এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,২৬ জুলাই : বাংলাদেশের সীমাহীন হিংসার জন্য দুই উগ্র ইসলামি দল বিএনপি এবং জামায়াত-এ-ইসলামিকে কাঠগড়ায় তুললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৷ তিনি আজ শুক্রবার বলেছেন যে দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি বিদেশে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্যই সারাদেশে এই তাণ্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত ও ছাত্রশিবির । এই নাশকতায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে তিনি দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।
রামপুরায় বিটিভি ভবনে তাণ্ডবের ঘটনাস্থল বৃহস্পতিবার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে দেশের প্রতিটি আনাচে-কানাচে খুঁজে বের করতে হবে। তারা কোথায় আছে, তা শনাক্ত করতে আমি দেশবাসীর সহযোগিতা চাই। আমি চাই তারা যেন শনাক্ত হয় এবং আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০১৩ সালে বিএনপি- জামায়াত জোট সারাদেশে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায়। ওই সময় তারা ৩,৮০০টি বাস, ২৯টি ট্রেন এবং ৮টি লঞ্চে অগ্নিসংযোগ করে। এবারও কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সামনে রেখে তারা গত ১৭ই জুলাই ২০১৪ সকাল থেকে সারাদেশে তাণ্ডব চালায়। তবে এবারের অগ্নিসংযোগের ধরণ আগের তুলনায় ভিন্ন। এবার তারা গানপাউডার ব্যবহার করে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে এবং সবকিছু পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন ।
বিটিভি কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাণ্ডবের ঘটনায় বিটিভির বিভিন্ন অবকাঠামো, সম্প্রচার সরঞ্জাম, ডিজাইন বিভাগ, অফিস ভবন ও কক্ষে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ভাঙচুরে ১৯৬৪ সাল থেকে সংরক্ষিত অমূল্য প্রাচীন নিদর্শন দিয়ে সজ্জিত টেলিভিশন জাদুঘর, মুজিব কর্নার, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ, অভ্যর্থনা ও অপেক্ষা কক্ষের আসবাবপত্র, কম্পিউটার, এয়ার কন্ডিশনার (এসি) এবং অন্যান্য জিনিসপত্র ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কম্পিউটার ল্যাব, প্রশিক্ষণ কক্ষ ও প্রিভিউ রুমের প্রায় ৪০টি কম্পিউটার, ১০০টি টেলিভিশন সেট এবং আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। লিফট, নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম, সিসি ক্যামেরা এবং মনিটরিং সেটগুলিতেও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। গাড়ি রাখার ভবন ও শেড, ক্যান্টিন এবং নিরাপত্তা মনিটরিং রুম; একটি সম্প্রচার ওবি ভ্যানসহ ১৭টি গাড়ি, ২১টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং ৯টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
ডিজাইন শেড, স্টুডিওর ছাদ, দেয়াল, ভবন এবং অন্যান্য অবকাঠামো; কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং প্রায় ৭০টি স্প্লিট এয়ার কন্ডিশনার; অফিসিয়াল আসবাবপত্র, পাঁচটি ফটোকপি মেশিন এবং প্রায় ৫০টি কম্পিউটার ভাঙচুর করা হয়েছে। ১০টি কম্পিউটার ওয়ার্কস্টেশনসহ ১০০টি মনিটরিং সেট, বৈদ্যুতিক তার, সুইচ, ট্যাক্টাইল যন্ত্রপাতি, রেকর্ডিং ক্যামেরা, আলোর উৎস এবং সম্পর্কিত সরঞ্জামাদি; গুরুত্বপূর্ণ অফিসিয়াল ফাইল, নথিপত্র, শিল্পীদের সম্মানী সংক্রান্ত খাতা, ব্যাংক বই, ভাউচার, অডিট বিল ইত্যাদিও রেহাই দেওয়া হয়নি ।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সহিংসতা, ধ্বংসযজ্ঞ ও হতাহতের ঘটনায় এখনও থমথমে পুরো দেশ। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীসহ বেশ কিছু জায়গায় এখনো চলছে কারফিউ। এদিকে নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ থেকে লুট হওয়া ৪৮ অস্ত্র ও ৭০০ রাউন্ড গুলি এখনও রয়েছে দুর্বৃত্তদের হাতে।
লুট হওয়া এত অস্ত্র-গুলি এখনও দুর্বুত্তদের হাতে থেকে যাওয়ায় এবং তা উদ্ধার না হওয়ায় নিরাপত্তার জন্য হুমকির আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দৈনিক সমকাল পত্রিকা। পত্রিকাটি শিরোনাম দিয়েছে, ‘লুটের ৪৮ অস্ত্র ও ৭০০০ গুলি এখনও দুর্বৃত্তদের হাতে’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্বৃত্তরা ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের স্থাপনা টার্গেট করেছিল। পুলিশের চেকপোস্ট, ফাঁড়ি ও থানা আক্রান্ত হয়েছে। নরসিংদী কারাগারে হামলা হয়েছে।
ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবনে বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠক শেষে রাত ১২টার দিকে কারফিউ শিথিলের ঘোষণা করেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলা, গাজীপুর মহানগর ও গাজীপুর জেলা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে কারফিউ বলবৎ থাকবে। তবে এসব এলাকায় শুক্র ও শনিবার সকাল ৮টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। অন্যান্য জেলায় কারফিউর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা।কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাত ১২টা থেকে সারা দেশে জারি করা হয় কারফিউ। মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী ৷।