এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৫ আগস্ট : কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিজিটি তরুনী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় একটা অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । ওই অডিওতে যা দাবি করা হয়েছে তা রীতিমতো শিউরে ওঠার মত ঘটনা । ভিডিওট নিজের এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় আইটি সেল ইনচার্জ অমিত মালব্য । তিনি লিখেছেন,’পশ্চিমবঙ্গের এই ভাইরাল অডিও ক্লিপটি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এবং বিশেষ করে আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পচন উন্মোচন করে। এই সব ঘটছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরদারিতে, যিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বটেন । মিডিয়াতেও এর অনেকটাই লেখা হয়েছে।’
মহিলা কন্ঠে ৬ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ওই অডিওটিতে তরুনী চিকিৎসককে রীতিমতো পরিকল্পনা করে নৃসংশভাবে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে । মহিলা বলেছেন,’এত কষ্ট হচ্ছে ভিতরে যে হাসপাতালে বসে থাকতে পারছিনা৷ ডাক্তাররা সবাই খুব ডিস্টার্বড । আজকে তো ওপিডি বন্ধ রাখা হয়েছে। তোরা জানিস, সমস্ত ঘটনা যা শুনলাম, আর জি করের ভেতরের ডাক্তারদের বন্ধু মারফত ছড়িয়ে আমার কাছে এসেছে । আসলে যেটা ঘটেছে সেটা, শুনে আমার বিশ্বাস করতে কেমন লাগছে রে । আমাদের পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেকটা মেডিকেল কলেজে, বিশেষ করে কলকাতার সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষরা, ডিপার্টমেন্টাল হেডরা, প্রিন্সিপালরা বিশেষ করে, পাস করানোর জন্য স্টুডেন্টদের কাছ থেকে রীতিমতো টাকা নেয় । যেসব স্টুডেন্টরা, ইন্টার্নরা,পিজিটিরা যারা ভালো করে ক্লাস করে না ঠিকমতো থিসিস জমা দেয় না, পিজিতে তো থিসিস জমা দিতে হয়, বা যারা এমবিবিএস ফাইনাল পাস করবে না সাপ্লি পাইয়ে দেবে, ইন্টার্নে কম্পপ্লিশন দেবে না, তারা রেজিস্ট্রেশন নাম্বার পাবে না । এই সমস্ত ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা নেয় । সমস্ত জায়গাতেই এইটা আছে ।’
বলা হয়েছে,এরমধ্যে নিকৃষ্ট থেকে নিকৃষ্টতম হচ্ছে আর জি কর মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষ । সেখানে ভাব, ওনার একটা বিশাল নেক্সাস ছিল । উনি বেশ কিছু ইন্টার্ন, হাউস স্টাফ দিয়ে ওই নেক্সাসটা চালাতেন । তারা ওখানে একটা সেক্স র্যাকেট চালাতো । তারা একটা ড্রাগ র্যাকেট চালাত । ড্রাগ র্যাকেট মানে হেরোইন,ব্রাউন সুগার মদ খাওয়া নয়, ড্রাগ মানে কম টাকায় যে ওষুধ পাওয়া যায়, ওষুধ না জল ভগবান জানে, সেই ওষুধের কোটি কোটি টাকার যে টেন্ডার বেরুতো সেই ওষুধ গুলো নিয়ে ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা….সেই সমস্ত টাকার একটা বড় অংশ যত পার্টি ফান্ডে । বুঝতে পারছিস সেই জন্য উনি পার্টির এত কাছের । পার্টির মানে একদম খোদ উপর লেভেলের, আসল জায়গার কাছে ।
আর উনি যে নেক্সাস টা চালাতেন তাতে রীতিমতো কোন ইন্টার্নকে উনি পাস করাবেন, কোন পিজিটিকে থিসিস কমপ্লিট করাবেন সেগুলো সব ভয় দেখিয়ে টাকা নিতেন । আর তার হয়ে কাজ করতে ইন্টার্ন হাউস স্টাফের একটা বড় নেক্সাস ।
