ভারত ছাড়াও সারা বিশ্বে ভগবান শিবের অনেক মন্দির রয়েছে। সেই সমস্ত মন্দিরগুলিতে পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কিছু মন্দিরে সঞ্চালিত অলৌকিক ঘটনা সারা বিশ্বে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। এর বাইরেও কিছু রহস্যময় মন্দির রয়েছে, যেগুলোর রহস্য আজ পর্যন্ত উন্মোচিত হয়নি। বেশিরভাগ সময় মানুষ ঈশ্বরের আশীর্বাদ পেতে এবং তাদের দুঃখ থেকে মুক্তি পেতে মন্দিরে যান। যার জন্য মানুষ ফুল, ফল, সোনা, রূপা ইত্যাদি নৈবেদ্যও দিয়ে থাকে। কিন্তু আজ এমন একটি মন্দির আছে যেখানে রোগ থেকে মুক্তি পেতে আরাধ্যকে ঝাড়ু নিবেদন করেন ভক্তরা ।
এই মন্দিরটি দেশের বৃহত্তম রাজ্য উত্তর প্রদেশের মোরাদাবাদের জেলার সম্বলের বাহজোই এবং সাদাতবাড়ি নামে একটি গ্রামে । যেটি পাতালেশ্বর শিব মন্দির বলে পরিচিত । এই মন্দিরে সোমবার, শিবরাত্রি এবং শ্রাবন মাসে ভগবান শিবকে ঝাড়ু দেওয়ার জন্য ভক্তদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
এই মন্দিরে উপবিষ্ট ভগবান ভোলেনাথের পবিত্র শিবলিঙ্গ সম্পর্কে বলা হয় যে এই শিবলিঙ্গের ভিত্তি পাতাল পর্যন্ত চলে গেছে । তাই এই মন্দিরটি পাতালেশ্বর মহাদেবের মন্দির নামে পরিচিত। কথিত আছে যে শিবলিঙ্গের গভীরতা পরীক্ষা করার জন্য বহুবার উপড়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু কেউই পবিত্র শিবলিঙ্গটিকে সরাতে পারেনি। পাতালেশ্বর মন্দির সারা দেশে বিখ্যাত। ভগবান শিবকে দুধের সাথে ঝাড়ু দেওয়ার প্রথা বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে এই মন্দিরে। এই মন্দিরে ঝাড়ু দিতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। স্থানীয়দের মতে, এই মন্দিরে শিবকে ঝাড়ু নিবেদন করলে চর্মজনিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
কথিত আছে, কয়েক শতাব্দী আগে ভিখারী দাস নামে এক বণিক ছিলেন, তিনি চর্মরোগে ভুগছিলেন। অনেক চিকিৎসা করেও রোগ ভালো হয়নি । একবার তিনি কোথাও যাচ্ছিলেন এবং পথে তৃষ্ণা পেলে তিনি জল পান করার জন্য কাছের এক আশ্রমে যান । যেখানে তিনি একটি ঝাড়ুতে হোঁচট খান । কথিত আছে, ঝাড়ু স্পর্শ হতেই তার চর্মরোগ সেরে যায়। চর্মরোগ থেকে মুক্তি পেয়ে ভিখারী দাস আশ্রমে বসবাসরত সাধুদের অনেক টাকা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু সাধুরা নিতে রাজি হননি। তিনি বললেন, এই টাকা দিয়ে এখানে মন্দির তৈরি করুন। এরপর ব্যবসায়ী সেখানে একটি শিব মন্দির তৈরি করেন। এই মন্দিরটি পরে সাদাত বাড়ি শিব মন্দির নামে পরিচিতি লাভ করে। এরপর এখানে ঝাড়ু দেওয়ার প্রথা শুরু হয়।
পাতালেশ্বর মহাদেব শিব মন্দিরটি ১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বছরে দু’বার এই মন্দিরে মেলাও বসে। এই মন্দির চত্বরের কাছেই পশুপতিনাথ মন্দিরের অনুরূপ আরেকটি মন্দিরও স্থাপিত, যেখানে পাঁচশত একটি শিবলিঙ্গ রয়েছে।।