প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৩১ জুলাই : যুগ বদলেছে । বদলেছে সমাজ।তবে হয়তো আজও পড়ুয়াদের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হদয় স্পর্শী সম্পর্কে কোন বদল ঘটেনি।যার প্রমাণ বুধবার মিললো পূর্ব বর্ধমানের ভাতার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে।প্রিয় প্রধান শিক্ষিকার বিদায় সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে পড়ুয়া থেকে শুরুকরে অভিভাবক এবং সহ-শিক্ষক, সবারই দুই চোখ বেয়ে শুধুই ঝরলো জল। যা দেখে প্রধান শিক্ষিকা আবেদা বেগম চৌধুরীও ধরে রাখতে পারলেন না নিজের চোখের জল।আবেগ তাড়িত কন্ঠে প্রধান শিক্ষিকা বললেন,আমার শিক্ষকতা জীবনের বিদায়ের দিনটি আজীবন আমার কাছে স্মরনীয় হয়ে থাকবে।
নারী শিক্ষায় ইতিমধ্যেই সুনাম কুড়িয়েছে ভাতার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়।বর্তমানে এই বিদ্যালয়ের পড়ুয়া সংখ্যা ১১ শো ছাড়িয়েছে। শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মী মিলিয়ে ২২ জন রয়েছেন।প্রায় ৩৬ বছর আগে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার দারিত্ব গ্রহন করেন আবেদা বেগম চৌধুরী।পরবর্তী সময়ে আদর্শ নিষ্ঠ এই শিক্ষিকার উপরেই বর্তায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব।সেই দায়িত্ত যথাযথ ভাবে পালনের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের উন্নতি সাধনেও তিনি সর্বতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। নিজের ব্যবহারিক গুনে তিনি তাঁর স্কুলের সকল পড়ুয়া থেকে শুরু করে সহ-শিক্ষিকা, শিক্ষা কর্মী এবং অভিভাবকদের কাছেও হয়ে উঠেছিলেন শ্রদ্ধার মানুষ।প্রিয় ’বড় দিদি’ কে নিয়ে আজও ভাতার বাসীর গর্বের শেষ নেই।এহেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা আবেদা বেগম চৌধুরীর শিক্ষকতা জীবনের ইতি ঘটলো বুধবার ।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এদিন তাই ঘটাকরে আবেদা বেগম চৌধুরী ম্যাডামের বিদায় সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে । সেই অনুষ্ঠানে এলাকার বিশিষ্ঠ জনের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের সকল পড়ুয়া ,বহু প্রাক্তন ছাত্রী ,সকল অভিভাবক এবং সহ-শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীরা অংশ নেন। সকলেই চোখের জলে বিদায় জানান প্রধান শিক্ষিকাকে। তা দেখে প্রধান শিক্ষিকাও তার চোখের জল ধরে রাখতে পারেন না ।
বিদ্যালয়ের এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মদক্ষ শান্তনু কোনার ছাড়াও ভাতার সার্কেলের স্কুল পরিদর্শক মৌমিতা সরকার উপস্থিত থাকেন। এছাড়াও ভাতার কলেজের প্রিন্সিপাল ডক্টর এনামুর রহমান,ভাতার গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রূপালী ঘোষ এবং স্কুলের প্রেসিডেন্ট বলাই দাস বৈরাগ্য উপস্থিত ছিলেন ।
বিদায়ী ভাষণে প্রধান শিক্ষিকা আবেদা বেগম চৌধুরী বলেন ,কর্ম জীবন থেকে সকলকেই একদিন অবসর নিতে হবে। তবে কর্মজীবনের সার্থক কর্ম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে । আমি আমার শিক্ষকতার কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহনের দিনে বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রী,সহ-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদের কাছ থেকে যে সম্মান ও ভালবাসা পেলাম তা এককথায় অনবদ্য । সবার চোখের জলে হয়তো এদিন আমার শিক্ষকতা জীবনের ইতি হল ঠিকই , তবে এই দিনটা আজীবন আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে ।
বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষিকা সফুরা বেগম ,সুপ্রিতি সরকার সেন বলেন,“আমরা সত্যি আজ অভিভাবক হীন হয়ে পড়লাম । বড় দিদি শুধু মাত্র প্রধান শিক্ষিকাই ছিলেন না,তিনি আমাদের অভিভাবিকাও ছিলেন। পড়য়াতের প্রতি তিনি যে কতটা আন্তরিক ছিলেন তা কোভিড অতিমারির সময়েই বোঝা গিয়েছিল । ওই সময় তিনি নিজের জীবনের পরোয়া না করে বিদ্যালয়ের দরিদ্র ছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন । নিজের সাধ্যমত দরিদ্র পরিবারের ছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি পৌছে দিয়ে ছিলেন খাদ্য সামগ্রী । তদের পড়াশুনার ব্যাপারের ওই সময় বড় দিদি খোঁজ খবর নিতেন । পাশে থাকতেন। সহকর্মীদের সকলকেও বড় দিদি আগলে রেখে গেছেন।তাই বড় দিদির কর্মজীবনের ইতি আমাদের কাছে বড়ই বেদনার । বিদ্যালয়ের ছাত্রী আসমা উল হোসনা জানায়, মাত্র সাত মাস বড় দিদি ম্যামকে পেয়েছি।তাঁর সান্নিধ্যে এই সাত মাসের স্মৃতি আমার সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে । বড় দিদি ম্যামকে আরও কয়েক বছর পেলে ভালো হতো।।