এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৫ আগস্ট : আর জি কর হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসকের গনধর্ষণ হত্যাকান্ডে পুলিশকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । আর তাতেই অক্সিজেন পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। তার সাফাই,’কলকাতা পুলিশ কী করেনি ? এই মামলায় সবকিছু করা হয়েছে। প্রমাণ সংগ্রহ করতে আমার কর্মীরা দিনরাত কাজ করেছেন। মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা পরিবারকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছি। গুজব ছড়ানো হয়েছে যে, কোনও রাজনৈতিক মহাপাত্র এর সঙ্গে জড়িত। তিনি একজন ইন্টার্ন। যার বাবা-মা বিষয়টি ভেরিফাই করেছেন। ছোট জায়গা থেকে এসেছেন। ওঁর বাবা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। কোনও রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নেই তাঁদের। কেউ কেউ বলছেন, তিনি ওর বন্ধু। এটা দুর্ভাগ্যজনক। যা ঘটেছে তাতে আমি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। আমরা কোনও ভুল করিনি। আমরা কখনো বলিনি যে একজন ব্যক্তি যুক্ত আছেন। আমরা বলেছি, আমরা বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণের অপেক্ষায় আছি। সেটা সময় লাগে। অভিযুক্ত একই কথা বলে যাচ্ছেন।কোনও গুজবের ওপর ভর করে কোনও পিজি ছাত্রকে গ্রেফতার করতে পারি না। আমি এটা করতে পারি না। এটা আমার বিবেক বিরুদ্ধে। আমি একটা বিষয় পরিষ্কার, যেটা ঠিক সেটাই আমরা করেছি। অন্তর থেকে বলছি, আমরা কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করিনি। সিবিআই যদি সেটা প্রমাণ করতে পারে । আমরা দায়িত্বশীল বাহিনী। এভাবে প্রমাণ নষ্ট করতে পারি না।’
কিন্তু যত সাফাই তিনি দিন না কেন কলকাতা পুলিশ বা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কথায় কেউ ভরসা রাখতে পারছেন না । বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল মন্তব্য করেছেন, ‘পুরো তদন্ত ভুলপথে পরিচালনা করছিলো পুলিশ। হাসপাতালের প্রভাবশালীরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। নিছক সাধারণ ধর্ষণ আর খুনের ঘটনা নয়। গভীর ষড়যন্ত্র আছে।’
একটা সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের স্ক্রীন শর্ট নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে সেই ‘গভীর ষড়যন্ত্র’-এর কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি ৷ প্রতিবেদনে কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা হলিউডের থ্রিলারকেও হার মানাবে । বলা হয়েছে, আর জি কর হাসপাতালে মেডিকেল বর্জ্য, রক্তের পাউচ কালোবাজারি, মাদক ব্যবসা,হাসপাতালের হস্টেল ও ক্লাসরুমে চলত যৌন চক্র,এমনকি পতিতা পল্লি থেকে মহিলাদের নিয়ে এসে পর্ণগ্রাফি ভিডিও শ্যুট করা হত । মহিলার মৃতদেহের মুখে কোনো অভিনেত্রী বা কলেজের ছাত্রীর মুখ বসিয়ে পর্ণগ্রাফি ভিডিও করা হত বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে । ২০০১ সালের ২৫ আগস্ট সৌমিত্র বিশ্বাস নামে এক মেডিকেল পড়ুয়ার রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় । ওই পড়ুয়ার প্রেমিকার মুখের ছবি যৌন কর্মীর মুখে বসিয়ে পর্নোগ্রাফি করা হয় এবং তিনি প্রতিবাত করায় খুন হয়েছিল বলে সমসাময়িক পড়ুয়াদের সন্দেহ বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে । যদিও মৃতের পরিবার খুনের মামলা দায়ের করলেও পরে