ে রয়েছে, তাই সরাসরি আদালতে প্রতিবেদন দিতে হবে। সিজেআই জিজ্ঞেস করলেন- অধ্যক্ষ কী করছিলেন? এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়নি। পরে অভিভাবকদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ কি করছে? গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। দুর্বৃত্তদের কি হাসপাতালে ঢুকতে দেওয়া হয়েছিল? সিজেআই বলেছেন যে আমরা একটি জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠন করতে চাই যাতে সমস্ত ডাক্তার অংশগ্রহণ করবেন। চিকিৎসকদের তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বাস করুন, বুঝুন, সারা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তাদের হাতে আছে ।
আদালত জিজ্ঞাসা করে- কে এবং কখন এফআইআর দায়ের করেছে? এ বিষয়ে আদালতকে বলা হয়, রাত ১১.৪৫ মিনিটে প্রথম এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়। সিজেআই বলেন, মৃতদেহ বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তরের ৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর কেন এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়? পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও হাসপাতাল প্রশাসনকে কটাক্ষ করে সিজেআই বলেন, দেরিতে এফআইআর নথিভুক্ত করা হল কেন? কী করছিল হাসপাতাল প্রশাসন? সিজেআই বলেন, আমরা চিকিৎসকদের কাজে ফিরে আসার অনুরোধ করছি। আমরা চিকিৎসকদের কাছে আবেদন জানাই। আমরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখানে আছি। আমরা তাদের হাইকোর্টের জন্য ছাড়ব না। এটি একটি মহান জাতীয় স্বার্থের বিষয়।
সিজেআই বলেন, হত্যার সময় নিহতের বাবা-মা উপস্থিত ছিলেন না। এফআইআর নথিভুক্ত করার দায়িত্ব ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। রাজ্যের তরফ থেকে জানানো হয়, রাত ১১.৪৫ মিনিটে প্রথম এফআইআর দায়ের হয়। প্রধান বিচারপতি তখন জানতে চান, কেন এত দেরিতে এফআইআর? কেন পরিবারের তরফে প্রথম এফআইআর দায়ের হল? প্রিন্সিপ্যাল, ভাইস প্রিন্সিপ্যাল কী করছিলেন? প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন,বিকালে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয় খুন। এফআইআর দায়ের হয়েছিল বেলা ১১টা ৪৫মিনিটে।এটিকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়, বলেছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। আমরা একজন তরুণ ডাক্তারের সাথে মোকাবিলা করছি যিনি একজন যৌন বিকৃত পুরুষের দ্বারা ধর্ষিত হচ্ছেন, কিন্তু তার একটি পশুসুলভ প্রকৃতিও রয়েছে। আমি এটাকে রাজনৈতিক ইস্যু করতে চাই না। অভিভাবকদের ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ও তেলঙ্গনার এক চিকিৎসক আরজি কর ইস্যুতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখেছিলেন কয়েকদিন আগে। সেই চিঠিতে আরজি করের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করার আর্জি জানানো হয়। অন্যদিকে তেলঙ্গনার সেকেন্দ্রাবাদের আর্মি কলেজ অব ডেন্টাল সায়েন্সেস-এর চিকিৎসক মনিকা সিংও একটি আবেদনপত্র লেখেন। এরপরই স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করে সুপ্রিম কোর্ট।রাজ্য সরকারের তরফে এদিন আইনজীবী হিসেবে সওয়াল করেন বর্ষীয়ান আইনজীবী কপিল সিব্বল ।।