এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,১১ আগস্ট : বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে রয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ হস্তান্তর না করার জন্য তাকে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি । পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশী নাগরিকদের সতর্ক করে তিনি বলেছেন যে “বঙ্গোপসাগরের উপর কর্তৃত্ব” কায়েম করতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দখল নিতে চাইছে আমেরিকা । তাই তারা ভুলেও যেন ওই দ্বীপ আমেরিকার হাতে তুলে না দেয় । প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে রয়েছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। এই ছোট্ট দ্বীপের ৯টি গ্রাম মিলে রয়েছে প্রায় ৩,৭০০ জন বাসিন্দা । বাসিন্দাদের পেশা মূলত , পর্যটন নারকেল ও মাছ বিক্রি। বাংলাদেশ এই দ্বীপটি মায়ানমার থেকে বানিজ্যের জন্য ব্যবহার করে৷ এশিয়ায় কর্তৃত্ব কায়েম করার জন্য ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১.২ কিলোমিটার চওড়া এই দ্বীপের উপর দীর্ঘদিনের নজর রয়েছে আমেরিকার ।
ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া একটি বার্তায় হাসিনা বলেছেন,’আমি পদত্যাগ করেছি, যাতে আমাকে লাশের মিছিল দেখতে না হয়। ছাত্রদের লাশ নিয়ে তারা ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি তা করতে দিইনি, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। আমি ক্ষমতায় থাকতে পারতাম যদি আমি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সার্বভৌমত্ব আত্মসমর্পণ করতাম এবং আমেরিকাকে বঙ্গোপসাগরের উপর কর্তৃত্ব করতে দিতাম । আমি আমার দেশের জনগণের কাছে অনুরোধ করছি, ‘দয়া করে মৌলবাদীদের দ্বারা প্রতারিত হবেন না।’ তিনি বলেন,’আমি যদি দেশে থাকতাম, তাহলে আরও প্রাণ যেত, আরও সম্পদ ধ্বংস হয়ে যেত। তাই আমি দেশত্যাগের অত্যন্ত কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আপনাদের নেতা হয়েছি কারণ আপনি আমাকে বেছে নিয়েছিলেন, আপনারাই আমার শক্তি ।’
হাসিনা বলেন,’অনেক নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে এবং তাদের বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে আমার হৃদয় কেঁদে উঠছে… মহান আল্লাহর রহমতে আমি শীঘ্রই ফিরে আসব। আওয়ামী লীগ বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে। আমি চিরকাল বাংলাদেশের জন্য প্রার্থনা করব, যে জাতির জন্য আমার মহান পিতা সংগ্রাম করেছিলেন। যে দেশের জন্য আমার বাবা ও পরিবার তাদের জীবন দিয়েছে।’
কোটা আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,’আমি বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের কাছে পুনরাবৃত্তি করতে চাই। আমি তোমাদেরকে কখনো রাজাকার বলিনি। বরং তোমাদের উত্তেজিত করার জন্য আমার কথাগুলো বিকৃত করা হয়েছে। সেই দিনের পুরো ভিডিওটি দেখার জন্য অনুরোধ করছি। ষড়যন্ত্রকারীরা নির্দোষতার সুযোগ নিয়েছে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করতে আপনাদেরকে ব্যবহার করেছে।’
কোটা আন্দোলনের আগে হাসিনা গত এপ্রিলে সংসদে বলেছিলেন, আমেরিকা তার দেশে শাসন পরিবর্তনের কৌশল অবলম্বন করছে। তারা গণতন্ত্রকে দূর করতে এবং এমন একটি সরকার চালু করার চেষ্টা করছে যার গণতান্ত্রিক অস্তিত্ব থাকবে না। আর বাস্তবে ঘটেছেও তাই । হাসিনা ভারতে পালিয়ে আসার পর ইসলামি মৌলবাদীরা দেশ জুড়ে নৈরাজ্যের সৃষ্টি করে রেখেছে ।
হাসিনার ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতারা ঢাকার শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেন এবং অভিযোগ করেন যে মে মাসে ঢাকা সফরে আসা মার্কিন কূটনীতিক ডোনাল্ড লু এর জন্য দায়ী। নেতারা আরও অভিযোগ করেন যে চীনের বিরুদ্ধে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য হাসিনাকে চাপ দিচ্ছিল আমেরিকা ।
পাশাপাশি বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা ২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর হঠাৎ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন যে শেখ হাসিনা যদি আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসেন, আমেরিকা তার সরকারকে উৎখাতের জন্য তার সমস্ত ক্ষমতা ব্যবহার করবে। তিনি সতর্ক করে বলেছিলেন যে আমেরিকা একটি বিশৃঙ্খল শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে ‘আরব বসন্ত’-এর মতো পরিস্থিতি তৈরি করবে। স্মরণ করা যেতে পারে, এক দশক আগে মধ্যপ্রাচ্যে ‘আরব বসন্ত’ প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ছাত্রদের নেতৃত্বে ছিল।
প্রসঙ্গত,২০১০ সালের শুরু থেকে আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বয়ে যাওয়া গণবিপ্লবের ঝড়কে পশ্চিমা সাংবাদিকরা আরব বসন্ত হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। এই গণবিক্ষোভের শুরু তিউনিসিয়ায়। এরপর তা মিশরে, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন সহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে যায়। আর প্রায় প্রতিক্ষেত্রেই ছিল মার্কিন ষড়যন্ত্র ।।