সেটা ধামাচাপা পড়ে যায় । গত শুক্রবার ভোর রাতে ওই তরুনী চিকিৎসকের ক্ষেত্রেও তেমন কিছু হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে ৷ আর জি করের এক ছাত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, তরুনীর শরীরের আঘাত দেখে এটা স্পষ্ট যে ঘটনাটি নিছক গনধর্ষণ-খুন নয়, বরঞ্চ পূর্ব আক্রোশ থেকে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তাকে । আর ওই তরুনী চিকিৎসক আরজি করের কিছু গোপন অবৈধ কর্মকাণ্ড জেনে ফেলার কারনেই তাকে এমন নৃশংসভাবে খুন হতে হয় । এমনকি হাসপাতালের বেআইনি কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস করে দেওয়ার কথাও চিন্তাভাবনা করেছিলেন নিহত তরুনী চিকিৎসক ।
এদিকে বুধবার রাতে আরজি করে দুষ্কৃতী হামলার ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টার ফের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে । দাবি করা হচ্ছে যে সেমিনার হল চার তলায়। অর্থাৎ ইংরেজিতে যাকে বলে থার্ড ফ্লোর। সেইটাই হয়ত গুলিয়ে ফেলে দুষ্কৃতীরা। তাই তিনতলায় ভাঙচুর চালায় তারা। কিন্তু তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল সেমিনার হলে ভাঙচুর চালিয়ে তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা ! বুধবার রাতে কয়েক হাজার দুষ্কৃতী লরিতে চেপে আরজি কর হাসপাতালে হামলা চালায় । প্রায় ৪০ মিনিট ধরে অবাধ তান্ডব তান্ডব চালায় তারা । হাসপাতালের জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টার, এইচসিসিইউ সহ একাধিক বিভাগ। ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকা । পড়ুয়াদের কারো কারোর অভিযোগ যে পুলিশের মদতেই দুষ্কৃতীদের তান্ডব চলেছিল আরজি কর হাসপাতালে । এদিকে এই হামার দায় বিরোধী দলগুলির ঘাড়ে চাপিয়েছন মমতা ব্যানার্জি ।বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজভবনে চায়ের আমন্ত্রণে যাওয়ার পথে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বললেন, ‘এটা ছাত্রছাত্রীদের কাজ নয় । রাজনৈতিক দলগুলো ঢুকে অশান্তির সৃষ্টি করছে। রাম এবং বামেদের কাজ এটা।’ যদিও হামলার ঘটনার অব্যবহিত পরেই শুভেন্দু অধিকারী টুইট করে জানান যে তরুনী চিকিৎসকের ধর্ষণ খুনের প্রমান নষ্ট করার জন্য মমতা ব্যানার্জির নির্দেশেই এই হামলা হয়েছে ৷
অন্যদিকে এই মামলায় পুরোদমে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে সিবিআই । ধৃত সঞ্জয় রায়ের কল লিস্ট এবং টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করছে তদন্তকারী দল । ২৫ জনের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। যেখানে দিল্লি থেকে আসা সেন্ট্রাল ফরেন্সিক এবং মেডিক্যালের সদস্যরাও রয়েছেন। কার্যত তিনটি দলে ভাগ হয়ে শুরু হয়েছে তদন্ত। একটি দল ডেটা অ্যানালিসিস করছেন, অন্যদল ধৃত সঞ্জয় রায়কে দফায় দফায় জেরা করছে এবং অন্য দলের সদস্যরা বাকিদের জেরা করছেন । সিবিআইয়ের র্যাডারে রয়েছে আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ । তার ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে । বিশেষ করে ঘটনার পর তিনি কি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন এবং কি দেখছেন সবটাই খতিয়ে দেখা হবে বলে জানা গেছে । পাশাপাশি তাকে খুব শীঘ্রই জেরা করা হবে বলে খবর । আজ সকালেই মৃতার পরিবারের সদস্য এবং বাবা-মা’য়ের বয়ান রেকর্ড করেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা ।।