এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৭ আগস্ট : বাংলাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলন এখন সাম্প্রদায়িক হিংসায় পরিনত হয়েছে । জামাতের জঙ্গিরা বেছে বেছে হিন্দু ঘরবাড়ি,দোকানপাট লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করছে বলে অভিযোগ উঠছে । হামলার বহু ভিডিও ও ছবি ভাইরাল হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । যদিও ওই সমস্ত ভিডিও বা ছবির সত্যতা পৃথকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি এইদিন-এর পক্ষ থেকে । এদিকে বাংলাদেশের হিংসার ভিডিও বা ছবি পোস্টের উপর লাগাম টানার চেষ্টা করে যাচ্ছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার ।
ইতমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশের হিংসার ভিডিও ফুটেজ পোস্ট না করার জন্য রাজ্যবাসীর কাছে আহ্বান জানিয়েছিলেন । বিশেষ করে এই বিষয়ে বিজেপি নেতাদের সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন । মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী দিন দুয়েক আগে রাজ্য পুলিশের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে বাংলাদেশের হিংসার ভিডিও ফুটেজ পোস্ট করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছিল । তাসত্ত্বেও বাংলাদেশের নৃসংশতা তুলে ধরে লাগাতার প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাচ্ছে রাজ্যের বৈদ্যুতিক সংবাদমাধ্যমগুলি ।
এবারে ওই সমস্ত চ্যানেলগুলিতে ‘সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক’ খবর হচ্ছে বলে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করে দিল রাজ্য পুলিশ।মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাত্রি ৯ টার সময় রাজ্য পুলিশ টুইট করেছে,’কিছু স্থানীয় টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে যেভাবে রিপোর্টিং হচ্ছে, তা খুবই দৃষ্টিকটুভাবে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক, এবং ভারতের প্রেস কাউন্সিলের নিয়মাবলীর পরিপন্থী।দর্শকদের অনুরোধ, এই ধরণের কভারেজ দেখার সময় নিজস্ব বিচারবিবেচনা প্রয়োগ করুন, এবং মাথায় রাখুন যে চ্যানেলের দেখানো ফুটেজের সত্যতা কিন্তু কোনও নিরপেক্ষ তৃতীয় সংস্থা দিয়ে যাচাই করা নয়। একতরফা বিদ্বেষমূলক এবং বিভ্রান্তিকর প্রচারের ফাঁদে পা দেবেন না। শান্ত থাকুন, শান্তি বজায় রাখুন।’
এদিকে পুলিশের এই টুইটে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেটিজেনরা । একজন ব্যবহারকারী (@ikoushikghosh) লিখেছেন, ‘নিজেদের কাজ দয়া করে ঠিক করে করুন । রাস্তায় একটা সামান্য ভুল হলে তো ফাইন করতে ছাড়েন না । গতকাল কলকাতার রাস্তায় বাংলাদেশিরা মিছিল কীভাবে করে একটু দয়া করে বলবেন।’
প্রীতম সাহা নামে আর একজনের প্রতিক্রিয়া, ‘গতকাল কলকাতার রাস্তায় বাংলাদেশিরা মিছিল করল কিভাবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ নেওয়া হলো না তার উত্তর পাবো কি? আপনারা কি সত্যি চাপা দিতে চাইছেন? কি উদ্দেশ্য আপনাদের?’
