এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৩ আগস্ট : কলকাতার ‘রাধা গোবিন্দ কর মেডিকেল কলেজ‘(আর জি কর)-এর তরুনী চিকিৎসক আদপে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় দ্বারা ধর্ষিতা হয়েছিলেন নাকি গনধর্ষিতা হয়েছিলেন তা এখনো নিশ্চিত নয় পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের নেতৃত্বাধীন পুলিশ । যদিও আর জি কর হাসপাতালের মেডিকেল পড়ুয়ারা দাবি করেছেন যে নিহত তরুনীর শরীরে তিনজনের বীর্যের নমুনা পাওয়া গেছে এবং এই গনধর্ষণ হত্যাকাণ্ডে অন্তত ৩ জন যুক্ত ছিল । বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল দাবি করেছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের এক সাংসদের ভাগনে এই ঘটনায় যুক্ত ।
যাই হোক, আর জি কর হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসকের গনগর্ষণ হত্যাকাণ্ডের চিকিৎসকের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে । আর সেই ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উঠে এসেছে হাড়হিম করা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিবরণ । প্রতিবেদনে দেখা গেছে,তরুনী চিকিৎসকের চশমার কাঁচ ভেঙে তার চোখে প্রবেশ করেছে । নৃসংশতার সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করেছে ধর্ষক-ঘাতকরা । তরুনীর গোটা শরীর জুড়ে ছোট-বড় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।মাথায় আঘাতেরও খবর পাওয়া গেছে। কারণ আসামিরা নিহতের মাথায় দেয়ালে আঘাত করেছিল । দেয়ালের সাথে তার মাথা আঘাত করার সময়, অভিযুক্তরা তরুনীর মুখ চাপ দিয়ে ঢেকে দেয়, যার ফলে তার মুখে আঘাতের চিহ্ন ছিল ।
প্রতিবেদনে হত্যা, প্রাক-মৃত্যুর প্রকৃতি এবং ধর্ষণের কথা বলা হয়েছে। বলা হচ্ছে নির্যাতিতাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়। ভোর ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে তার মৃত্যু হয় তরুনীর । এর আগে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও আত্মহত্যার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলা হয়, ধর্ষণের পর নির্যাতিতাকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকের গোপনাঙ্গ, চোখ ও মুখ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। মুখে ও নখেও আঘাতের চিহ্ন ছিল। তার পেটে, বাম পায়ে, ঘাড়ে, ডান হাতে ও ঠোঁটে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার কলারবোনও ভেঙে গেছে।
গত ৮-৯ আগস্ট রাতে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। কলকাতার ‘রাধা গোবিন্দ কর মেডিকেল কলেজ’ থেকে যেদিন শিক্ষানবিশ ৩১ বর্ষীয়া তরুনী চিকিৎসকের লাশ পাওয়া যায়, ওই দিন অন্য তিন চিকিৎসকের সঙ্গে নাইট ডিউটিতে ছিলেন তিনি । যার মধ্যে দুইজন চিকিৎসক ছিলেন চেস্ট মেডিসিন বিভাগের এবং একজন প্রশিক্ষণার্থী। একজন হাসপাতালের হাউজ স্টাফ ছিলেন তাদের সাথে । সেই রাতে এই সমস্ত ডাক্তার এবং স্টাফরা একসাথে রাতের খাবার খেয়েছিলেন। ওই চারজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছে ।
এদিকে এই ঘটনার তদন্তে ৭ সদস্যের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম(সিট) গঠন করেছিল কলকাতা পুলিশ । পরে সিটের সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ১৬৪ করা হয়েছে । কাজ চলবে তিন শিফটে। খতিয়ে দেখা হবে আর জি কর হাসপাতালের গত তিরিশ দিনের সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ।লক্ষ্য একটাই, কার কার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল সঞ্জয়ের? কাদের সঙ্গে মিশত সে? সেটাই খুঁজে বের করতে চাইছেন তদন্তকারী। কিন্তু এখনো সিপি বিনীত গোয়েলের নেতৃত্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়ার উপর আস্থা রাখতে পারছেন না আর জি কর হাসপাতালের পড়ুয়ারা । তারা আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উপরেও । একারনে হাইকোর্টের বিচারপতিদের তত্বাবধানে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তারা ।।