এইদিন ওয়েবডেস্ক,তিরুবন্তপুরম,২৯ জুন : অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে জীবনের সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সাফল্যের শিখরেও পৌঁছনো যায় । সেটা বাস্তবে প্রমান করে দিয়েছেন কেরালার মহিলা পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর এনী শিবা । মাত্র ১৮ বছর বয়সে এনীর স্বামী যখন ছেড়ে চলে যায় তখন তাঁর কোলে ৬ মাসের পুত্রসন্তান । বাড়ির অমতে বিয়ে করার ঠাঁই হয়নি বাড়িতেও । তারপর শিশুসন্তানকে নিয়ে শুরু কঠিন জীবন সংগ্রাম । আসে সাফল্য । সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ এনীর এই লড়াইয়ের কাহিনী আজ চর্চার বিষয় হয়ে গেছে কেরালা জুড়ে । এনী শিবার অদম্য জেদই তাঁর সফলতার একমাত্র চাবিকাঠি । যা আজ সমসাময়িক প্রজন্মের কাছে দৃষ্টান্ত স্বরূপ ।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এনী শিবার সংঘর্ষের কাহিনী ভাইরাল হয় । জানা যায়,এনী যখন কাঞ্জীরামকুলামের কেএনএম গভর্মেন্ট কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করছিলেন সেই সময় বাড়ির অমতে তিনি বিয়ে করে ফেলেন । ফলে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় । পরে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন এনী । কিন্তু ফের এক আঘাতের মুখোমুখি হতে হয় এনীকে। সন্তানের যখন মাত্র ৬ মাস বয়স তখন তাঁর স্বামীও ছেড়ে চলে যায় । কিন্তু পরপর এই আঘাতে একটুও টলাতে পারেনি সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ ওই মেয়েটিকে । সন্তানকে নিয়ে তিনি আশ্রয় নেন নিজের ঠাকুমার বাড়ির পিছনের একটি ঝোপড়িতে । তারপর শিশুসন্তানসহ নিজের অন্নসংস্থানের জন্য শুরু হয় এনীর কঠিন লড়াই । প্রথম দিকে ঘরে ঘরে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের কাজ করতে শুরু করেন এনী । তবে সেই কাজ বেশিদিন চলেনি । শেষে তিনি রাস্তাতে বসে লেবুর শরবর ও আইসক্রিম বিক্রর পাশাপাশি ছোটখাটো কাজ করতে শুরু করেন । মূলত সেই রোজগারে তিনি শিশুপুত্র ও নিজের অন্নসংস্থান ও নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে থাকেন ।
এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও সমাজশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এনী শিবা । ২০১৪ সালে তিনি তিরুবন্তপুরমের একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন । তারপর এক বন্ধুর সাহায্য নিয়ে পুলিশের ইন্সপেক্টর পদের পরীক্ষা দেন । ২০১৬ সালে আসে সফলতা । দেড় বছর ট্রেনিংয়ের পর ২০১৯ সালে তিরুবন্তপুরমেত ভর্কলা শহর থানায় প্রবেশনারী সাব-ইন্সপেক্টর হিসাবে কাজে যোগ দেন ।
উল্লেখ্য,ভর্কলা শহরেই বাড়ি এনী শিবার । এই শহরেই শিশুসন্তানকে নিয়ে তাঁকে কঠিন লড়াই লড়তে হয়েছে । এনী শিবা বলেন, ‘আমি জানতে পারি কিছু দিন আগেই আমার পোস্টিং ভর্কলা পুলিশ স্টেশনে হয়েছে । এই জায়গাতেই আমি আমার শিশুসন্তানকে নিয়ে অসহায় জীবন কাটিয়েছি । প্রতিদিন চোখের জল ফেলেছি । অথচ কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি ।’
এনী শিবার জীবন কাহিনী বর্ণনা করে কেরালা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি ট্যুইট করা হয়েছে । ট্যুইটে বলা হয়েছে, ‘১৮ বছর বয়সে একটি মেয়েকে স্বামী ও পরিবারের লোকজন ত্যাগ করার পর ৬ মাসের সন্তানকে নিয়ে তাঁকে রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হয়েছিল । তারপর লড়াই করে উনি ভর্কলা পুলিশ স্টেশনের সাব ইন্সপেক্টর হয়েছেন । ইচ্ছাশক্তি ও আত্মবিশ্বাসের এক প্রকৃষ্ঠ উদাহরন ।’।