অঞ্জন নামে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন,’আমার দেখবো, একশো বার দেখবো। কারণ আমাদের হিন্দু ভাই বোনেরা ওখানে রয়েছে। আপনি আগে জবাব দিন বাংলাদেশের জয়ের উল্লাসে কলকাতায় মিছিল কি করে হলো? নিরপেক্ষ তৃতীয় সংস্থা মানে কারা?জুবের ?ধ্রুব রাঠি ? যারা অর্ধ সত্য,ভুল তথ্য পরিবেশন করছে ওদের বিরুদ্ধে যেদিন শাস্তি দেবেন,সেদিন এই কথা মানব ।’
দেবযানী ভট্টাচার্য লিখেছেন,’নিরপেক্ষ তৃতীয় সংস্থা” মানে কে বা কারা? মহম্মদ জুবের? এই ফ্যাক্ট চেক সংস্থাগুলি যে “নিরপেক্ষ” সেই সার্টিফিকেট তাদের দিল কারা? ফ্যাক্ট চেকের নাম করে অর্ধ সত্য বা আংশিক সত্য পরিবেশন করার বিরুদ্ধে যেদিন আইন আসবে আপনাদের এই ধরনের উপদেশের মূল্য সেদিন থাকবে।’
অমিয় চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া,’আচ্ছা পার্থর গার্লফ্রেন্ডের খাটের তলা থেকে কোটি কোটি টাকা পাওয়া গেল? তখনো তো কারা যেন বলেছিল ঐ টাকা সিবিআই ইডি নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রাখে নি তা কে বলবে? ফ্যাক্ট চেক কে করবে ? সেকি আপনাদের পুলিশ মন্ত্রী?’
অরিজিৎ ঘোষ লিখেছেন,’নিরপেক্ষ সংস্থা মানে কি? জুবেরের alt নিউজ? না মানে আপনারা তো ওটাই follow করেন X হ্যান্ডেলে! একটা প্রাইভেট soft প্রোপাগান্ডা ছড়ানো সংস্থা, যেটার twitter এর বাইরে কোনো অস্তিত্ব নেই, সেটার বিশ্বাসযোগ্যতার সার্টিফিকেট কে দিয়েছে ? Irony বলি হারি আপনাদের ।’ অসীম লিখেছেন,’হুমায়ূন কবির কিংবা আপনাদের পার্টির শান্তিপ্রিয় ধর্মের নেতারা যখন ইসলামী কট্টরতা ছড়িয়ে বেড়ায় তখন আপনাদের সেটা উস্কানিমূলক লাগে না? Hypocrisy বন্ধ করুন। তোষণের রাজনীতি অনেক হয়েছে আপানাদের।’
জয় দাস লিখেছেন,’তাহলে কি পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষে দাঁড়িয়ে বিদেশ মন্ত্রী ডঃ এস জয়শঙ্কর ভুল বলছেন ?
ধর্মীয় উৎপীড়নের শিকার হচ্ছে না হিন্দুরা? সেগুলো তুলে ধরা কিসের দোষ?’
আর একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন,’দৃষ্টিকটু, উসকানিমূলক এসব বিচার করার অধিকার পুলিশের নেই। ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯(১)(ক) দ্বারা ভারতের প্রত্যেক নাগরিকের বাকস্বাধীনতা সুরক্ষিত। পুলিশের কাজ মৌলিক অধিকারগুলো রক্ষা করা তাতে হস্তক্ষেপ করা নয়।’
তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গ সরকারই নয়, কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকারও বাংলাদেশের হিংসার ভিডিও বা ছবি পোস্টের উপর পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানা গেছে । বাংলাদেশের আক্রান্ত হিন্দুদের জন্য যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় আওয়াজ তুলছেন তাদের ভারতে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। ‘এক্স’-এ ‘ভয়েস অফ বাংলাদেশি হিন্দুস’ (আগের টুইটার) জানিয়েছে যে ‘ভয়েস অফ হিন্দু71’ এবং ‘হিন্দু8789’ ব্যবহারকারীর নাম সহ দুটি হ্যান্ডেল ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে । ‘ভয়েস অফ বাংলাদেশি হিন্দুস’ জানিয়েছে যে ‘হিন্দু 8789’ নামের হ্যান্ডেলটি তার দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। এই হ্যান্ডেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের মন্দিরে ক্রমাগত হামলার ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছিল। ‘এক্স’ তাকে পাঠানো আইনি নোটিশটিও শেয়ার করেছেন তিনি। ‘VoiceOfHindu71’ হ্যান্ডেল থেকে বলা হয়েছে যে তার হ্যান্ডেলটি সরানোর জন্য ভারত সরকারের কাছ থেকে পরপর দু’দিন নোটিশ পাঠানো হয়েছে । যে বিষয়বস্তুতে ভারত সরকার আপত্তি জানিয়েছিল তা ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে । কিন্তু হিন্দুপন্থী বিজেপির নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারও কেন এই ভূমিকা নিচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ।।