প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২২ জুলাই : অস্বাস্থ্যকর ল্যাংচা বিক্রিতে এবার পড়লো লাগাম ।পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ের প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন ল্যাংচার দোকান গুলিতে নিত্যদিনই ক্রেতা সমাগম হয় । বিক্রি বাটাও হয় লাখ লাখ টাকার।শক্তিগড়ের সেই ল্যাংচার উপরেই এখন কড়া নজর পড়েছে পুলিশ, স্বাস্থ্য ,দপ্তর সহ খাদ্য সুরক্ষা ও ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের।যার মূল উদ্দেশ্যই হল অতিরিক্ত লাভের লোভে অস্বাস্থ্যকর ল্যাংচা বিক্রি রোখা।আর তা করতেই গত বৃহস্পতিবারের পর শনিবারও শক্তিগড়ের ল্যাংচার দোকান ঘর গুলি থেকে শুরু করে হেঁসেল,সর্বত্র চলে প্রশাসনের হানাদারি।সেই হানাদারি তে উদ্ধার হল আগে থেকে তৈরি করে রাখা ’তিন কুইন্ট্যাল’ অস্বাস্থ্যকর ল্যাংচা।যা দেখে স্বাস্থ্য ও খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের চোখ কপালে ওঠে।এমন কারবারে লাগাম পরাতে জেলা খাদ্য সুরক্ষা দপ্তর শক্তিগড়ের দুই ল্যাংচা কারবারীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে।
জেলার উপ স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী জানিয়েছেন ,শনিবারের অভিযানে তিন কুইন্টল অস্বাস্থ্যকর ল্যাংচা । সেগুলি বাতিল যোগ্য করা হয়েছে। এমন ল্যাংচা মজুত করে রাখার অপরাধে কয়েকজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে শক্তিগড় থানাতে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।শুধু তাই নয় ,ওইসব ল্যাংচা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ’খাদ্য সুরক্ষা আইনেও’ কড়া ব্যবস্থা নেওয়ায় হবে বলেও উপ স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায় ইঙ্গিত মিলেছে ।
শক্তিগড়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের দু’ধারে রয়েছে অসংখ্য ল্যাংচার দোকান ।এই ল্যাংচার সঙ্গে বর্ধমানের রাজ আমলের ইতিহাসও জড়িয়ে আছে । মিষ্টান্ন ল্যাংচার প্রসিদ্ধি সেখান থেকেই। তাই প্রতি বছর ২১ শে জুলাই ধর্মতলায় শহীদ সভায় যোগ দেওয়া তৃণমূল কর্মীরা বাড়ি ফেরার সময় শুধুমাত্র ল্যাংচা কেনার জন্য স্টপেজ নেন শক্তিগড়ে। তাঁরা শুধুমাত্র বিশ্বাসে ভর করে শক্তিগড়ের ল্যাংচার দোকানগুলি থেকে মোটা টাকার ল্যাংচা কিনে নিয়ে বাড়ি নিয়ে যান। তৃণমূল কর্মীদের দৌলতে ২১ জুলাই লাখ লাখ টাকার ব্যাবসাও হয় ল্যাংচা কারবারীদের । কিন্তু এতেও মন পোষায় না ল্যাংচা কারবারীদের । তাই ওইদিন আরো লাভের লালশায় কারবারী অস্বচ্ছতার পথ ব্যবসায়ীরা বেছে নিয়েছিলেন অভিযোগ উঠেছে।
সেই অস্বচ্ছতার গভীরতা কতটা থাকে তা বুঝতেই শনিবার স্বাস্থ্য দপ্তর ,খাদ্য সুরক্ষা দপ্তর এবং ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা অভিযানে নামেন । উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা: সুবর্ণ গোস্বামী জানান, ওইদিন অভিযান চালিয়ে তাঁরা যা চাক্ষুষ করেন তা কার্যত চমকে দেওয়ার মতন ।তিনি জানান,শক্তিগড়ে চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ল্যাংচা তৈরি হতে তাঁরা দেখেছেন ।১৫ দিন বা তারও আগে থেকে বস্তা বস্তা ল্যাংচা ভেজে রাখা হয়েছিল।সেগুলির প্রত্যেকটিতে ছত্রাকে ভর্তি ছিল । এমন বেশ কয়েক কুইন্টাল ল্যাংচা বাজেয়াপ্ত করা হয়।খাবার অযোগ্য ওই বিপুল পরিমাণ ল্যাংচা নষ্টও করে দেওয়া হয়েছে বলে উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি ছত্রাক ভর্তি ল্যাংচা কতটা ক্ষতিকারক ? এই প্রশ্নের উত্তরে উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবর্ণ গোস্বামী জানান,ছত্রাক ধরা ল্যাংচা খেলে ’স্বাস্থ্যহানি’ অবধারিত। এমনকি নানা রকম পেটের রোগে আক্রান্ত হবারও প্রবল সম্ভাবনা।যা দেখা গিয়েছে শক্তিগড়ে ল্যাংচা তৈরিতে স্বাস্থ্যবিধির কোনো খেয়াল রাখা হয়নি। দু একটি দোকান ছাড়া বেশিরভাগ কারখানায় ঝুলকালির মধ্যে রান্না চলেছে।
সুবর্ণ গোস্বামী এও জানান ,২১ জুলাই যে ক্রেতারা শক্তিগড়ে আসবেন তাদের বেশিরভাগ যেহেতু অভিযোগ জানাতে আসবেন না তাই যা খুশি তাই করা হয়েছে।মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে এই বিপজ্জনক প্রবণতা কড়া হাতে রোখা হবে,যথাবিহিত আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন।পাশাপাশি ল্যাংচার গুণমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তারপর ল্যাংচা কেনার জন্য প্রশাসনের তরফে জনসাধারণের কাছে অনুরোধ রাখা হয়েছে।খরিদ্দারদের অনেকে বলছেন,বিখ্যাত ল্যাংচার বাজারি সিক্রেট এখন বে-আব্রু হয়ে গিয়েছে।শক্তিগড়ে ল্যাংচায় জনস্বাস্থ্য ব্যাপারটা আসলো কতটা অবহেলিত তাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে প্রশাসনের অভিযান নিয়ে শক্তিগড়ের ল্যাংচা ব্যবসায়ীদের মৌরসীপাট্টা খুন্ন হতেই তাঁরা ক্ষুব্ধ। ব্যবসায়ী প্রভাত ঝা, কাসেদ মন্ডল, বিশ্বজিৎ দাসরা জানান, এত ল্যাংচা একদিনে ভাজা সম্ভব নয়।২১ জুলাই ব্যাপক চাহিদা থাকে। তাই তাঁরা আগে থেকে বানিয়ে রাখেন।।