ঘর পরিষ্কার করতে করতে হঠাৎ কয়েকটি ছবি খুঁজে পেলাম, অনেক পুরনো আজ থেকে প্রায় কুড়ি – বাইশ বছর আগের। সেই মেয়েবেলার কয়েকটি বন্ধুর সাথের ছবিগুলো। তখন কতই না দূরন্ত ছিলাম, কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সব বন্ধুরা একসঙ্গে আড্ডা দিতাম, তা নিয়ে মাষ্টারমশাইদের কাছে কম বকুনি খাইনি, তখন কাঁচুমাচু মুখ করে সবাই একসাথে শাস্তি পাওয়ার আনন্দটাই আলাদা ছিল। তখন সেই বন্ধুদেরকে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারতাম না আর আজ সেই বন্ধুগুলোর কয়েকজন কোথায় যেন হারিয়ে গেছে, আর কয়েকজনের সাথে বছরে এক আধ বার কথা হয়। বিয়ের পর প্রতিটা মেয়ের জীবনই কেমন যেন বদলে যায়, হাজার সুখে মোড়া থাকলেও জীবনটাতে অল্প হলেও বদলি আসে।আগে যে মেয়েটি বাবার জেদী রাজকন্যা ,যা চাই তা মুখ থেকে বার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জাদুকর বাবা হাতের কাছে হাজির করতো ,আজ সেই রাজকন্যা শশুর ঘরের শান্ত বৌ, অগোছালো মেয়েটি দ্বায়িত্বশীল মা। এখন যেন নিজের ইচ্ছেগুলোকে পাত্তা না দিয়ে স্বামী আর সন্তানের ইচ্ছেটাকে অগ্ৰাধিকার দেওয়াটাই তার জীবনের অনেক বড় ইচ্ছা। মা এর আদুরের সেই ছোট্ট মেয়েটি একটি ইনজেকশন নিলে দু দিন হাতে ব্যাথায় কাঁদত আজ সেই মেয়ে সন্তান প্রসবের ক্ষমতা রেখে এতো এতো সুই এর যন্ত্রণাকে হাসিমুখে মেনে নেয়। ভাইয়ের সেই ঝগড়ুটে বোনটি আজ শশুর বাড়ির প্রতিটা সদস্যের সাথে কেমন যেন মানিয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলে সারাজীবন। হুটহাট ঘর থেকে বেরিয়ে ঘুরতে যাওয়া মেয়েটি আজকাল সন্তানদের চিন্তা করে বাবার বাসায় যাওয়ার মতো আনন্দদায়ক পরিকল্পনা বাতিল করতে দু বার ভাবে না। এই কথাগুলো ভাবতে ভাবতে পুরনো স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে উঠলো । মেয়ের ডাকে ঘোর ভাঙ্গলো তাকিয়ে দেখি আমার রাজকন্যা আমারই মেয়েবেলার মতো বায়না করতে লাগলো। এখন মনটা বড্ড চাইছে বাবা -মাকে চিৎকার করে বলতে, বাবা তোমার সেই ছোট্ট দেশের রাজকন্যা আবার তার মেয়েবেলার রাজত্বে ফিরতে চায়। এখন বিয়ের পর হাজার সুখে থাকলেও তবুও হারিয়ে যাওয়া সেই মেয়েবেলা বড্ড বেশি আনন্দদায়ক ছিল, ছিল না কোন চিন্তা, না ছিল দায়িত্ব। হাসিখুশি , অভিমানে কেটে ছিলো সেই দিনগুলো।।