আর এই পিজিটি মেয়েটি অত্যন্ত ভালো । তার থিসিসটা কমপ্লিট করা বা না বলে হুমকি দিচ্ছিল । এ এটা জানতে পেরে গিয়ে বলেছিল আমি এটা কোন রকম ভাবে মেনে নেব না । আমি এর বিরুদ্ধে যাব এবং আমি সবকিছু ফাঁস করে দেব । তখন তাকে রীতিমতো ধমক দেওয়া হয়েছিল । এটা চলছিল শেষ ৬ মাস ধরে । ছ মাস ধরে তাকে হুমকি দেওয়া, প্রথম দিকে তাকে বেশি বেশি অত্যাচার করছিল । কিরকম? বেশি বেশি করে নাইট ডিউটি দিচ্ছে । এক সময় ছত্রিশ ঘন্টা ডিউটি । বেশি বেশি করে খাটানো….এগুলো সব চেস্টের যে ডিপার্টমেন্টাল হেড সেও জানে । পিজিটিরা সবাই জানে । প্রিন্সিপালের নির্দেশই হচ্ছে এবং ওনার নেক্সাসের ছেলেমেয়েরাই কাজ করছে ।
তারা ছয় মাস ধরে এটা করেছে । তাতেও যখন আটকাতে পারেনি ঐদিনটা ওরা ঠিক করেছে,যেদিনে ঘটনাটা ঘটেছে । সেদিনের কেমন প্লান এবং গট আপ গেম দেখ… সেদিন ওই ঘরে ওই সেমিনার রুমে প্রত্যেক দিনই চারতলার আরো সিনিয়ার বা জুনিয়র পিজিটি বিশ্রাম নিতে যেত । অনেকেই ওই ঘরে যেত। কিন্তু সেদিন ওকে একা বলেছো তুমি ঘুমিয়ে পড়ো । তাকে একা রেখে এসেছে বাকিদের কাউকে যেতে দেয়নি । বলেছে ওই ঘরে আজকে ঘটনা ঘটছে…কাজ হচ্ছে ওই ঘরে কেউ যাবেনা ।
সেদিন যখন ওর সাথে চারজন খাওয়া দাওয়া করেছে… এই চারজনের মধ্যে একটা মেয়ে পর্যন্ত ছিল… সে কেমন মেয়ে চিন্তা কর । তা ডাক্তার না জানোয়ার জানিনা । আমি জানোয়ার বললেও জানোয়ারদের অপমান করা হবে । জানোয়ারদের সমাজেও এমন কাজ হয় না । ডাক্তার নাকি আমি বলতে পারব না।
এই ইন্টার্ন মেয়েটি আরেকটি ইন্টার্নের গার্লফ্রেন্ড । তার সাথে ওই পিজিটি মেয়েটি প্রচুর ঝগড়া হয় । ঝগড়া হওয়ার পরে তারা হুমকি দিয়ে চলে গেছে । তারা বলেছে তুমি ঘুমাও । এবার ও তো আর জানে না, ভালো মনের শুতে এসেছে । তারপরে তারা গিয়ে মদটদ খেয়েছে । সাতজন মিলে চড়াও হয়েছে । তার হাত দুটোকে দুজন দুপাশে ধরে রেখেছে । আর সেই কাজে সেই ইন্টার্ন মেয়েটিও সাহায্য করেছে । দুজন অর পা দুটো টেনে জরাসন্ধের ছিঁড়ে ফেলে । মানে ছেড়ার মত করে টেনেছে যাতে তার পিলভিক বোন ভেঙেছে । কলার বোন ভেঙেছে । কি বিপর্যস্ত… কি বিধ্বস্ত… কি নিশংস অত্যাচার করেছে । ওকে উল্টো দিক করে শুইয়েছে । পিঠের উপর দিয়ে বুট পড়ে হেটে গেছে । মাথা থাকে এমন থেঁতলে দিয়েছে যে স্কাল ফ্রাকচার হয়ে গেছে । এই সমস্ত করার পরে তাকে শ্বাসরোধ করে মেরেছে । মারার পরে, আরো ভয়ংকর, একটা মৃত মানুষকে মিনিমাম ডিগনিটি দিতে জানেনা । তারা নিচে এসে দেখেছে ওই সঞ্জয় তখন মদ খাচ্ছিল গ্রুপ ডি স্টাফ দের সাথে । সঞ্জয়কে তারকাটা সঞ্জয় বল ওরা.. বলে ফল গাই । মানে ওর একটু আলুর দোষ আছে যখন তখন প্রস্টিটিউট এলাকায় যায় । এবার দেখে যে একে দিয়ে একটা যদি রেপ করিয়ে দিতে পারি তাহলে ঘটনাটার মোড়টা অন্য দিকে ঘুরে যাবে । এইবার ওকে বলেছে যা সেমিনার রুমে তোর জন্য রেখে এসেছি তুই এবারে গিয়ে কাজ করে দিয়ে আয় । ও এসে ওই ডেড বডিকে রেপ করেছে । যাতে তার শরীরের সিমেন পাওয়া যায় ।
আমি নাম করে ফেললাম সবকিছুই । যে নামগুলো তোকে পাঠিয়েছি এরা সব জড়িত জানিস । কিন্তু কোথাও কোন প্রমাণ নেই । সেদিন ওই সাত জন মিলে যে বাথরুমেতে হাত পা ধুয়েছে রক্ত ধুয়েছে সেই টাকে সাত তাড়াতাড়ি প্রমাণ লোপাট এর জন্য ওই দেয়ালটা ভেঙে দিয়ে… মানে ওই বাথরুমের জায়গাটাই ভাঙতে হচ্ছে ওদের । ওখানে নাকি ওরা রুম বানাবে । কালকে দেখেছিস তোরা খবরে ।
আর বেশি বলতে পারছি না… তোরা তো সবাই প্রটেস্ট করিস… আমরা তো আমাদের দিক থেকে করছি… কিন্তু কিছুই হবে না এই পোড়া দেশে কিছু হবার নেই। শুধু ভেতরে ভেতরে ঘুমড়ে ঘুমড়ে কষ্ট পাওয়া । আর আগামী প্রজন্মের যে ডাক্তাররা বেরুবে তাই ইন্টার্ন বা পিজিটি যাদের কাছে আমরা ভবিষ্যতে যাব…. তারা কি ডাক্তার নাকি আমি জানিনা । কি করে আমরা তাদের কাছে যাব আর পরের প্রজন্মকে কি করেইবা সুরক্ষিত রাখবো ? যদিও এইদিন-এর পক্ষ থেকে অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি ।।