প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৯ জুলাই : সর্বভারতীয় ডাক্তারি প্রবেশিকা ’নিট’ পরীক্ষায় দুর্নীতি কাণ্ড দেশজুড়ে তোলপাড় ফেলে দেয় । এমন দুর্নীতিতে লাগাম পড়াতে জোরদার তদন্ত চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। তদন্তে নেমে সিবিআই কয়েকজনকে জালেও পুরেছে । কিন্তু এত কিছুর পরেও দমেনি জালিয়াতরা। তাই ডাক্তারির স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় বসতে চলা এক পরীক্ষার্থী ফোনে পেলেন ’কারচুপি করে’ নির্দিষ্ট বিভাগে তাঁকে উত্তীর্ণ করে দেওয়ার প্রস্তাব।তা নিয়ে স্তম্ভিত পূর্ব বর্ধমানের মেমারি পৌরসভায় কর্মরত এক মহিলা ডাক্তার ও তাঁর অভিভাবকরা।ওই মহিলা ডাক্তারের কাছ থেকে সবিস্তার জানার পর চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ্ সার্ভিস’ রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছে অভিযোগ জানিয়েছে।পাশাপাশি সেই অভিযোগ পত্রের প্রতিলিপি স্বরাস্ট্র দফতর ও স্বাস্থ্য দফতর থেকে শুরু করে পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকেও দেওয়া হয়েছে।
মেমারি পৌরসভায় কর্মরত মহিলা চিকিৎসকের বাড়ি মেমারির সুলতানপুর এলাকায়। চিকিৎসকের স্নাতকোত্তর পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তিনি সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি।তবে তাঁর বাবা বলেন,’গত ১৬ জুন রাত ৮টা ৩৭ থেকে ৯টা ৪৯ পর্যন্ত দু’বার অচেনা নম্বর থেকে আমার মেয়ের কাছে ফোন আসে। ফেনে মেয়েকে প্রস্তাব দেওয়া হয়,“আপনি কোন বিভাগ নিয়ে স্নাতকোত্তর করতে চান, সেই মতো আপনার র্যাঙ্ক রাখা হবে।এমনকি বিভিন্ন বিভাগের জন্য ৬০ থেকে ৯০ লাখ পর্যন্ত টাকা দিতে হবে বলেও বলে ।’ শুধু তাই নয় ,ফোনে জালিয়াতরা এও প্রস্তাব দিয়েছে,’মেডিসিন বা শল্য বিভাগে ৯০ লাখ, প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিভাগে ৬০ লাখ টাকা দিতে হবে। এ ছাড়াও ত্বক, ইএনটি,রেডিওলজি বিভাগের জন্যে ৭০ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল জালিয়াতরা।’কোন পদ্ধতিতে নম্বর বাড়িয়ে র্যাঙ্ক দেওয়া হবে,তা মেয়ে জানতে চেয়েছিল।তখন মেয়েকে বলা হয়, ‘২০০ নম্বরের মধ্যে ১০০ নম্বর আপনি লিখবেন। বাকি ১০০ নম্বরের দায়িত্ব আমাদের’।এইসব কোন প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে আমার মেয়ে ফোন কলের সবিস্তার উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ দায়ের করে।ডাক্তারি পরীক্ষায় দুর্নীতি বন্ধ হোক ,তা চাইছেন ওই মহিলা চিকিৎসকের অভিভাবকরা ।
চিকিৎসক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে,এমন ফোন জালিয়াতরা পূর্ব বর্ধমান জেলায় ৪ জনের কাছে গিয়েছিল। মেমারি পৌরসভার মহিলা ডাক্তার ছাড়া বাকি তিনজন অভিযোগ জানাতে নিমরাজি ছিল। ওই সংগঠের রাজ্যের যুগ্ম সম্পাদক সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, জালিয়াতরা এখনও এতটাই বেপরোয়া যে, আগাম নয়, র্যাঙ্ক দেখার পরে টাকা দেওয়ার জন্যে প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা চাই, এই দুর্নীতির একেবারে নির্মূল হোক।পুলিশও যাথাযথ ব্যবস্থা নিক।।