এইদিন ওয়েবডেস্ক,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),১০ জুলাই : ব্রিটিশ আমলে জমিজমা বিক্রি করে বাংলাদেশে পালিয়েছিল ঠাকুমা । পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর নাতিরা চলে আসে ভারতে । তারা বিক্রি করার সম্পত্তি দাবি করে বসে । তা নিয়ে কয়েক বছর ধরে অশান্তি চলছিল । মঙ্গলবার রাতে উভয়পক্ষকে নিয়ে সালিশীসভা হয় ৷ কিন্তু আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি । সেই আক্রোশে জমির মালিককে ধারাল তলোয়ার দিয়ে জমির মালিকপক্ষের একজনকে কোপানোর অভিযোগ উঠল । চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার বুঁইচি গ্রামে। রাতেই রক্তাক্ত অবস্থায় শেখ মহম্মদ মিল্টন (৩৮) নামে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । এই ঘটনায় আজ বুধবার মঙ্গলকোট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন জখম ব্যক্তির দাদা শেখ মহম্মদ জাহাঙ্গির । তবে ঘটনার পর থেকেই চম্পট দিয়েছে অভিযুক্ত লাল্টু শেখ,তার ভাগনা আলামিন খাঁ,সালামিন খাঁ এবং জামাইবাবু সিরাজ খাঁ । পুলিশ ঘটনাস্থলের কাছে হামলায় ব্যবহৃত তরবারিটি উদ্ধার করেছে ।
জানা গেছে,শেখ লাল্টুর ঠাকুমা জারিয়া বিবি এক সময় মঙ্গলকোট থানার বুঁইচি গ্রামে বসবাস করতেন । বেশ কিছু জমিজমাও ছিল তার নামে । ব্রিটিশ আমলে, ১৯৪২ সালে সমস্ত জমিজমা বিক্রি করে সপরিবারে বাংলাদেশে চলে যান জারিয়া বিবি । জারিয়া বিবির কাছে বিঘা পাঁচেক সম্পত্তি কিনেছিলেন আক্রান্ত শেখ মহম্মদ মিল্টনের পূর্ব পুরুষ শেখ আব্দুল মহিত,আবুল হোসেনরা । তারপর থেকে ওই সম্পত্তি বংশপরম্পরায় ভোগদখল করে আসছেন মিল্টনরা ।
আক্রান্তের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের শাসনকালে, ২০০৭- ২০০৮ সাল শেখ লাল্টু, তার এক ভাই এবং কয়েকজন আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে বুঁইচি গ্রামে চলে আসে । কিন্তু সবকিছু বহু আগে বিক্রি করে দেওয়ায় তাদের মাথা গোঁজার মত কোনো জায়গা ছিল না । তৎকালীন সময়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা উদ্বাস্তু হিসাবে বুঁইচি গ্রামের নিশ্চিন্দাদিঘির পাড়ে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেয় । ভোটার কার্ড,রেশন কার্ড প্রভৃতি পরিচয়পত্রও তাদের করে দেওয়া হয় । কিন্তু কয়েক বছর বসবাস করার পর বিক্রি করা সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার নাম করে শেখ লাল্টুরা ঝামেলা শুরু করে বলে অভিযোগ ।
অভিযোগকারী শেখ মহম্মদ জাহাঙ্গীরের কথায়, লাল্টু শেখরা বুঁইচি গ্রামে ফিরে আসার পর তাদের ঠাকুমা যে সম্পত্তি প্রায় ৬৬ বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষদের বিক্রি করে গেছেন ২০১৬ সাল থেকে সেই সম্পত্তি নিজেদের বলে দাবি করতে থাকে । ঝামেলা করেছে বহুবার । এমনকি আমাদের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত করেছে ।’ তিনি বলেন,’ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে গ্রামে সালিশিসভা বসে । মামলা তুলে নেওয়ার শর্তে আমরা ওদের ১২ কাঠা জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে সম্মত হই । কিন্তু প্রথমদিকে রাজি হলেও পরে লাল্টু শেখরা ব্যাগরা দিতে শুরু করে ।’
জানা গেছে,মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রামে দুইপক্ষকে নিয়ে ফের একদফা সালিশীসভা বসানো হয়েছিল । তবে কোনো ফয়সালা হয়নি । যথারীতি দু’পক্ষের লোকজন নিজের নিজের বাড়ি ফিরে যাচ্ছিল । শেখ মহম্মদ মিল্টনের উপর শেখ লাল্টুসহ বাকি অভিযুক্তরা চড়াও হয় এবং একটি তলোয়ার দিয়ে তাকে এলোপাথাড়ি কোপানো হয় বলে অভিযোগ । হামলার পর ঘটনাস্থলে তলোয়ার ফেলে পালিয়ে যায় শেখ লাল্টুরা । পরে মিল্টনের লোকজন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে ।।