এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৪ আগস্ট : আজ ১৪ আগস্ট বুধবার, পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে একটা তাৎপর্যপূর্ণ দিন । আর জি কর হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসককে গনধর্ষণ হত্যার ন্যায় বিচারের দাবিতে আজ রাত ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে মেয়েদের রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়ে ডাক দেওয়া হয়েছে – ‘মেয়েরা রাতের দখল নাও‘ । এক মহিলা শাসকের বিরুদ্ধে এই এই আন্দোলন এক অর্থে ঐতিহাসিকও । এই ‘প্রতীকী’ আন্দোলনের ডাক প্রথমে কলকাতার মাত্র তিন জায়গা থেকে দেওয়া হয় । কিন্তু এখন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা রাজ্য জুড়ে । দলহীন এবং পতাকাহীন এই আন্দোলনে সাড়া দিয়েছে উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ । আর জি কর হাসপাতালের “নির্ভয়ার” ন্যায়বিচারের দাবিতে দলহীন এবং পতাকাহীন এই আন্দোলনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আজ রাস্তায় নামতে চলেছেন কার্যত গোটা রাজ্যের মানুষ । আন্দোলন এখন সীমিত নেই মহিলাদের মধ্যে । পরিবারের সকল সদস্য তাতে সামিল হতে চলেছে । বিরোধী দলগুলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে নামতে চলেছে রাস্তায় । আর এতেই সিঁদূরে মেঘ দেখছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস । তৃণমূলের একাংশও আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করতে শুরু করেছেন । এখন প্রশ্ন ‘মেয়েরা রাতের দখল নাও’ আন্দোলন কি টলিয়ে দিতে পারবে শাসকদলের ভিত ? শেখ হাসিনার মতই কি গদিচ্যুত হতে চলেছেন হতে চলেছেন মমতা ব্যানার্জিও ? কারন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মঙ্গলবার মমতা ব্যানার্জিকে ১৫ ই আগস্ট রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন । তিনি যে দুটি আওয়াজ তুলেছেন তার মধ্যে প্রধান হল, ‘নবান্ন থেকে মমতা ব্যানার্জিকে তাড়ানো’ । সিপিএমের কেউ কেউ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিতে আগুন ধরানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘দফা এক, দাবি এক, মমতার পদত্যাগ‘। যেমন বাংলাদেশে লেখা হয়েছিল ‘দফা এক, দাবি এক, হাসিনার পদত্যাগ’। একই শ্লোগান তুলেছে রাজ্য বিজেপিও ।
প্রসঙ্গত,১৯৭৫ সালে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়া শহরে জনৈক মাইক্রো বায়োলজিস্টকে খুনের ঘটনায় নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে । সেই সময় সুসান ‘সু’ আলেকজান্ডার স্পিথ নামে ওই চিকিৎসককে কর্মস্থল থেকে পায়ে হেঁটে বাড়ি যাওয়ার সময় গনধর্ষণের পর খুন করা হয় । তখন ‘মেয়েরা রাতের দখল নাও’-এর মতই প্রতীকি আন্দোলন ব্যাপক জনপ্রিয় হয় আমেরিকায় । পরবর্তী কালে ১৯৭৭ সালে ব্রিটিশ শহর লিডসে নারীমুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবে শুরু হয়েছিল ‘রিক্লেইম দ্য নাইট‘ আন্দোলন । তার পরে নানা ঘটনায় দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে এই আন্দোলনে পথে নেমেছেন মেয়েরা। দিল্লির ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতায় কয়েক বার ওই নামে আন্দোলনও হয়েছিল।
আর জি কর হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসককে গনধর্ষণ হত্যার পর রাজ্যের শাসকদলের ভূমিকা ও পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়ায় অসন্তুষ্ট মানুষ ফের একবার এই প্রতীকী আন্দোলনের মাধ্যমে ন্যায়বিচারকে নিশ্চিত করতে চাইছে । মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টও এই ঘৃণ্য ঘটনায় কলকাতা পুলিশ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রমান নষ্টের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন । রাজ্য সরকারের ভূমিকাকেও কাঠগড়ায় তুলেছেন মহামান্য আদালত । গত শুক্রবার আর কর হাসপাতালের সেমিনার হলে তরুনী চিকিৎসকের নগ্ন ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পদক্ষেপ,পুলিশ কমিশনারের পরস্পর বিরোধী মন্তব্য এবং হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের গাঝাড়া মন্তব্যে চরম ক্ষুব্ধ চিকিৎসক,স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে রাজ্যের প্রতিটি স্তরের মানুষ ।
তারই প্রতিক্রিয়ায় প্রথমে কলকাতার কলেজ স্ট্রিট, অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস এবং যাদবপুর এইটবি বাস স্ট্যান্ডে ‘মেয়েরা রাতের দখল নাও’ ডাকে জমায়েতের আহ্বান জানানো হয় । সোমবার রাত থেকে ক্রমশ কলকাতার উত্তরপাড়া শখের বাজার, সোদপুর বিটি রোড মোড়, চন্দননগর স্ট্র্যান্ড, কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিস মোড়ে মধ্যরাতে মেয়েদের দখল নেওয়ার ওই পোস্টার ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এখন এটা ছড়িয়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গেও । বর্ধমান শহরের কার্জন গেট, দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার, রায়গঞ্জ, শিলিগুড়ি, মালদহ শহর, বহরমপুর, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া শহর, ব্যান্ডেল, শ্রীরামপুর প্রভৃতি এলাকায় ‘মেয়েরা রাতের দখল নাও’ ডাকে একজোট হতে চলেছে মানুষ । পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের মত একটা গ্রাম্য এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে এই আন্দোলন । কাটোয়ার দাঁইহাট শীতলতলা মোড়ে আজ রাত সাড়ে ৯ টায় জমায়েত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে । দাঁইহাট অধিবাসীবৃন্দের আরও একটা শ্লোগান হল, ‘জ্বালো স্বাধীনতার আলো’ ।।