গুজরাটের দ্বারকার উপকূলের একটি ছোট দ্বীপ হল ‘বেট দ্বারকা’ । বেট দ্বারকা, শঙ্খধর নামেও পরিচিত, বলা হয় যে দ্বারকায় তাঁর শাসনের সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাসস্থান ছিল এটি । এটি ‘বেট’ শব্দের অর্থ ‘উপহার’ । পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী ভগবান কৃষ্ণ এটি তার বন্ধু সুদামার কাছ থেকে এই দ্বীপটি উপহার পেয়েছিলেন । প্রাচীন মহাকাব্য, মহাভারতে, বেট দ্বারকা ‘অন্তর্দ্বীপ’ নামে পরিচিত যেখানে যাদব বংশের লোকদের নৌকায় যাতায়াত করতে হতো। সমুদ্রের তলদেশে পরিচালিত অনুসন্ধান এবং খননগুলি জনবসতির উপস্থিতি প্রকাশ করেছে যার বয়স হরপ্পান সভ্যতার যুগ এবং মৌর্য শাসনের যুগে চিহ্নিত করা যেতে পারে। পরবর্তী বছরগুলিতে, অঞ্চলটি বরোদা রাজ্যের গায়কোয়াড় বংশের অধীনে ছিল । এখানে গুরু বল্লভাচার্য একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন । মূল মন্দির ছাড়াও, কমপ্লেক্সে হনুমান, বিষ্ণু, শিব, লক্ষ্মী নারায়ণ, জাম্ববতী এবং অন্যান্য দেবদেবীদের মূর্তি রয়েছে ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা নগরী সমুদ্রে নিমজ্জিত । গত বছর সমুদ্রের তলদেশে গিয়ে দ্বারকা নগরীর ধ্বংসস্তুপের মাঝে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ধ্যান করলে ফের প্রাচীন নগরী দ্বারকাকে নিয়ে চর্চা শুরু হয় । সমুদ্রের গভীরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শ্রীকৃষ্ণ আরাধনার কারন নিয়ে তখন জোর চর্চা শুরু হয়েছিল । বিভিন্ন জন এর বিভিন্ন কারন ব্যাখ্যা করেন । অনেকে দাবি করেন যে ‘বেট দ্বারকা’কে ইসলামিকরণের হাত থেকে বাঁচানোর উদ্দ্যেশ্যেই নরেন্দ্র মোদী এই বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন । তবে বেট দ্বারকার ২টি দ্বীপ কিভাবে কার্যত মুসলিমদের দখলে চলে গেল তার ইতিহাসের পাতায় নজর রাখলে এই দাবির সত্যতা প্রমানিত হয় ।
সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড বেট দ্বারকার ওই ২টি দ্বীপ নিজেদের সম্পত্তি বলে দাবি করেছিল । কিন্তু বেট দ্বারকা দখলের তাদের স্বপ্ন ভেঙে দেয় গুজরাট হাইকোর্ট। বর্তমানে গুজরাটে এটি সর্বাধিক আলোচিত বিষয় । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সম্পর্কে বহু তথ্য সামনে এসেছে যা আমরা আগে অজানা ছিল। কিভাবে বেট দ্বারকার জনবিন্যাসের পরিবর্তন হল, কিভাবে হিন্দুদের এই প্রাচীন নগরীর ভূমি মুসলিমদের দখলে চলে গেল তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে । তারা এটিকে ‘ল্যান্ড জিহাদ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
কেউ যদি বেট দ্বারকা দ্বীপ অধ্যয়ন করেন,তাহলে ইসলামিকরণের পুরো প্রক্রিয়াটি বুঝতে পারবেন ।
কয়েক বছর আগে পর্যন্ত বেট দ্বারকার প্রায় পুরো জনসংখ্যাই ছিল হিন্দু। এটি ওখা পৌরসভার অধীনে একটি এলাকা যেখানে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় হল জলের মাধ্যমে। তাই বেট দ্বারকার বাইরে যেতে মানুষ নৌকা ব্যবহার করে। এখানে দ্বারকাধীশের প্রাচীন মন্দির অবস্থিত। কথিত আছে, আজ থেকে ৫ হাজার বছর আগে রুক্মিণী এখানে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সমুদ্র বেষ্টিত এই দ্বীপটি ছিল খুবই শান্তিপূর্ণ। মানুষের প্রধান পেশা ছিল মাছ ধরা। ধীরে ধীরে বাইরে থেকে মুসলমানরা মাছ ধরার জন্য এখানে আসতে শুরু করে । ‘সেকুলার’ হিন্দু জনগোষ্ঠী তাদের সেখানে মাছ ধরতে দেয় । কিন্তু ধীরে ধীরে পুরো মাছ ধরার ব্যবসা মুসলমানদের দখলে চলে যায়। বহিরাগত অর্থায়নের কারণে তারা বাজারে সস্তায় মাছ বিক্রি করে যার ফলে হিন্দু জেলেরা বেকার হয়ে পড়ে ।
