এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১২ আগস্ট : যত সময় যাচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে যে কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধর্ষণ-খুন হওয়া তরুনী চিকিৎসক একজন দ্বারা ধর্ষিত হননি, বরঞ্চ তিনি গনগধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ৷ আর এই গনধর্ষণে আরও অন্তত ২-৩ জন জড়িয়ে ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে । বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য আজ সোমবার সল্ট লেকে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মন্তব্য করেন, ‘ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে ‘ধনঞ্জয়’ বানানোর চেষ্টা চলছে ।’ এই বিষয়ে তিনি ‘মমতা ব্যানার্জি তার দলের প্রভাবশালীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন’ বলেও অভিযোগ তোলেন । তিনি এটাও সন্দেহ প্রকাশ করেন যে এই ঘটনায় একজনের পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়,আরও অন্তত ২ থেকে ৩ জন যুক্ত ছিল ।
এর মাঝেই একটি ফোন কলের অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়েছে । ওই অডিওতে আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধর্ষণ-খুনে একাধিকজন জড়িত থাকা এবং শাসকদলের কোনো প্রভাবশালীর কথা বলা হয়েছে । অডিওটি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় আইটি সেল ইনচার্জ অমিত মালব্য । তিনি এই ঘটনায় মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে তার দলের প্রভাবশালীদের বাঁচানোর অভিযোগ তুলে টুইট করেছেন,’আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের নেপথ্যে প্রভাবশালীদের রক্ষায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কতদূর যাবেন ? আরজি কর-এর একটি ভাইরাল ভিডিও, একজন পিজিটি এবং একজন ইন্টার্নের মধ্যে একটি আপাত কথোপকথন, যা যা-ই হোক না কেন প্রত্যাশিত ছিল তা নিশ্চিত করেছে – একটি শ্যাম তদন্ত!আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের নেপথ্যে প্রভাবশালীদের রক্ষায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কতদূর যাবেন ?
এরপর তিনি লিখেছেন,’ইন্টার্নকে বলতে শোনা যায় যে প্রিন্সিপাল “প্রকৃত অপরাধী” কে রক্ষা করার জন্য তদন্তটি ধামাচাপা দিচ্ছেন যার “দৃঢ় রাজনৈতিক সংযোগ” রয়েছে। একজন সিভিক ভলান্টিয়ারকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে উচ্চতর রাজনৈতিক কর্তাদের বাঁচানোর জন্য ! টিএমসি ব্যাকগ্রাউন্ড সহ দুই ইন্টার্নকে কেন তথাকথিত “হাই-প্রোফাইল তদন্ত কমিটিতে” অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা এখন বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কমিটিতে মনোরোগ বিভাগের এইচওডি নিয়োগের বিষয়টি ভুক্তভোগীকে মানসিক রোগী প্রমাণ করার জন্য করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে ভুক্তভোগীদের চরিত্রহনন নতুন নয়। নির্যাতিতাকে লাঞ্ছিত করার সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও, পুলিশ এটিকে আত্মহত্যা বলে অভিহিত করে।’
সব শেষে তিনি লিখেছেন,’মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে বাংলা অপরাধীদের রক্ষা করার এবং ক্ষতিগ্রস্তদের দোষারোপ করার অভূতপূর্ব পথ নিচ্ছে। বাংলায় একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করা হচ্ছে। ইন্টার্ন যা উপসংহারে এসেছিলেন তা বাড়ানোর জন্য – এটি কেবল আরজি কার নয় যে “ধ্বংস” তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে শাসনব্যবস্থাও ধ্বংসপ্রাপ্ত। যেন শিক্ষা, শিল্প ও অর্থনীতি ধ্বংস করাই যথেষ্ট নয়, সে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকেও বিপর্যস্ত করে ফেলছে !’
গত শুক্রবার আরজি করের কমিউনিটি হল থেকে তরুনী চিকিৎসকের নগ্ন ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধারের পর থেকেই পুলিশ কমিশনার বিনিত গোয়েলের একের পর পরস্পর বিরোধী বয়ানে প্রমানিত যে তার উপর যথেষ্ট চাপ আছে । ওইদিন তিনি তরুনীর মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে চালানোর চেষ্টা করেছিলেন । পরে তিনি ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে ‘মূল আসামি’ ধরে তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান । আর আজ মুখ্যমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে তিনি জানান যে এই ঘটনায় বাকি যুক্তদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার । তার এই একের পর এক পরস্পর বিরোধী বয়ানের পর নিরপেক্ষ তদন্ত প্রক্রিয়া বিস্তর প্রশ্ন উঠছে । যদিও বিনীত গোয়েলের তদন্ত প্রক্রিয়াতেই ভরসা রাখছেন মমতা ব্যানার্জি । কারন পানিহাটিতে নিহত তরুনীদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সিপি বিনীত গোয়েলের পাশে দাঁড়িয়ে মমতা ব্যানার্জি কলকাতা পুলিশকে সাতদিনের ডেডলাইন বেঁধে দেন । তারপরে তিনি তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলেন । কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ একটা মামলায় মুখ্যমন্ত্রী কেন আরও কলকাতা পুলিশকে আরও ৭ দিন সময় দিতে চাইছেন তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে । কারন ইতিমধ্যেই সিপি বিনীত গোয়েলের তদন্ত প্রক্রিয়ার আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন আন্দোলনকারীরা । তারা প্রমান লোপাটের আশঙ্কাও করছেন ।।