প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৫ জুলাই : জটিলতার অবসান।ইতিহাস নিয়ে গবেষণার জন্যে সোমবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন মাওবাদী খ্যাত বন্দি অর্ণব দাম।বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে এদিন দুপুর ২ টো নাগাদ অর্ণব দামকে নিয়ে আসা হয় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাদম্বিনী গাঙ্গুলি ভবনে। সেখানেই ইতিহাস নিয়ে পিএইচডির জন্য তাঁর কাউন্সিলিং হয়।কাউন্সিলিং শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান সৈয়দ তানভীর নাসরিন অর্ণব দামের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা জানিয়ে দেন। আর অর্ণব দাম বলেন,আশা করছি পিএইচডি করার জন্য আমার ভর্তি নিয়ে সমস্ত জটিলতার অবসান হয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম। গত ২৯ ফেব্রুয়ারী তাঁর সাজা ঘোষণা হয়। তার পর থেকে প্রথমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেল,পরে গত ১৭ মার্চ থেকে অর্ণবের ঠিকানা হয় হুগলীর চুঁচুড়ার সংশোধনাগার। সেখানে লাইব্রেরী আছে। সেই লাইব্রেবী থেকে বই নিয়ে অর্ণব পড়াশোনা করতেন।অর্ণব আগেই ইন্দিরা গান্ধী ওপেন ইউনিভার্সিটি (ইগনু) থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর হয়েছেন। তাঁকে পিএইচডি করার সুযোগ দেওয়ার তিনি আর্জি জানান।বিচারক তাঁর আদেশে সেই আবেদনের বিষয়টি নথিভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা বিবেচনা করতে বলেন।তবুও সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ অর্ণবের আবেদনকে পাত্তা দিচ্ছিল না বলে অভিযোগ ওঠে। অর্ণবও নিজের দাবি আদায়ের লক্ষে অনড় থাকেন। দাবি আদায়ের জন্যে অর্ণব অনশন প্রতিবাদ কর্মসূচি পর্যন্ত শুরুর কথাও ঘোষণা করে বসেন ।
এমন পরিস্থিতিতে বন্দী অর্ণবের পাশে দাঁড়ায় এপিডিআর সংগঠন। তারা অর্ণবের দাবির পক্ষে সমর্থন জানিয়ে হুগলি জেল কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানায়। দাবি না মানলে ভেতরে-বাইরে একযোগে আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেয় এপিডিআর।শেষে জেল প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। অর্ণবের পিএইডির ইন্টারভিউর ব্যবস্থা হয় । গত ২৬ জুন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ণবের ইন্টারভিউ দেওয়ার ব্যবস্থা হয় ।
ইতিহাস বিষয়ে গবেষণার ইন্টারভিউয়ের মেধা তালিকা ৫ জুলাই প্রকাশিত হয়। তখনই জানা যায় ইন্টারভিউয়ে ২৪৯ জনকে পিছনে ফেলে অর্ণব ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭৬.৮৬৭০ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান লাভ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।এরপর কাউন্সিলিংয়ের দিন নির্ধারিত হয় ৯ জুলাই। কিন্তু ৮ জুলাই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়,’অনিবার্য কারণে ’কাউন্সিলিং প্রক্রিয়া’ স্থগিত করা হল’।
এ নিয়ে যথেষ্ট হইচই পড়তেই অর্ণবের ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আসরে নামেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তভর্তি কালীন উপাচার্য ডঃ গৌতম চন্দ্রের টেলিফোনে কথা বলেন। তার পরেই সমস্ত জট কাটে। পিএইচডি’র জন্যে সোমবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ণবের কাউন্সিলিং হবে,এমনটা একপ্রকার চুড়ান্ত হয়ে যায়।
সেই মত রবিবার দুপুরে অর্ণব দামকে হুগলীর চুঁচুড়ার সংশোধনাগার থেকে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে নিয়ে আসা হয় ।সেখান থেকে সাদা পোষাকের পুলিশের পাহারায় অর্ণব কে এদিন ঠিক দুপুরে ২ টো নাগাদ নিয়ে আসা হয় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাদম্বিনী গাঙ্গুলি ভবনে।প্রায় ঘন্টা দুয়েক ধরে অর্ণব দামের কাউন্সিলিং হয়।তারপর দুপুর ৩ টে ৫৫ মিনিট নাগাদ তাঁকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে।
প্রিজন ভ্যানে ওঠার আগে ইতিহাসের গবেষক ছাত্র অর্ণব দাম বলেন,’কাউন্সিলিং আজ হলো, আমার পিএইচডি ভর্তি নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল আজকে আশা করি তার অবসান হলো। উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারা দপ্তরের আধিকারিক ও রাজ্য সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এই জায়গায় আসতে পারতাম না, তাই তাদেরকও ধন্যবাদ ।’ আর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান সৈয়দ তানভীর নাসরিন বলেন,অর্ণব দামের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেল।১৯ জুলাই তাঁকে ফিজ জমা করতে হবে।তবে তারজন্য তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে না আসলেও চলবে।অনলাইনে ফিজ জমা করা যাবে বলে বিভাগীয় প্রধান জানান ।।