এখন হিন্দু জনগোষ্ঠী কর্মসংস্থানের জন্য দ্বীপের বাইরে যেতে শুরু করেছে । তারই মাঝে এখানে আর একটি তোলপাড় করার মত ঘটনা ঘটে যায় । বেট দ্বারকা থেকে ওখা যেতে নৌকা ভাড়া ছিল ৮ টাকা। এখন যেহেতু সব নৌকা মুসলমানদের দখলে, তাই তারা নতুন ভাড়ার নিয়ম তৈরি করেছে। অভিযোগ,একজন হিন্দুকে নৌকায় করে ওখা যাওয়ার জন্য ১০০ টাকা ভাড়া গুনতে হবে বলে ফরামান জারি হয় । যেখানে একজন মুসলমানের ভাড়া ধার্য করা হয় মাত্র ৮ টাকা।এখন, একজন দিনমজুর হিন্দু যদি পরিবহনের জন্য মাত্র ২০০ টাকা কামায় তাহলে নৌকা ভাড়া মিটিয়ে তার সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়ে । তাই সেখান থেকে হিন্দুরা কর্মসংস্থানের জন্য অন্যত্র পাড়ি জমাতে শুরু করে এখন সেখানে মাত্র ১৫ শতাংশ হিন্দু বাস করে। শুধু মুসলিম মেছুরেই নয়, অনান্য জায়গার মতো রাজমিস্ত্রি, ইলেকট্রনিক মেকানিক্স, ড্রাইভার, নাপিত প্রভৃতি পেশার প্রায় ৯০ শতাংশ হিন্দুদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় ।
বেট দ্বারকায় একটি ৫,০০০ বছরের পুরানো মন্দির রয়েছে যেখানে গিয়ে হিন্দুরা পূজার্চনা করতেন । সেই সমস্ত পূণ্যার্থীদের নিয়েও একটা ষড়যন্ত্র করে জিহাদিরা ৷ যেহেতু তারা পরিবহনের মাধ্যম সম্পূর্ণ মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে, তাই তারা আগত ভক্তদের কাছে মাত্র ২০-৩০ মিনিটের জলযাত্রার জন্য ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা দাবি করতে শুরু করে। এত ভাড়া সাধারণ মানুষের পক্ষে দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় লোকজন সেখানে যাওয়া বন্ধ করে দেয় । ফলে
বেট দ্বারকার দুটি দ্বিপের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যায় মুসলমানরা । তারা বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি তৈরি করতে শুরু করে এবং কিছু দিনের মধ্যেই প্রাচীন মন্দিরটি চারদিক থেকে সমাধি দ্বারা বেষ্টিত হয়ে যায়।
এরপর টনক নড়ে ‘সেকুলার’ হিন্দুদের,যারা এক সময় মুসলিম মৎস্যজীবিদের সেখানে মাছ ধরার অনুমতি দিয়েছিল । তারা তখন সরকারের কাছে বেট দ্বারকা পুনরুদ্ধারের জন্য আর্জি জানাতে থাকে । পাশাপাশি কিছু হিন্দু সমাজকর্মী এটিকে উপলব্ধি করেছিলেন এবং সরকারকে সতর্ক করেছিলেন।
এরপর সক্রিয় গুজরাটের বিজেপি সরকার । সরকার ওখা থেকে বেট দ্বারকা পর্যন্ত সিগনেচার ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করে। বাকি বিষয়গুলির তদন্ত শুরু হলে তদন্তকারী সংস্থা কার্যত হতবাক হয়ে যায় ।
ইতিমধ্যে গুজরাটে, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড শ্রী কৃষ্ণের শহর দ্বারকায় অবস্থিত বেট দ্বারকার দুটি দ্বীপের উপর দাবি তোলে । ওয়াকফ বোর্ড তার আবেদনে দাবি করেছে যে বেট দ্বারকা দ্বীপের দুটি দ্বীপই ওয়াকফ বোর্ডের সম্পত্তি । গুজরাট হাইকোর্ট এতে বিস্ময় প্রকাশ করে এবং জিজ্ঞাসা করে যে আপনারা কীভাবে কৃষ্ণ নগরীকে দাবি করতে পারেন? এর পরে গুজরাট হাইকোর্ট এই আবেদনটিও খারিজ করে দেয় ।
বেট দ্বারকায় প্রায় আটটি দ্বীপ রয়েছে, যার মধ্যে দুটিতে রয়েছে ভগবান কৃষ্ণের মন্দির । প্রাচীন কাহিনী বলে যে, কৃষ্ণভক্ত মীরা এখানে তার মূর্তির মধ্যে লীন হয়ে গিয়েছিলেন । ওখা থেকে উপকূলের অল্প দূরে অবস্থিত একটি ছোট দ্বীপ রয়েছে যেখানে প্রায় ৬,০০০ পরিবারের বসবাস । এর ভিত্তিতে, ওয়াকফ বোর্ড এই দুটি দ্বীপের উপর তাদের দাবি তুলেছে । নিরাপত্তা সংস্থার মতে, কিছু বহিরাগত লোক দ্বীপের জমি দখল করে অবৈধ নির্মাণ করছে , যা কৌশলগতভাবে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদিও এখন সব অবৈধ দখল ও সমাধি উচ্ছেদ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বদান্যতায় নরেন্দ্র সী-লিংকটি উদ্বোধন করা হয়েছে, মুসলিমদের নৌকা/ছোট জাহাজে করে যাতায়াত করার ব্যবসাও ভেস্তে যাচ্ছে । আস্তে আস্তে ফিরে আসছে হিন্দুদের প্রাচীন ঐতিহ্য ।।