প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৭ জুলাই : বাংলায় দাদাগিরি অব্যাহত । কাউন্সিলরের দাদাগিরি দেখে ইতিমধ্যেই চোখ কপালে উঠেছে কলকাতার মানুষজনের । আর এবার খোদ পুরসভার চেয়ারম্যানের দাদাগিরি দেখে আত্মারাম খাঁচা হয়ে গিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের কালনা শহরের মানুষজনের।তৃণমূল পরিচালিত কালনা পুরসভার পৌরপতি ’আনন্দ দত্তের’ দাদাগিরির ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।আর তা নিয়েই শোরগোল পড়ে গিয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে। এনিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ, বাংলার মানুষ তৃণমূল নেতাদের নেতা নেত্রীদের দাদাগিরির জনপ্রিয় সিরিয়াল দেখায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন।
কালনা পুরসভার পৌরপতি ’আনন্দ দত্তের’ দাদাগিরির ঘটনাস্থল কালনা রাজবাড়ি। জানা গিয়েছে মঙ্গলবার উল্টো রথের দিন একটি রাজবাড়ির ভিতরে একটি অনুষ্ঠান ছিল। আনন্দ দত্ত সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিও অনুযায়ী মঙ্গলবার সেখানেই ঘটে দাদাগিরির ঘটনা। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ,একটি অনুষ্ঠানের জন্য টোটোয় করে ২০ লিটার জলের কয়েকটি জার নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল কালনার রাজ বাড়িতে।তখন রাজবাড়ির গেটের সামনে কর্তব্যরত পুরাতত্ত্ব বিভাগের রক্ষীরা জলের জার বোঝাই টোটোকে আটকে দেয়।তাঁরা জলের জার রাজবাড়ির ভিতরে নিয়ে না যাওয়ার কথা বলেন।
নিরাপত্তা রক্ষীর এই নিষেধের কথা শুনেই চেয়ারম্যান আনন্দ দত্ত বেজায় চটে যান।ক্ষমতা দেখাতে তিনি এর পরেই খারাপ ভাষা ব্যবহার করে ধাক্কা দিয়ে রক্ষীকে সরিয়ে দিয়ে জলের জার ভর্তি টোটো রাজবাড়ির ভিতরে নিয়ে যান।মঙ্গলবারের এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হতেই তোলপাড় পড়ে যায়। নিন্দারও ঝড় ওঠে।
কলকাতার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুনন্দা সরকারের তাঁর নিজের দলেরই এক যুব নেতাকে চড় মারার ছবি মঙ্গলবার বেলায় ভাইরাল হয়।একজন মহিলা কাউন্সিলারের এমন দাদাগিরি কলকাতার মানুষজনকেও স্তম্ভিত করে । একই দিনে কালনা পুরসভার চেয়ারম্যানের দাদাগিরি যথেষ্টই অস্বস্তিতে ফেলো তৃণমূল নেতৃত্বকে । কিন্তু কেন দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকা আনন্দ দত্ত একজন নিরাপত্তা রক্ষীর সঙ্গে এমন দুর্ব্যবহার ও দাদাগিরি করলেন ?এর উত্তর পেতে বুধবার আনন্দ দত্তকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন না।এদিন তিনি তাঁর বাড়ির বাইরেও বের হন না। ঘটনা নিয়ে তিনি কার্যত যেন মুখে কুলুপ এঁটে ফেলেছেন।তবে কালনার তৃণমূল বিধায়ক কালনা পুরসভার পৌরপতির এমন আচরণের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন,’জনপ্রতিনিধিদের অনেক বিষয়ে সচেতন হতে হয়।একজন জনপ্রতিনিধির এই ধরনের আচরণ কখনোই কান্য নয়।দল নিশ্চয় এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
এদিকে কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান আনন্দ দত্তর দাদাগিরির ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর অনেকেই বলছেন,হয়তো কালনা রাজবাড়িতে লাগু থাকা নিয়ম কানুন সন্মন্ধে চেয়ারম্যান অবগত নন। তিনি হয়তো জানেনই না কালনা রাজবাড়ি মূলত মন্দিরের জন্যই বিখ্যাত। মন্দির ও তার কারুকার্য দেখতে প্রতিবছর দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা সেখানে আসেন কালনা রাজবাড়ি চত্বরের রয়েছে সবচেয়ে পুরনো ২৫ টি চূড়া বিশিষ্ট লালজি মন্দির। ১৭৩৯ সালে এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন বর্ধমানের মহারাজ কীর্তিচন্দ্রের মা ব্রজকিশোরী দেবী।এই মন্দিরের সামনে রয়েছে নাট মন্দির। এছাড়াও আছে নহবতখানা। এখানেই রয়েছে একটি রাসমঞ্চ।তার পাশে একটি শিবমন্দির আছে যেখানে প্রতাপেশ্বর শিবলিঙ্গ অধিষ্ঠিত। এহেন রাজবাড়ির মূল আকর্ষণ ১০৮ শিব মন্দির। ১৮০৯ সালে মহারাজা তেজচন্দ্রবাহাদুর এই মন্দিরগুলি তৈরি করেন।
হেরিটেজ স্থান হিসাবে পরিচিতি পাওয়া কালনার রাজবাড়ির ভিতরে কোন যানবাহন ঢোকা বারণ। চারচাকা, তিনচাকা এমনকি মোটরসাইকেল পর্যন্ত এই চত্ত্বরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।তার পরেও কেন ক্ষমতা দেখাতে চেয়ারম্যান আনন্দ দত্ত জলের জার বোঝাই তিন চাকার টোটো রাজবাড়িতে ঢোকালেন সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।তৃণমূল নেতৃত্বও এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু করেছে।।