এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,০৬ জুলাই : জাতীয় মহিলা কমিশনের (এনসিডব্লিউ) চেয়ারপার্সন রেখা শর্মার বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্যের জেরে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে । রেখা শর্মার বিরুদ্ধে সাংসদ মহুয়া মৈত্রের করা অবমাননাকর মন্তব্যের নিন্দা করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন (এনসিডব্লিউ)। সেই সাথে এই বক্তব্যের স্বতঃপ্রণোদনা গ্রহণ এবং সাংসদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। এ নিয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে এনসিডব্লিউ । বিজেপিও তৃণমূল সাংসদের ইস্তফা চেয়েছে।
আসলে, হাথরাসে পদদলিত হওয়ার পর রেখা শর্মা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সেখানে গিয়েছিলেন। ঘটনাস্থলে বৃষ্টির সময় এক ব্যক্তি ছাতা হাতে তার পেছনে হেঁটে যাচ্ছিল। সাংবাদিক নিধি রাজদান চেয়ারম্যান নিজে ছাতা কেন ধরেননি তা জানতে চেয়ে এক্স-এ তার প্রশ্ন তোলেন । রাজদানের পোস্টের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মৈত্র মন্তব্য করেছেন,সে তার বসের পায়জামা ধরতে খুব ব্যস্ত।
মহুয়া মৈত্রের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এনসিডব্লিউ তার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছে,’এই অশালীন এবং অবমাননাকর মন্তব্য একজন নারীর মর্যাদার অধিকারের লঙ্ঘন। কমিশন খুঁজে পেয়েছে যে এই মন্তব্যটি ভারতীয় বিচারিক কোড ২০২৩-এর ধারা ৭৯ এর অধীনে পড়ে। এনসিডব্লিউ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছে ।’ ন্যাশনাল কমিশন ফর উইমেন তার পোস্টে আরও লিখেছে,’তার (মহুয়া মৈত্র) বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করা উচিত এবং ৩ দিনের মধ্যে কমিশনকে একটি বিস্তারিত পদক্ষেপ নেওয়ার রিপোর্ট দেওয়া উচিত ।’ এএনআই- এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এই বিষয়ে দিল্লির পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় অরোরার কাছেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এনসিডব্লিউ-এর অভিযোগের জবাবে মহুয়া মৈত্র অনুশোচনা দেখানোর পরিবর্তে দিল্লি পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করেছেন । তিনি টুইট করেছেন,’আসুন দিল্লি পুলিশ এই স্বতঃপ্রণোদিত আদেশগুলিতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন। আগামী ৩ দিনের মধ্যে যদি আপনার আমাকে প্রয়োজন হয়, আমি নদীয়ায় আছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমায় গ্রেফতার করুন । আমি একাই আমার ছাতা ধরে রাখতে পারি ।’
বিজেপি নেতা শেহজাদ পুনাওয়ালা বলেছেন,মহুয়া মৈত্রর নোংরা টুইট তো আপনারা দেখেছেন । নিধি রাজধানের একটি টুইটে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘রেখা শর্মা নিজের ছাতা কি ধরতে পারেন না ?’ এর উপর মহুয়া মিত্র টুইট করেছেন, ‘কারণ তিনি নিজের মালিকের পাজামা ধরতে ব্যস্ত ।’ ইনি একজন দেশের সাংসদ এবং একজন মহিলা সম্পর্কে আমার মন্তব্য করছেন । ভাবুন, দেশের একজনের সাংসদ জাতীয় মহিলা কমিশনের মহিলা চেয়ারম্যানের সম্পর্কে আমার মন্তব্য করছেন । এই মন্তব্য কি কোনো রকম ভাবে বৈধ ভাবা যেতে পারে ? মহুয়া মৈত্রের এই মন্তব্যের পর রাহুল গান্ধী, খার্গেজি, সোনিয়া গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী, প্রিয়াঙ্কা বাদ্রা,মমতা ব্যানার্জি যারা মহিলাদের নিয়ে গলা ফাটান তা কোন কথাই বলেনি,সেকুলার নীরবতা পালন করছেন । এমনিতে সন্দেশখালীর সময় সেকুলার নীরবতা ছিল । চোপড়ার তালিবানির ঘটনার সময় সেকুলার নীরবতা ছিল । যে প্রকারে এরা স্বাতী মালিয়ালের সময় সেকুলার নীরবতা পালন করেছিল, আজও এই ঘৃণ্য, নিকৃষ্ট মন্তব্যের পর কোন পদক্ষেপ নেয়া তো দূরের কথা প্রতিবাদে একটা শব্দ খরচা করেনি ।’ তিনি আরো বলেন, মহুয়া মিত্রের তর্ক অনুযায়ী মালিকের পাজামা ধরার ব্যস্ততার কারণে এনসিডব্লিউ চেয়ারপার্সন ছাতা ধরতে পারেনি, উল্টোদিকে দেখলে এরা নিজেরাই নিজেদের ছাতা ধরতে পারে না ।’ শেহজাদ মহুয়া, রাহুল গান্ধী,সোনিয়া গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা বাদ্রা,মমতা ব্যানার্জির পিছনে ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে থাকার কিছু ছবি পোস্ট করে বলেছেন, তাহলে কি এরাও নিজেদের মালিকের পাজামা ধরতে ব্যস্ত আছেন ? আসলে এদের এই প্রকার মন্তব্য প্রমাণ করে যে ইন্ডি জোটের মানসিকতা কেমন ।’
উল্লেখ্য, এর আগেও একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। বিগত লোকসভায় অর্থের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার অভিযোগে তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়। তার আগে দেবী কালীকে নিয়ে মহুয়ার মন্তব্যে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল দেশ জুড়ে । এবারের কৃষ্ণনগর থেকে ফের ভোটে জয়ী হয়ে লোকসভায় গেছেন মহুয়া। লোকসভায় পা রেখেই ফের নতুন বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি ।।