এটি কাবুলে ১৯৯৬ সালের কথা,১২ ট্রাকবোঝাই তালিবান সন্ত্রাসীরা জাতিসংঘের দূতাবাসে হামলা চালায়, তারা ভিতর থেকে একজনকে টেনে নিয়ে যায়, তাকে গুলি করে এবং তার দেহ ধারল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে বিকৃত করে। তাকে একটি ল্যাম্পপোস্টে উল্টোভাবে ঝুলানো হয় এবং ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তালিবান শাসনের সূচনা করে । আর সেই হতভাগ্য ব্যক্তি ছিলেন আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহ। পরের দিন সারা বিশ্বের সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় যে ভারত নতুন বন্ধু (তালিবান) তৈরি করতে পুরানো বন্ধুকে (মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহ) বলি দিয়েছে।
আসলে, সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন আফগানিস্তানে যুদ্ধ করছিল, তখন তারা নাজিবুল্লাহকে রাষ্ট্রপতি করেছিল। কিন্তু সোভিয়েতরা হঠাৎ করে যুদ্ধে হেরে যায় এবং পালিয়ে যায়, নাজিবকে তার আল্লাহর ভরসায় ছেড়ে দেয়। নাজিব জানতেন তালিবানদের হাতে তার পতন অনিবার্য । তাই, তিনি তার স্ত্রী এবং কন্যাদের দিল্লিতে পাঠিয়েছিলেন, তিনিও দিল্লিতে আশ্রয় চেয়েছিলেন কিন্তু তৎকালীন কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের অন্য উদ্বেগ ছিল। নরসিমা রাওয়ের কাছে দুটি বিকল্প ছিল, প্রথমত তাকে মরার জন্য ছেড়ে দেওয়া এবং দ্বিতীয়ত, আফগানিস্তানে বোমা ফেলে নাজিবুল্লাহকে উদ্ধার করা । কিন্তু নরসিমা রাও জানত যে শীঘ্রই বা পরে তালিবানরা ক্ষমতায় আসবে এবং তারা ভারতের প্রতি ক্ষুব্ধ হবে, এমন পরিস্থিতিতে তালিবানকে না চটানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি ।
এদিকে ভারতের সাহায্যের অপেক্ষায় বসে থেকে সময় অতিবাহিত হয় এবং নজিবুল্লাহকে কাবুলে তার বাড়ি ছেড়ে ভারতীয় দূতাবাসে আশ্রয় নিতে হয়। তখনও ভারত তাকে আশ্রয় দেয়নি কারণ দূতাবাসে কর্মরত ব্যক্তিদের পরিবার আফগানিস্তানে বসবাসকারী তালিবানদের হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা ছিল। অবশেষে খুনের রাত এলো । তালিবানরা বিশ্ব চুক্তি ভঙ্গ করে জাতিসংঘের অফিসে হামলা চালিয়ে নজিবুল্লাহ ও তার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করে। যদিও তালিবানকেও ২০০১ সালে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়েছিল, তবে তারা ফের ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসে।
এ কারণেই আশরাফ গনি কোনো দেরি না করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে যান। কিন্তু ভারত এখনও নাজিবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযুক্ত, যদিও তার স্ত্রী এখনও ভারতে থাকেন এবং ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু দেখুন কত দ্রুত রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে যায়, আজ তালিবান ভারতের সাথে বন্ধুত্ব চায় যখন তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কার্যত জিহাদ ঘোষণা করে দিয়েছে ।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে ভারতের আর এক প্রতিবেশী ইসলামি রাষ্ট্র বাংলাদেশের ক্ষেত্রে । তবে কংগ্রেসের নরসিমা রাওয়ের মত নাজিবুল্লাহকে বলির পাঁঠা করার মত শেখ হাসিনাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়নি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । আপাতত কঠোর বিরাপত্তার মধ্যে সেফ হাউসে রয়েছেন হাসিনা । অন্যদিকে তালিবানের মত একটা কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী দল না হলেও বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় আসতে চলেছে জামাত-এ-ইসলামির মত একটা কট্টর ইসলামি জঙ্গি সংগঠন । এখন দেখার বিষয় যে পূর্ববর্তী সরকারের নীতি অনুসরণ করে জামাত ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে আগ্রহ প্রকাশ করে কিনা ।।