প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৭ জুন : দুই নাবালিকা মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় মায়ের দায়ের করা অভিযোগে গ্রেপ্তার হল বাবা । ধৃতের নাম হাজিবুল লায়েক। পূর্ব বর্ধমানের রায়না থানার খালেরপুল গ্রামে ধৃতের বাড়ি ।তিনি পেশায় টোটো চালক । শনিবার বিকালে খালেরপুলের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় হাজিবুলের দুই নাবালিকা মেয়ে সুমি খাতুন (৮) ও রুবি খাতুন (৬)এর মৃতদেহ ।এই মৃত্যুর ঘটনার জন্যে নাবালিকাদের মা শিউলি বেগম রবিবার দুপুরে তাঁর স্বামী হাজিবুল লায়েক, শাশুড়ি হুসনিহারা বিবি সহ তিনি জনের বিরুদ্ধে রায়না থানায় অভিযোগ দায়ের করেন । ’পরকীয়া সম্পর্কে’ জড়িয়ে পড়া হাজিবুল-ই ’পরিকল্পনা করে দুই নাবালিকা মেয়েকে খুন’ করেছে বলে অভিযোগ শিউলি বেগমের। দায়ের হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে পুলিশ এদিন বিকালে হাজিবুলকে গ্রেপ্তার করে ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ,বর্ধমান
আরামবাগ রোডের ধারে খালেরপুলে রয়েছে
হাজিবুল লায়েকের অ্যাসবেস্টসের ছাউনির দুই কামরার বাড়ি ।সেই বাড়ির অদূরেই রাস্তার
পাশে রয়েছে হাজিবুলের বৃদ্ধা মা হুসনিহারা বিবির চায়ের দোকান। নাবালিকাদের মা
শিউলি বেগম শনিবার তাঁর শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন না। তিনি খণ্ডঘোষের দইচাঁদা গ্রামে তঁর বাবার বাড়িতে ছিলেন ।সুমি স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। আর রুবি গ্রেমেরই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছিল।ঠাকুমা হুসনিহারা বিবি দুই নাবালিকাকে আগলে রেখেছিলেন। বিকালে হাজিবুল টোটো নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল । এরপর বিকাল ৫ টা নাগাদ বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় সুমি খাতুন (৮) ও রুবি খাতুন (৬) এর মৃতদেহ ।
প্রতিবেশীদের একাংশের দাবি নাবালিকারা বাড়িতেই কোনভাবে বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয় ।নাতনিদের বাঁচাতে গিয়ে হুসনিহারা বিবিও জখম হয়। হুসনিহারা বিবির দাবি, ’তিনি চায়ের দোকানে ছিলেন। দুই নাতনি তাঁর চায়ের দোকান লাগোয়া বাড়ির উঠানে খেলছিল। হঠাৎতই তাদের চিৎকার শুনে তিনি চায়ের দোকান থেকে বাইরে বেরিয়ে পড়েন । তখনই তিনি দেখেন দুই নাতনির শরীরে বিদ্যুতের তার জড়িয়ে রয়েছে। বিদ্যুৎতের তার নাতনিদের ছাড়াতে গিয়ে তিনিও জখম হন’ । অপর কয়েকজন বাসিন্দা আবার বলেন ,হাজিবুল ভালো লোক ছিল না । সে তাঁর দুই মেয়েকে ’খুন’ করেও থাকতে পারে।
যদিও শাশুড়ির এই সব বক্তব্য মানতে চাননি
নাবালিকাদের মা শিউলি বেগম । এদিন রায়না থানার পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীর অন্য মহিলার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হওয়ার কথা তিনি জানতে পারেন । তার পর থেকেই তার স্বামী হাজিবুল লায়েক তাঁর উপরে অমানুষিক নির্যাতন চালানো শুরু করে । প্রাণে বাঁচতে খণ্ডঘোষে বাবার বাড়িতে তিনি খবর দেন । বাবার বাড়ির লোকজন এলে তিনি বাবার বাড়ি চলে যান । কিন্তু তাঁর দুই মেয়েকে তাঁর সঙ্গে যেতে দেওয়া হয়নি । তাঁদের আটকে রাখা হয় । তিনি বাবার বাড়িতে চলে যাওয়ার তিন দিনের মাথায় মেয়েদের খেলার জায়গায় বিদ্যুৎবাহী তার রেখে পরিকল্পনা করে দুই মেয়েকে খুন করা হয়েছে ।
জিজ্ঞাসাবাদে হাজিবুল যদিও পুলিশকে জানিয়েছে, তাঁদের ঘর লাগোয়া সজনে গাছের সঙ্গে বিদ্যুৎতের তারে বাল্ব লাগিয়ে ছিল তাঁর স্ত্রী শিউলি-ই । এখন উদ্দেশ্য প্রণদিত ভাবে তাকেই তাঁর মেয়েদের খুনি সাজানো হচ্ছে । এদিকে শনিবার পুলিশের চিঠি পেয়ে বিদ্যুৎদপ্তরও ঘটনার তদন্তে নামে। বিদ্যুৎদপ্তর এদিন পুলিশকে জানিয়েছে ,‘শর্ট সার্কিট’ থেকেই ঘটনাটি ঘটেছে ।
এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম খান জানিয়েছেন , “মৃত দুই নাবালিকার মা শিউলি বেগম রবিবার দুপুরে রায়না থানায় পরিকল্পনা করে খুনের অভিযোগ করেছেন। তার সাথে তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে তাঁর উপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগও দায়ের করেছেন । দায়ের হওয়া সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বধূ নির্যাতন ও ষড়যন্ত্র করে খুনের মামলা রুজু হয়েছে।“রায়না থানার পুলিশ জানিয়েছে , ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসলেই দুই নাবালিকার মৃত্যুর কারন স্পষ্ট হয়ে যাবে ।।